ডাকসুতে আজ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় নামছেন প্রার্থীরা

দীর্ঘ বিরতির পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এখন বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা ও উৎসবের আমেজ।

হারুন ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
Printed Edition
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ছাত্রদল নেতারা (বাঁয়ে); কার্জন হল এলাকায় নির্বাচনের প্রচারণায় ইসলামী ছাত্রশিবির
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ছাত্রদল নেতারা (বাঁয়ে); কার্জন হল এলাকায় নির্বাচনের প্রচারণায় ইসলামী ছাত্রশিবির |নয়া দিগন্ত

সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা। মনোনয়ন প্রত্যাহার ও যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর আজ থেকে শুরু হবে এই বহু কাক্সিক্ষত নির্বাচনী উৎসব, যা চলবে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। দীর্ঘ বিরতির পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এখন বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা ও উৎসবের আমেজ।

গতকাল সোমবার ছিল প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। নির্বাচন কমিশন আগামীকাল (২৬ আগস্ট) বিকেলে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে। এর পরপরই প্রার্থীরা স্ব স্ব প্যানেল ও ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষার্থীদের দ্বারে দ্বারে ভোট চাইতে পারবেন। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ও হল সংসদে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচনের তফসিল ও প্রস্তুতি : গত ২৯ জুলাই ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তফসিল অনুযায়ী, ১২ থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত মনোনয়ন বিতরণ করা হয় এবং ১৯ আগস্ট পর্যন্ত মনোনয়ন জমা নেওয়া হয়। ২১ আগস্ট প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর আজ প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ শেষ হলো।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এবারের ডাকসু নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) পদে ৪৮ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯ জন এবং সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২৮ জনসহ বিভিন্ন পদে বিপুল সংখ্যক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদের পাশাপাশি ১৮টি আবাসিক হলের সংসদেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে একজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

প্রচারণায় আচরণবিধি ও প্রশাসনের কড়াকড়ি : একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কঠোর আচরণবিধি আরোপ করেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. জসিম উদ্দিন বলেন, ২৬ আগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা পর্যন্ত প্রার্থীরা হল ও ক্যাম্পাসে প্রচারণা চালাতে পারবেন।

আচরণবিধির উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হলো : লিফলেট, পোস্টার ও হ্যান্ডবিলের মতো কাগজে ছাপানো প্রচারণা চালানো গেলেও ক্যাম্পাসের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে যত্রতত্র এগুলো ফেলা যাবে না, কোনো প্রকার দেয়াল লিখন, ডিজিটাল ব্যানার বা বিলবোর্ড ব্যবহার করা যাবে না, প্রার্থীদের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন, উপহার প্রদান বা আপ্যায়ন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ, নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে এমন কোনো স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম, ধর্মীয় সভা বা সমাবেশ আয়োজন করা যাবে না এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে সাইবার বুলিং প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য বা সম্মান হানিকর পোস্ট দিলে তা আচরণবিধি লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হবে। এ লক্ষ্যে ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি নিরাপত্তা মঞ্চ’-সহ কয়েকটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে অস্থায়ীভাবে স্থগিত রাখার জন্য বিটিআরসিকে অনুরোধ জানিয়েছে প্রশাসন।

মাঠে নেমেছে প্রধান ছাত্র সংগঠনগুলো : আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর আগেই বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ক্যাম্পাসে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়েছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে কুশল বিনিময় ও মতবিনিময় করে আসছিলেন।

এবারের নির্বাচনে বেশ কয়েকটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংসদ’, ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’, ছাত্রদল, বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর জোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের একাধিক জোট মাঠে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। প্রতিটি প্যানেলই শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের ইশতেহার তৈরির কাজ করছে।

শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও ক্যাম্পাসের চিত্র : দীর্ঘদিন পর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও আগ্রহ তৈরি হয়েছে। তারা মনে করছেন, এ নির্বাচনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসবে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর জোরালো হবে। আবাসন সঙ্কট, পরিবহন সমস্যা, খাবারের মান, লাইব্রেরির সুবিধা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন একাডেমিক ও আবাসিক সমস্যা সমাধানে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা কার্যকর ভূমিকা রাখবেন বলে তাদের প্রত্যাশা।

তবে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে কিছু ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও উঠেছে। ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা এবং সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

সব মিলিয়ে প্রচারণা শুরুর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি নির্বাচনী আবহের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আগামী দুই সপ্তাহ প্রার্থীদের প্রচারণা, বিতর্ক ও প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গন মুখরিত থাকবে, যার চূড়ান্ত রায় দেবেন শিক্ষার্থীরা আগামী ৯ সেপ্টেম্বরের ভোটে।

