‘দিল্লি নয় পিণ্ডি নয়, নয় অন্য কোনো দেশ, সবার আগে বাংলাদেশ’ মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী ডিম্বেরের মধ্যেই যাতে জাতীয় নির্বাচন হয় সেই প্রস্তুতি নিতে দলের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল বুধবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে দুপুর থেকে ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে অগণিত নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দেন। এতে নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। বেলা সাড়ে ৩টায় পবিত্র কুরআন তেলোয়াতের মধ্য দিয়ে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। বিকেল ৪টায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তারেক রহমান। এ সময় তুমুল করতালি দিয়ে নেতাকর্মীরা তাকে অভিনন্দন জানালে তিনিও হাত তুলে তাদের শুভেচ্ছা জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, দেশের মানুষ ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশে সরাসরি ভোটে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক, জনগণের কাছে দায়বদ্ধ একটি সরকার দ্রুত দেখতে চায়। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবেই। আবার আমরা বলতে চাই, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
নতুন প্রজন্মসহ দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন যাতে অনুষ্ঠিত হয় তার প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন। কারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবে, কারা আপনাদের প্রতিনিধি হবে, জাতীয় নির্বাচনে আপনারা ভোট দিয়ে আপনাদের সেই প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করবেন।’
নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা চলছে : সমাবেশে তারেক রহমান বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে মনে হয় এরই ভেতরে টালবাহানা শুরু হয়েছে বা চলছে। কথিত অল্প সংস্কার আর বেশি সংস্কারের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে আগামী জাতীয় নির্বাচনের ভবিষ্যৎ। এরই ভেতরে জনগণ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, সংস্কার নিয়ে সময়ক্ষেপণের আড়ালে অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে এবং বাইরে কারো কারো মনে হয় ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে।’
আদালতকে অবমাননা করা হচ্ছে : তারেক বলেন, পলাতক স্বৈরাচারের সময়ে আমরা দেখেছি তারা কিভাবে আদালতকে অবজ্ঞা করেছে। আদালতের রায়কে অবজ্ঞা করেছে। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয়, পলাতক স্বৈরাচারের পরে যেই সরকারের কাছে দেশের মানুষ আশা করেছিল যে আইনের প্রতি সম্মান থাকবে, আমরা দেখেছি আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান না দেখিয়ে তারা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করেছে। স্বৈরাচারের সেই একই যে ঘটনা সেটির পুনরাবৃত্তি আমরা দেখতে পাচ্ছি।
এই সময়ে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের কাছে আমার আজকে জিজ্ঞাসা যারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখায় না, যারা আদালতকে আদালতের নির্দেশকে অবজ্ঞা করে তাদের কাছ থেকে আমরা কতটুকু সংস্কার আশা করতে পারি?
রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিপক্ষ বানাবেন না : তিনি বলেন, গণতন্ত্রকামী জনগণ এবং গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোকে দয়া করে প্রতিপক্ষ বানাবেন না। যদি আপনাদের কেউ রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকতে চান তাহলে সরকার থেকে পদত্যাগ করে জনগণের কাতারে আসুন। নির্বাচন করুন। যদি ভবিষ্যতে নির্বাচনে জনগণের রায় পান তাহলে আবার সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করুন।
নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতাই কিন্তু অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান পুঁজি উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাই তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান ও পরামর্শ থাকবে, জনগণের বিশ্বাস ভালোবাসা নষ্ট হয় আপনাদের এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া ঠিক হবে না।
নতুন সাড়ে ৩ কোটি ভোটার ভোটের সুযোগ চায় : নতুন প্রজন্মের প্রায় সাড়ে তিন কোটি ভোটার সংযুক্ত হয়েছে জানিয়ে তারেক বলেন, এই নতুন প্রজন্মের ভোটাররা আজ পর্যন্ত একটি জাতীয় নির্বাচনেও ভোট দিয়ে তাদের নিজের পছন্দের প্রার্থীকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করার সুযোগ পায়নি। সুতরাং সংস্কার ইস্যুর পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্র্বর্তী সরকারের দৃশ্যমান প্রস্তুতি নেয়া উচিত বলে আমরা বিশ্বাস করি বা আমরা মনে করি।
সমাবেশে অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা মনে করেছিলাম, সরকার ওয়াদা দিয়েছিল, অতি দ্রুত মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেবে। কিন্তু ১০ মাসেও তারা ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়নি। অনেকে নির্বাচন বিলম্বের জন্য ষড়যন্ত্র করছে। সংস্কার আমরাও চাই, কিন্তু এই সংস্কার একাই করা যাবে না। আমরা চাই, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেয়া হোক। এতে ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করবে জগণন। দেশ নির্বাচনমুখী হলে ষড়যন্ত্র থেমে যাবে। আমরা সরকারকে বলেছি, বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এলে অবশিষ্ট সংস্কার করবে, কথা দিয়েছি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, আজকে নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ তারুণ্যের সমুদ্রে পরিণত হয়েছে। আপনার (তারেক রহমান) নেতৃত্বে বাংলাদেশের তরুণরা জেগে উঠেছে। ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার আমাদের দেশকে ধ্বংস করেছিল। দেশের তরুণ ছাত্রসমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। জুলাই-আগস্টে আমাদের প্রথম বিজয় হয়েছে। তবে আমাদের আন্দোলন কিন্তু থেমে যায়নি। আমরা বিজয়ের দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছি। বাংলাদেশকে গণতন্ত্রে রূপ দিতে হবে। অবিলম্বে দ্রুত নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দিতে হবে। জনগণ চায় গণতন্ত্র। আমরা সরকারকে সেজন্য সহযোগিতা করেছি। সহযোগিতা থাকবে। কিন্তু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা অব্বাস বলেন, করিডোর নিয়ে কথা হচ্ছে। লাভ-লোকসান দেখতে চাই না। যেমন ছিলাম তেমনই থাকতে চাই। আবার নিউমুরিং টার্মিনাল দিয়ে দিতে চাচ্ছেন। দেশের মানুষকে বোকা ভাববেন না। তিনি বলেন, স্টারলিংক এনেছেন কার জন্য? আরাকান আর্মির জন্য। আমরা কিন্তু স্টারলিংক ছাড়াই চলেছি। করিডোর কার জন্য? আরাকান আর্মির মাল মসলা পাঠানোর জন্য। আমরা কিন্তু জীবন থাকতে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অটুট রাখব।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, গণতন্ত্রের পথ হলো নির্বাচন। নির্বাচন পেছানো নিয়ে হেলাফেলা চলবে না। নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে টালবাহানা চলবে না। সংস্কার ঐকমত্য না হলে সেই সংস্কার বাংলাদেশের জনগণ মানবে না। সংস্কার করবে দেশের জনগণ। নির্বাচনের মাধ্যমে সেই সংস্কার করবে।
স্থায়ী কমিটির আরকে সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছে, আমরা নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছিলাম, তার পদত্যাগ চাইনি। আমরা ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চেয়েছি। নিরপেক্ষ সরকার, গণতন্ত্র ও নির্বাচনের দাবিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের সবার লক্ষ্য হোক সবার আগে বাংলাদেশ। তারেক রহমানের নেতৃত্বে আগামীর বাংলাদেশ হবে নতুন বাংলাদেশ। নির্বাচন চাওয়া যদি অপরাধ হয়, তবে সেই অপরাধ আমরা বারবার করতে চাই।
যুবদল সভাপতি এম মোনায়েম মুন্নার সভাপতিত্বে এবং স্বেচ্ছাসেবক দল সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছিরের যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ।



