নাজমুল হুদা মজনু
দুনিয়া-আখেরাতের উভয় জগতের জন্য অপূর্ব এক কল্যাণকামী রাহবার আল্লাহর হাবিব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাহান্নামের যন্ত্রণাদায়ক কঠিন আজাবের সতর্ককারী; একই সাথে মুমিন বান্দাদের শান্তিময় মনোরম জান্নাতের পথপ্রদর্শক। কণ্টকাকীর্ণ অন্ধকার চলার পথে তিনিই উত্তম আলোর দিশারি। তার সম্মান সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআনুল কারিমে বলেছেন, ‘মানুষের জন্য এটা কি একটা আশ্চর্যের বিষয় যে, আমি তাদের মধ্য থেকে তাদেরই মতো একজন মানুষের কাছে ওহি পাঠিয়েছি, যেন সে মানুষকে তা দিয়ে জাহান্নাম সম্পর্কে সাবধান করে দিতে পারে, আবার যারা এ ওহির ওপর ঈমান আনে; তাদের এ মর্মে সুসংবাদও দিতে পারে যে, তাদের জন্য তাদের মালিকের কাছে উঁচু মর্যাদা রয়েছে, কাফেররা এমনি আশ্চর্যান্বিত হয়ে পড়ল যে, তারা বলল, অবশ্যই এ ব্যক্তি একজন সুদক্ষ জাদুকর। (ইউনুস-২)
মহীয়ান গরিয়ান আল্লাহ জাল্লা শানহু তার রাসূলের কাছে কুরআনুল কারিম নাজিল করে তার পাপীতাপী বান্দাদের নাজাতের বার্তা জানিয়ে দিয়েছেন।
পবিত্র কুরআনের সুরা ইউনুসে বলা হয়েছে, তাঁরই কাছে তোমাদের প্রত্যাবর্তন; আল্লাহর ওয়াদা সত্য, সৃষ্টিকে তিনি অস্তিত্ব দান করেন, এরপর তিনিই আবার তার পুনরাবর্তন ঘটান-যারা তাঁর ওপর বিশ্বাসী, পুণ্যশীল তাদের ন্যায়বিচারের সাথে কর্মফল প্রদানের জন্য এবং যারা অবিশ্বাসী তাদের জন্য রয়েছে উত্তপ্ত পানীয় ও কঠিন শাস্তি, যা তারা অস্বীকার করত। (ইউনুস-৪)
এ কথা ধ্রব সত্য যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিঃসন্দেহে ঈমানদারকে ভালোবাসেন; বান্দাকে জাহান্নামে দেয়া তাঁর ইচ্ছা নয়। কেবল সতর্কতার জন্য তিনি তাঁর বান্দাদের আহ্বান জানান। তিনি তাঁর প্রিয় বান্দাদের ডাক দিয়ে বলেন, ‘হে বিশ্বাসীরা! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করো জাহান্নামের আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম-হৃদয়, কঠোর-স্বভাব ফেরেশতারা, যারা আল্লাহ যা তাদেরকে আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং তারা যা করতে আদিষ্ট হয়, তাই করে। (তাহরিম-৬)
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নানা ধরনের উপমা-উদাহরণ দিয়ে বান্দাদেরকে তাঁর কাছাকাছি পৌঁছার পথে অনুপ্রেরণা প্রদান করেন।
কুরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এ পার্থিব জীবনের উদাহরণ হচ্ছে, যেমন আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করলাম, যা দ্বারা এরপর জমিনের গাছপালা ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে উদ্গত হলো, যা থেকে মানুষ ও জন্তু-জানোয়াররা তাদের আহার সংগ্রহ করল; এরপর একদিন যখন জমিন তার সৌন্দর্যের রূপ ধারণ করল এবং আপন সৌন্দর্যে সে শোভিত হয়ে উঠল, তখন এসব দেখে তার জমিনের মালিক মনে করল, তারা বুঝি এর ফসল ভোগ করার ওপর এখন সম্পূর্ণ ক্ষমতাবান হয়ে গেছে, এ সময় হঠাৎ করে রাতে কিংবা দিনে আমার আজাবের ফয়সালা তাদের ওপর আপতিত হলো, ফলে আমি তাদের এমনভাবে নির্মূল করে দিলাম যেন গতকাল পর্যন্ত এখানে তার কোনো অস্তিত্বই ছিল না; এভাবেই আমি আমার আয়াতগুলো সেসব জাতির জন্যে খুলে খুলে বর্ণনা করি, যারা এ সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করে। (ইউনুস-২৪)
