বিশেষ সংবাদদাতা
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশকে একটি সমতাভিত্তিক ও কল্যাণমুখী রাষ্ট্র করতে চায় উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমরা যখন দায়িত্ব নিয়েছিলাম তখন অর্থনীতি খাদের কিনারায় ছিল, এখন তা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক খাতের বড় সংস্কারগুলো কিছুটা করে যেতে পারব আমরা। বাকিটা নির্বাচিত সরকার এসে করবে। সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক অবস্থা এখন হতাশাজনক নয়। এমন কিছু আমরা করে যেতে চাই, যাতে পরের সরকার এসে বলতে না পারে আগের সরকারের সব ভুল ছিল।
তিনি বলেন, আমরা গত বছরের আগস্টে যখন দায়িত্ব নিয়েছিলেন তখন থেকে এক বছরে দেশে অর্থনীতি মোটামুটি স্থিতিশীল হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে অর্থ বিভাগের এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টা একথা বলেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী, অর্থসচিব মো: খায়েরুজ্জামান মজুমদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো: আবদুর রহমান খান, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অর্থনীতিকে আমরা এসে যে অবস্থায় পেয়েছি, এখন তা মোটামুটি সন্তোষজনক পর্যায়ে এসেছে। আমরা এসে দেখেছি অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, সুশাসনের অভাব, মুদ্রা পাচার। গত বছরের জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি ছিল ১৪ শতাংশ। এ বছরের জুলাইয়ে তা কমে ৮ শতাংশের ঘরে এসেছে। শিগগিরই তা ৬ শতাংশে নেমে আসবে।
বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে সরকার সব প্রক্রিয়া শেষ করছে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এ জন্য কারা অর্থ পাচার করেছে, সেটি চিহ্নিত করা হচ্ছে। আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। তবে দেশের মধ্যে দুর্নীতির টাকা ফেরত আনা যত সহজ, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা তত সহজ নয়। তিনি বলেন, একজন টাকা পাচারকারী সিঙ্গাপুরে সবচেয়ে বড় লইয়ার নিয়োগ দিয়েছেন। তারা কথা বললেই অর্থ দিতে হয়। আমরাও বাংলাদেশ ব্যাংককে বলেছি, ভালো লইয়ার দিতে।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার গত অর্থবছরে ছিল, যেখানে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশের মতো, চলতি অর্থবছর শেষে তা ৫ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত হতে পারে বলে ড. সালেহউদ্দিন আরো বলেন, ‘আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে অর্থনীতির কিছু বেসিক সংস্কার করব। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন, তাই জানুয়ারি পর্যন্ত আমরা স্বাভাবিক সংস্কার চালাতে পারব। রাজনীতিবিদদের আমরা বলেছি, এসব কাজে যদি তোমরা বাধা দাও, তাহলে এসব ঝামেলা তোমাদের সরকারের ওপর পড়বে।’
প্রাইভেট সেক্টরের কনফিডেন্স ফেরানো এখনো চ্যালেঞ্জ
অর্থ উপদেষ্টা জানান, বেসরকারি খাতের আস্থা ফেরানো এখনো সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ফেব্রুয়ারিতে নতুন সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর তারা কোন ধরনের পলিসি গ্রহণ করে, তার ওপর প্রাইভেট সেক্টরের কনফিডেন্স ফেরার বিষয়টি নির্ভর করছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, সারা পৃথিবীটাই এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ট্রাম্প ইজ দ্য বিগেস্ট প্লেয়ার অব দ্য আনসারটেনিটি।’
ব্যাংক খাতে এখনো রেগুলেটরি ক্রাইসিস আছে স্বীকার করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অনেক ব্যাংক এখনো আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। এ জন্য একটি ব্যাংককে অনেক টাকা দেয়া হয়েছে, তারপরও ব্যাংকটি গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। সেই টাকা কোথায় গেল, সেটিও আমরা দেখব।
তিনি বলেন, এক বছর পেছনে ফিরে তাকালে আমরা দেখতে পাই যে, এখনকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোটামুটি সন্তোষজনক, স্থিতিশীল। মূল্যস্ফীতি কমেছে, ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরেছে। ব্যালেন্স অব পেমেন্ট, এক্সচেঞ্জ রেটে স্থিতিশীলতা ফিরে আসছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে।
গত এক বছরে আমরা সব করে ফেলেছি, তা নয়। তবে আমরা সঠিক পথেই যাত্রা শুরু করেছি। আরো দ্রুত গেলে ভালো হতো। আমাদের কাজে কোনো ভুলত্রুটিও থাকতে পারে। আপনারা (সংবাদিকরা) আমাদের সম্পর্কে একটু পজিটিভ লিখুন। অনেকে তা লিখছেও।
তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে এভাবে ব্যাংক খাতে লুটপাট করা হয়নি। একটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আমি জানতে চাইলাম, সে বলছে স্যার ৯৫ শতাংশই খেলাপি। কে নিয়েছে টাকা? চেয়ারম্যান সাহেব, আর তার লোকজন। চিন্তা করতে পারেন? পৃথিবীর কোনো দেশে ব্যাংকের টাকা এভাবে নিয়ে যাওয়া হয়নি। সেটা কিন্তু আপনার-আমার টাকা।



