ভেসে গেছে ৪ শতাধিক চিংড়ি ঘের, ক্ষতি ১৩ কোটি টাকা

আশাশুনিতে বেড়িবাঁধে ভাঙন

পানিবন্দী পরিবারগুলো বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

মুহা: জিললুর রহমান, সাতক্ষীরা

Location :

Satkhira
Printed Edition
আশাশুনি উপজেলার বিছট গ্রামে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ
আশাশুনি উপজেলার বিছট গ্রামে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ |নয়া দিগন্ত

সাতক্ষীরার আশাশুনির বিছট গ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধের ভাঙনে খোলপেটুয়া নদীর পানিতে আনুলিয়া ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামের প্রায় সাড়ে চার হাজার বিঘা জমির আয়তনের ৪৫০ থেকে ৫০০টি চিংড়ি ঘের প্লাবিত হয়ে গেছে। এতে চাষিদের প্রায় ১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। একই সাথে ২০ হেক্টর জমির বোরো ধান ও প্রায় দেড় হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্লাবিত এলাকার প্রায় ৬০০ ঘরবাড়ি।

এ দিকে বিছট গ্রামের বেড়িবাঁধ ভাঙনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আনুলিয়া ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদীর তীরবর্তী নয়াখালী গ্রাম। জোয়ারের পানিতে এই গ্রামের প্রায় সব ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। ধসে পড়েছে গ্রামের মাটির ঘর। গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগিসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসী। ঘরবাড়ি হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা।

ইউনিয়নের বিছট, বল্লভপুর, আনুলিয়া, চেঁচুয়া ও কাকবসিয়া গ্রামের নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় সেখানে শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে। তলিয়ে গেছে মিষ্টি পানির পুকুর। লোনা পানিতে পুকুরের মাছ মরে এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো সড়কের উপর বা আশপাশের উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।

নয়াখালী গ্রামের বাসিন্দা মাওলানা আতাউর রহামন জানান, বিগত সরকারের ১৬ বছর সময়ে আমাদের এই এলাকায় কোনো বেড়িবঁাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। যে কারণে বাঁধ ভেঙে আনুলিয়া ইউনিয়নের ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে গেছে। নয়াখালী গ্রামের সবকিছু লোনা পানিতে তছনছ হয়ে গেছে। গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি সব ভেসে গেছে। গ্রামের মানুষ বেড়িবাঁধের উপর খোলা অকাশের নিচে অসহায় হয়ে পড়েছে। খাবার পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গ্রামবাসীর মধ্যে ডায়েরিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশাসনের আগে থেকে নজরদারি থাকলে এখন এত দুর্ভোগ নেমে আসত না।

অন্য দিকে পানিবন্দী পরিবারগুলো বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। দুর্গতদের সহায়তায় খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড, জামায়াত ও বিএনপির পক্ষ থেকে প্রাথমিককভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণ ও ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন।

আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষ্ণা রানী জানান, প্লাবিত এলাকার প্রায় সাড়ে চার হাজার বিঘা জমির আয়তনের ৪৫০ থেকে ৫০০টি চিংড়ি ঘের ভেসে গেছে। এতে চাষিদের প্রায় ১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একই সাথে ২০ হেক্টর জমির বোরো ধান ও প্রায় দেড় হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন সবজি নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্লাবিত এলাকার প্রায় ৬০০ ঘরবাড়ি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তালিকা তৈরি করছে। তালিকা প্রস্তুত হওয়ার পর ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যাবে।

গত ৩১ মার্চ ঈদুল ফিতরের দিন সকাল পৌনে ৯টার দিকে আশাশুনি উপজেলার বিছট গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে আব্দুর রহিম সরদারের ঘেরের বাসার পাশ থেকে প্রায় ১৫০ ফুট বেড়িবাঁধ হঠাৎ করে খোলপেটুয়া নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এতে নদীর পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়ে আনুলিয়া ইউনিয়নের বিছট, বল্লভপুর, আনুলিয়া, নয়াখালী, চেঁচুয়া ও কাকবসিয়া গ্রাম। এর মধ্যে নয়াখালী গ্রাম সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়ে পড়ে। বাকিগুলোর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

বেড়িবাঁধ ভাঙনের ৪৮ ঘণ্টা পর ২ এপ্রিল সকালে ভাঙন স্থানে আধুনিক জিও টিউব দিয়ে একটি বিকল্প রিংবাঁধ নির্মাণকাজ শুরু হয়। টানা তিন দিন বিরতিহীনভাবে কাজ করার পর ৪ এপ্রিল দুপুরে আধুনিক জিও টিউব দিয়ে বিকল্প রিংবাঁধ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ফলে ওই দিন দুপুরের জোয়ারে খোলপেটুয়া নদীর লোনা পানি আর লোকালয়ে ঢুকতে পারেনি। এতে প্লাবিত এলাকার মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে ।