রাজবাড়ী-১ আসনে ভোটের হাওয়া

বিএনপির ৩ নেতার দৌড়ঝাঁপ জামায়াতের একক প্রার্থী

Printed Edition
বিএনপির ৩ নেতার দৌড়ঝাঁপ জামায়াতের একক প্রার্থী
বিএনপির ৩ নেতার দৌড়ঝাঁপ জামায়াতের একক প্রার্থী

এম মনিরুজ্জামান রাজবাড়ী

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজবাড়ী-১ আসনে রাজনৈতিক তৎপরতা ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে বিএনপির তিন নেতা মনোনয়নের আশায় দৌড়ঝাঁপ চালাচ্ছেন। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে একক প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠে তৎপর রয়েছে। ফলে আসনটি ঘিরে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে রাজনীতির মাঠে।

নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও তোরণে সেজেছে রাজবাড়ীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা মাঠে সরব হলেও, জাপা, এনসিপি ও অন্যান্য ছোট দলগুলো এখনো নীরব। চায়ের দোকান থেকে গ্রামীণ হাট পর্যন্ত এখন একটাই আলোচনা রাজবাড়ী-১ আসনে কার ভাগ্য খুলছে।

বিএনপির তিন সম্ভাব্য প্রার্থী : ২০০১ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম। তিনি রাজবাড়ীর উন্নয়ন, শিক্ষা ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। রাজবাড়ী পৌরসভার তিনবারের সাবেক মেয়র এই নেতা দীর্ঘ দিন ধরে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়।

খৈয়ম বলেন, আমি রাজবাড়ী-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন পাবো বলে আশাবাদী। জনগণ আজও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত। আওয়ামী স্বৈরাচারের রাজনীতিতে মানুষ অতিষ্ঠ, তাই তারা পরিবর্তন চায়। তিনি আরো জানান, রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে জনসভা, গণসংযোগ ও সদস্য নবায়ন কর্মসূচি পরিচালনা করছেন। তার মতে, বিএনপির প্রতিটি অঙ্গসংগঠন এখন সুসংগঠিত ও শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।

অপর প্রার্থী, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আসলাম মিয়াও মনোনয়ন দৌড়ে বেশ এগিয়ে রয়েছেন। তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেও পরবর্তীতে দলীয় সিদ্ধান্তে তা প্রত্যাহার করেন। বর্তমানে তিনি নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ করছেন। তিনি বলেন, রাজবাড়ী-১ আসনটি বিএনপির ঐতিহ্যবাহী ঘাঁটি। এবার দলীয় মনোনয়ন পেলে জনগণের ভালোবাসায় আমি জয়ী হবো। রাজবাড়ীর কর্মীদের ওপর যেসব গায়েবি মামলা হয়েছে, সেসবের আইনি সহায়তায় আমি সব সময় পাশে ছিলাম।

এদিকে জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আব্দুস সালাম মিয়া এখনো সীমিত পরিসরে মাঠে সক্রিয়। তার কয়েকটি পোস্টার ইতোমধ্যে শহর ও আশপাশের এলাকায় দেখা গেছে।

জামায়াতের প্রার্থী চূড়ান্ত : এদিকে রাজবাড়ী-১ আসনে জামায়াতে ইসলামী তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে অনেক আগেই। দলের প্রার্থী জনপ্রিয় আইনজীবী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম। তিনি ২০০১ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও এ আসনে প্রার্থী ছিলেন এবং দু’বারই সম্মানজনক ভোট পান। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে জামায়াত বিএনপির ঐতিহ্যবাহী ভোট ব্যাংকে ভাগ বসাতে চায়। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা যখন গ্রুপিং আর সভা-সমাবেশে ব্যস্ত তখন জামায়াত প্রার্থী স্রোতের বিপরীতে সাধারণ ভোটারদের সাথে সেতুবন্ধন তৈরিতে নীরবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। নুরুল ইসলাম ইতোমধ্যেই রাজবাড়ী ও গোয়ালন্দের বিভিন্ন হাটবাজারে গণসংযোগ ও সমাবেশ করেছেন। স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীকের পক্ষে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।

অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম বলেন, মানুষ এখন শান্তি ও ন্যায়ভিত্তিক রাজনীতি চায়। ২৪ সালের আন্দোলনে জনগণের পাশে ছিলাম, এবারো সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে রাজবাড়ী-১ আসনে জয় নিশ্চিত করব। নুরুল ইসলাম দীর্ঘ দিন রাজবাড়ীর সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের সাথে যুক্ত। ২৪ সালের আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকার কারণে তরুণ সমাজের মধ্যেও তার জনপ্রিয়তা বেড়েছে। স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, তিনি যুব সমাজকে মাদক খেকে মুক্ত রাখতে এলাকার ক্রীড়াঙ্গন ও শিক্ষাক্ষেত্রেও নিয়মিত সহযোগিতা করেন।

অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ক্ষতিগ্রস্ত বিএনপি : রাজবাড়ী-১ আসন দীর্ঘ দিন ধরে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দলটির সাংগঠনিক দুর্বলতা ও অভ্যন্তরীণ বিভক্তি এই আসনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত আসনটি অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ওয়ান ইলেভেনে হাতছাড়া হয় দলটির। সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলার বিএনপি নেতারা বর্তমানে দু’টি ভাগে বিভক্ত হয়ে কাজ করছেন। এই বিভক্তি থেকেই সুবিধা নিতে চাইছে জামায়াত। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আসনটিতে এখন ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। জামায়াত তাদের সাংগঠনিক উপস্থিতি ও ভোটব্যাংক শক্তিশালী করছে, অন্যদিকে বিএনপি ঐক্য ফেরাতে ব্যস্ত।

ভোটারদের প্রত্যাশা : ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা এখন উন্নয়ন, শান্তি ও কর্মসংস্থান চায়। দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক সহিংসতা ও দলীয় দ্বন্দ্বে তারা ক্লান্ত। স্থানীয় বাসিন্দা এক স্কুলশিক্ষক বলেন, রাজবাড়ী-১ আসন বিএনপির ঐতিহ্য, কিন্তু দল ঐক্যবদ্ধ না হলে জামায়াত এবার চমক দেখাতে পারে। আসনটিতে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা প্রায় তিন লাখ ২০ হাজার। এর মধ্যে নারী ভোটারের সংখ্যা সামান্য বেশি। তাই নারী ভোটাররাই আসনটিতে নির্ধারণ করবে আগামীর কাণ্ডারী। এমনটিই মনে করছেন সাধারণ মানুষ ও স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।