মুমিন বান্দাদের উচিত কেবল দুনিয়ার চাকচিক্য কামনা নয়; আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি প্রত্যাশা এবং আখেরাতের অনন্ত জীবনে মনোরম জান্নাতের বাসিন্দা হওয়ার জন্য চেষ্টা-সাধনা অব্যাহত রাখা।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন দুনিয়ার মানুষকে লাভজনক এক ব্যবসা করার জন্য তাগিদ দিয়েছেন; আর তা হচ্ছে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে মহামূল্যবান জান্নাতের বাগবাগিচা ঘেরা প্রাচুর্যময় সুরম্য প্রাসাদ ক্রয় করা।
আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজিদে বলেন, ‘যারা ঈমান এনেছ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বাণিজ্যের কথা বলে দেবো, যা তোমাদেরকে রক্ষা করবে এক যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে? তা এই যে, তোমরা আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং জিহাদ করবে আল্লাহর পথে তোমাদের ধনসম্পদ ও তোমাদের জীবন দিয়ে। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা জানতে। আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন তোমাদের গুনাহগুলো এবং প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার নিম্নদেশে নহরগুলো প্রবাহিত হতে থাকবে এবং এমন মনোরম গৃহ, যা প্রস্তুত রয়েছে অনন্তকাল বসবাসের জন্য। এটাই মহা সাফল্য।’ (আস্ সফ ১০-১২)
পবিত্র কুরআনুল কারিমের পাশাপাশি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসে এ সম্পর্কিত দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত- তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে রিওয়ায়েত করেছেন যে, কাফের যদি দুনিয়াতে কোনো সৎ আমাল করে তবে এর প্রতিদানস্বরূপ দুনিয়াতেই তাকে জীবনোপকরণ প্রদান করা হয়ে থাকে। আর মুমিনদের নেকি আল্লাহ তায়ালা আখেরাতের জন্য জমা করে রেখে দেন এবং আনুগত্যের প্রতিফলস্বরূপ আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে পৃথিবীতেও জীবিকা দান করে থাকেন। (মুসলিম-৬৯৮৩)
শয়তানের ধোঁকা ও নফসের ওয়াসওয়াসায় মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে বিপথগামী হয়ে যায়; কিন্তু যারা পরম ধৈর্য ধারণ করে এবং নেক আমল করে, এরাই হচ্ছে সেসব লোক, যাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।’ (হুদ-১১)
মুমিনদের মনে রাখতে হবে, আল্লাহ তায়ালা যেমন কঠিন শাস্তিদাতা তেমনি আবার অসীম দয়াময়। রাহমানুর রাহিম আলাহ জাল্লা শানহু বলেন, যদি আল্লাহ তায়ালা তোমাদের কোনো দুঃখ-কষ্ট দেন তাহলে তিনি ছাড়া অন্য কেউই নেই তা দূরীভূত করার, আবার তিনি যদি দয়া-মায়া করে তোমাদের কোনো কল্যাণ করতে চান তাহলে তাঁর সে অনুগ্রহ রদ করারও কেউ নেই, তিনি তাঁর বান্দাদের যাকে চান তাকেই কল্যাণ পৌঁছান; আল্লাহ তায়ালা বড়ই ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (ইউনূস-১০৭)
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
 


