জসিম উদ্দিন রানা
এক সময়ের ‘প্রিয়’ সংস্করণ ওয়ানডেতে প্রতিপক্ষকে বলে-কয়ে হারাত বাংলাদেশ। ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশ যে খেলার সুযোগ পেয়েছিল, সেটা তখন তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মোস্তাফিজুর রহমানদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণেই। সেই সোনালি অতীত পেছনে ফেলে ওয়ানডেতে এখন ধুঁকছে বাংলাদেশ। আইসিসির বর্তমান ওয়ানডে রথ্যাঙ্কিংয়ে ১০ নম্বরে অবস্থান করছে মেহেদী হাসান মিরাজের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ। দলটির রেটিং পয়েন্ট ৭৭। আফগানিস্তান ৯১ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে সাত নম্বরে। এ দিকে ২০২৭ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে যে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, সেখানে সরাসরি খেলবে রথ্যাঙ্কিংয়ের প্রথম ৮ দল। দুই আয়োজক দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ে সেরা আটে থাকলে তাদের ছাড়া হিসাব করা হবে। টাইমলাইন মূলত ২০২৭ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত। যে কারণে আফগানিস্তান সিরিজটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আরব আমিরাতে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচ হেরে ব্যাকফুটে চলে গেছে মিরাজ বাহিনী। বাকি দুই ম্যাচ জিততেই হবে বাংলাদেশকে। তা না হলে সরাসরি বিশ^কাপে খেলা হবে না লাল সবুজদের।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৫ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ২২১ রানেই থামে বাংলাদেশের ইনিংস। বর্তমানে ওয়ানডেতে এমন রান নিয়ে জেতার আশা করা নিশ্চিতভাবেই বিলাসিতার শামিল। বাংলাদেশ দলের ব্যাটার তৌহিদ হৃদয়ও মনে করেন বোলারদের লড়াইয়ের জন্য যথেষ্ট রান তুলতে পারেননি তিনি। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ ৪০-৫০ রানের মতো কম হয়েছে বলে দাবি হৃদয়ের। রানটা আরেকটু বেশি হলে ম্যাচের ফলাফল ভিন্ন হতে পারত বলে ধারণা তার। তবে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২০০ পার করতে বড় ভূমিকা রেখেছেন হৃদয় ও অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ।
হৃদয় বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় আমরা ৪০-৫০ রানের মতো শর্ট ছিলাম। যদি এই জায়গায় আমরা...করতে পারতাম তাহলে খেলার সিনারিওটা আলাদা হতো। থএত সহজ উইকেট ছিল না। উইকেটে বোলারদের জন্য বাড়তি সুবিধা ছিল। বোলাররা যথেষ্ট ভালো বোলিং করেছে। ব্যাটিং দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা ৫০ রান কম করেছি।’
আপাতত সিরিজের পরবর্তী ম্যাচেই চোখ বাংলাদেশের। প্রথম ম্যাচে হারলেও সিরিজ জয়ের আশা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। তবে সে ক্ষেত্রে শেষ দুই ওয়ানডেতে ভালো ক্রিকেট উপহার দিতে হবে বাংলাদেশকে। শেষ দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাস আছে বাংলাদেশ দলের এমনটাই জানিয়েছেন হৃদয়। ‘আপনি ভবিষ্যতের কথা কীভাবে বলবেন। ভবিষ্যৎ ভবিষ্যতের জায়গায় থাকুক। আমরা আমাদের সামনে যে ম্যাচটা আছে ওই ম্যাচে আমি ফোকাস করতে চাচ্ছি। যদি ওই ম্যাচটাতে আমরা ভালো কিছু করতে পারি... ইউ নেভার নো সামনে ব্যাক টু ব্যাক দুইটা ম্যাচ আমরা জিততে পারি।’
যদিও বিশ্বকাপের এখনো অনেক বাকি এবং প্রত্যেকটি দলেরই সুযোগ আছে রথ্যাংকিং বাড়িয়ে নেবার। তার পরও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পারফরমেন্সের কারণে ভক্ত-সমর্থকদের আলোচনায় বাংলাদেশের বিশ্বকাপে সরাসরি খেলা নিয়ে কানাঘুষা চলছে! বিশ্বকাপের আগে ২০২৭ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত আইসিসির সূচি অনুযায়ী ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ের সাথে বাংলাদেশের ওয়ানডে সিরিজ খেলার কথা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যদি সিরিজগুলোতে কিছু ম্যাচ জিতে রথ্যাংকিংয়ে আটের মধ্যে থাকতে পারে তা হলে সরাসরি বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলা নিয়ে আর কোনো চিন্তা নেই। এমনকি ৯ম স্থানে থাকলেও আয়োজক সাউথ আফ্রিকা সেরা আটে থাকলে সে ক্ষেত্রেও সরাসরি মূলপর্বে খেলার সুযোগ থাকবে। তবে যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা অন্য কোনো দল বাংলাদেশকে টপকে যায় আর বাংলাদেশ ১০ম স্থানেই থাকে। তাহলে বাছাইপর্ব খেলেই বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে হবে!
গত কয়েক বিশ্বকাপে ফরম্যাট পরিবর্তিত হয়েছে কয়েকবার। ১২ দলের টুর্নামেন্ট থেকে ১৪ দল এমনকি ১০ দলের অংশগ্রহণেও অনুষ্ঠিত হয়েছে ওডিআই বিশ্বকাপ। ২০১৯ এবং ২০২৩ সালের বিশ্বকাপ হয়েছে ১০ দলের। ওই দুই বিশ্বকাপেও বাংলাদেশ সরাসরি কোয়ালিফাই করেছে। তবে এবারের বাংলাদেশ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সরাসরি বিশ্বকাপের টিকিট কাটতে পারে কি না তার অনেকটাই নির্ভর করছে আফগানদের সাথে বাকি দুই ওয়ানডের উপর। যা হবে ১১ ও ১৪ অক্টোবর, আরব আমিরাতে।