রোগী ভাগিয়ে নিতে ইন্ডিয়ান ফার্টিলিটি (বন্ধ্যত্ব) সেন্টার অনুমতি ছাড়াই ঢাকায় তিন দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করেছে। ভারতের তিনজন ফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়াও থাইল্যান্ডের চিকিৎসকরাও এতে যোগ দিয়েছেন। আয়োজকরা এটাকে শুধু প্রচারধর্মী সেমিনারের কথা বললেও কার্যত বিদেশী চিকিৎসকরা এখানে বন্ধ্যত্ব বিষয়ক রোগী দেখছেন এবং চিকিৎসা করানোর জন্য রোগীদের চেন্নাইতে যেতে বলছেন। আয়োজকরা রোগীদের ভিসা করিয়ে দেয়ার আশ্বাসও দিচ্ছেন। ঘোষণা অনুযায়ী আজ শনিবার মেলার শেষ দিন।
জানা গেছে, এরা দীর্ঘদিন থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা চলছিল এ বিষয়ে। হোয়াটস অ্যাপে একটি প্রচারণার ভাষা ছিলএরূপ- ‘ঈশ্বরিয়া ফার্টিলিটি সেন্টার, চেন্নাই। ঢাকায় আসছে আন্তর্জাতিক মানের বিশেষজ্ঞ টিম। সন্তান পরিকল্পনা ও বন্ধ্যত্ব সেবায় আন্তর্জাতিক মানের সেবা এখন ঢাকাতেই। আপনিও কি আমাদের সাথে থাকবেন? আমরা আসছি আপনার শহরে, আপনারা আসছেনতো? বিশেষ সুবিধা : চেন্নাইয়ের অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞদের সরাসরি পরামর্শ, আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতি, সীমিত অ্যাপয়েন্টমেন্ট- আগে বুক করলে অগ্রাধিকার পাবেন। অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য একটি হোয়াটঅ্যাপ নাম্বার দেয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন ডাক্তার একটি সন্তান কোলে নিয়ে হাসছেন এমন ফটোকার্ড ব্যবহার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) বলছে, তারা চিকিৎসাসংক্রান্ত এ ধরনের মেলা আয়োজনের অনুমতি দেয়নি। এ ব্যাপারে বিএমডিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা: মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, চেন্নাইয়ের ঈশ্বরিয়ার ফার্টিলিটি সেন্টার বাংলাদেশে চিকিৎসার নামে যে মেলার আয়োজন করেছে এ ব্যাপারে তারা বিএমডিসির অনুমতি নেয়নি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, মেলার আয়োজকদের সিইও রেজাউর রহমানকে বিএমডিসির আইন ভঙ্গ করলে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বিএমডিসির রেজিস্ট্রার ডা: লিয়াকত হোসেন চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন।
জানা গেছে, এরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের এই বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার মেলা আয়োজন করছে। চিকিৎসকদের সূত্রে জানা গেছে, কেবল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে এভাবেই ইন্ডিয়ান ডাক্তাররা বছরের পর বছর বাংলাদেশে চিকিৎসা করে যাচ্ছে। এরা বিএমডিসির অনুমতি নেয়ার তোয়াক্কাও করে না, কারণ বিএমডিসি যথাযথ কারণ দেখাতে না পারলে অনুমতি দেয় না। সেজন্য বিএমডিসিকে পাশ কাটিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে ইন্ডিয়ান ডাক্তাররা চলে আসেন। জানা গেছে, ইন্ডিয়ান ডাক্তাররা বাংলাদেশে অবস্থান করে টেকনোলজি ট্রান্সফারের (প্রযুক্তি হস্তান্তর) নামে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশী চিকিৎসকরা বলছেন, টেকনোলজি ট্রান্সফার করতে বছরের পর বছর লাগে না, এ জন্য এক সপ্তাহই যথেষ্ট। এক সপ্তাহের মধ্যেই টেকনোলজি ট্রান্সফার করা যায় এমন নজির বাংলাদেশের কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল করে দেখিয়েছে। মূলত বাংলাদেশী চিকিৎসকদের একটি গ্রুপের যোগসাজশে ইন্ডিয়ানরা এখানে অবাধে ব্যবসা করে যাচ্ছে।
তবে গত ২৬ জুন ডা: লিয়াকত হোসেন মেলা আয়োজনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রেজাউর রহমানকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন, তথ্য প্রচার করে রোগী দেখা যাবে না। তিনি আরো জানিয়েছেন, কঠোরভাবে কাউন্সিলের (বিএমডিসি) আইন মেনে চলতে হবে। আইন ভঙ্গ করা হলে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
বিদেশী চিকিৎসকদের বেআইনি কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে বিএমডিসির রেজিস্ট্রার মো: লিয়াকত হোসেন বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ও এমডিকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন, উপরিউক্ত বিষয়ে আপনার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, আপনার প্রতিষ্ঠানে চেন্নাইয়ের ঈশ্বরিয়া ফাটিলিটি সেন্টার থেকে একজন বিদেশী চিকিৎসক আগামী ২৬ থেকে ২৮ জুন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা প্রদান করবেন। সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তিতে স্থানীয় আয়োজকদের নাম ও পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি। বিএমডিসির ২০২০’র আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে কোনো বিদেশী চিকিৎসক বা চিকিৎসক দল তাদের চিকিৎসাকার্যক্রম পরিচালনা করতে হলে কাউন্সিল থেকে সাময়িক রেজিস্ট্রেশন গ্রহণ বাধ্যতামূলক। কাউন্সিলের তথ্য মতে, উক্ত চিকিৎসক এ বিষয়ে বিএমডিসি থেকে সাময়িক রেজিস্ট্রেশন গ্রহণ করেননি। বিএমডিসি আইন ২০১০ অনুযায়ী উক্ত কার্যক্রম অবৈধ বলে প্রতীয়মাণ হবে। অতএব, উক্ত চিকিৎসক দ্বারা সব প্রকার চিকিৎসা কর্মকাণ্ড পরিচালনা থেকে বিরত রাখার জন্য তার বুকিং বাতিল করা আবশ্যক বলে কাউন্সিল মনে করে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আপনাকে অবহিত করা হলো। কিন্তু বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র এই মেলা বন্ধ করেনি।
রেজিস্ট্রার লিয়াকত হোসেন এই চিঠির কপি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্য শিক্ষার মহাপরিচালক এবং হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর পরিচালককেও পাঠিয়েছেন। কিন্তু কেউ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।