নিজস্ব প্রতিবেদক
আবারো এক দিনে ডেঙ্গুতে চারজনের মৃত্যু হলো এবং গত ২৪ ঘণ্টায় ৮০৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। চলতি বছর গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২৫৯ জনের মৃত্যু হলো রোগটিতে এবং আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৩ হাজার ১৭০ জন। তবে একই সময়ে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন মোট ৬০ হাজার ২৬৩ জন। ২৫৯ জন বাদ দিয়ে হাসপাতালে এখনো পর্যন্ত চিকিৎসা নিচ্ছেন দুই হাজার ৯০৭ জন।
এবার শীতকালেও চলবে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। কারণ এডিস মশার বৈশিষ্ট্যে ইতোমধ্যে পরির্তন হয়ে গেছে। আগে ডেঙ্গু জীবাণুবাহী এডিস মশারা কেবল সন্ধ্যায় ও সকালে কামড়াত, এটা শহুরে মশা, ঘরেই বাস করত। কিন্তু এখন এডিস মশারা দিন ও রাত সব সময় কামড়ায়, এটা কেবল শহুরে মশা নয়, এটা গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রামে এই মশার বংশ নিয়মিত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি বরিশাল বিভাগের বরগুনা জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকেও ডেঙ্গু সংক্রমিত রোগী পাওয়া যাচ্ছে প্রচুর পরিমাণে। অতএব, গ্রাম-শহর উভয় অঞ্চলের মানুষের ডেঙ্গু হচ্ছে এবং এটা কেবল বর্ষাকালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, শীতের শুষ্ক সময়েও এডিস মশার অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। কিটতত্ববিদ অধ্যাপক ড. গোলাম ছারোওয়ার বলছেন, ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশা নিজের বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন করেছে অথবা প্রাকৃতিকভাবেই পরিবর্তন হয়ে গেছে। ফলে এখন ডেঙ্গু প্রতিরোধে সারা বছরই কাজ করতে হবে এবং সতর্ক থাকতে হবে।
ড. গোলাম ছারোয়ার বলেন, নানা কারণে নাগরিকরা মশার কামড় থেকে কিংবা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। এর মধ্যে যে পদ্ধতিতে মশা নিধনে কাজ করা হচ্ছে সে পদ্ধতিটিই ভুল। তা ছাড়া মশা নিধনে যে কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে বিদেশ থেকে আনার পর সেই কীটনাশকের কার্যকারিতা (এফিকেসি) কতটুকু সেটা পরীক্ষা করা হয় না। বিদেশী কোম্পানি যে পরীক্ষা করে দিচ্ছে সেই পরীক্ষার ওপর ভরসা করেই বাংলাদেশে মশা নিধনে আমদানিকৃত কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে। এসব কীটনাশক ব্যবহারের আগে দেশে অব্যশই পরীক্ষা করা উচিত বলে ড. গোলাম ছারোয়ার মনে করেন।
এ দিকে গতকাল সকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগে দেশে যে চারজনের মৃত্যু হয়েছে তাদের একজন সুনামগঞ্জ, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, ময়মনসিংহের নতুনবাজার এবং আরেকজন উত্তর শেরপুরের বাসিন্দা। তাদের মৃত্যু হয়েছে যথাক্রমে সুনামগঞ্জ ২৫০ বেডের হাসপাতাল, মুগদা মেডিক্যাল কলেজে, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। মৃতদের দুইজন পুরুষ এবং দুইজন নারী।
গতকাল যে ৮০৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তাদের মধ্যে ৪৬০ জনই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এবং এর বাইরে ঢাকার বিভাগের অন্যান্য হাসপাতালে। এর বাইরে বরিশালে ১১২ জন, চট্টগ্রামে ৯৭ জন, খুলনা ও ময়মনসিংহে ৪৯ জন করে ১৯৮ জন, রাজশাহীতে ৩৭, রংপুরে ১৭ এবং সিলেটে ১০ জন ভর্তি হয়েছে।