প্রচারণা ও প্রার্থিতা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন- ২০২৫ উপলক্ষে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা, নির্বাচনী প্রচারণা ও প্রার্থিতাসংক্রান্ত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে প্রশাসন।

প্রশাসনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, যেসব শিক্ষার্থী ভোটার তালিকায় ছবি অপ্রদর্শিত রাখতে চান, তারা আগামী ২৭ আগস্টের মধ্যে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আবেদন করতে পারবেন। অন্য দিকে ছাত্রী হলগুলোতে নির্বাচনী প্রচারণার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২৬ আগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট হলের অনাবাসিক ছাত্রী এবং অন্যান্য হলের আবাসিক ও অনাবাসিক প্রার্থীরা প্রচারণা চালাতে পারবেন।

ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকলেও বিভিন্ন আবেদন বিবেচনায় তা সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট দফতর ও হল কর্তৃপক্ষের জন্য তালিকাটি উন্মুক্ত থাকবে।

মনোনয়নপত্র বাতিলসংক্রান্ত আপিল নিষ্পত্তির পর যাচাই-বাছাই শেষে আবেদনকারীদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া আপিল নিষ্পত্তি ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে গঠিত ট্রাইব্যুনাল কমিটি গত ২৪ আগস্টের বৈঠকে জুলিয়াস সিজার তালুকদার ও বায়েজিদ বোস্তামীকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা এবং নিষিদ্ধ সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ভোটার ও প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ দেয়ার সুপারিশ করেছে। এ বিষয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি সিন্ডিকেটে পাঠানো হয়েছে।

অন্যদিকে আসাদুজ্জামান জিলানী ও মো: খায়রুল আলমের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ যথাযথভাবে প্রমাণিত হয়নি এবং অভিযোগপত্রে অভিযোগকারীর স্বাক্ষর না থাকায় তাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্বাচনের স্বচ্ছতা, সুষ্ঠু পরিবেশ ও শান্তিপূর্ণ সম্পাদনের জন্য সব শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট মহলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেছে।

ক্ষমা চাইলেন উমামা ফাতেমা : গত ২৫ আগস্ট রাতে নিয়ম ভঙ্গ করে মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রোকেয়া হলে অবস্থান করে ভিপি পদপ্রার্থী উমামা ফাতেমার বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেন শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। এরই মাঝে, বিষয়টিকে কেন্দ্র করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনি। তিনি বলেছেন, আমি নিজেই রোকেয়া হলের প্রভোস্টের সাথে দেখা করেছি এবং একটি অ্যাপ্লিকেশন দিয়েছি। যেহেতু আমি নিয়মবহির্ভূতভাবে হলে প্রবেশ করেছি, তাই হল প্রশাসনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছি।

গতকাল সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, গতকাল আমার রোকেয়া হলে প্রবেশকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মহল থেকে কথা তোলা হচ্ছে। আমি গতকাল কোনো নির্বাচনী প্রচার বা মিটিং করতে যাইনি। দীর্ঘদিনে মানসিক ধকলের কারণে মেন্টাল রিলিফের জন্য বান্ধবীর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আমি হলগেট ১০টায় বন্ধ হওয়ার আগেই হলে প্রবেশ করে। তাই রাত দেড়টায় আসার ব্যাপারে যে ভুয়া খবরটি ছড়ানো হচ্ছে তা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কেউ প্রমাণ করতে পারবে না আমি ভোট চেয়েছি।

তিনি বলেন, স্বতন্ত্র ইলেকশন করার কারণে তারা অযথা হ্যারেজ করছে, যারা চায়নি আমি ইলেকশনে থাকি। ইচ্ছাকৃতভাবে আমাকে অপরাধী সাজিয়ে ফেসবুকের কাঠগড়ায় বিচার বসানো হয়েছে।

উমামা ফাতেমা আরো বলেন, তবে আজকের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এক হলের শিক্ষার্থী অন্য হলে যাওয়া কোনো ফৌজদারি অপরাধ না। নিয়মবহির্ভূত হলেও নানা সময়ে এক হলের মেয়েরা অন্য হলে বিভিন্ন সময় যান। এই স্বাভাবিক প্রবণতাকে ফেসবুকের কাঠগড়ায় তুলে ক্রিমিনালাইজ করা মেয়েদের চলাচলের পরিসরকে কমানোর সামিল। আমাদের সাধারণ মেয়েরা প্রতিনিয়ত এই হেনস্তার শিকার হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯-এর ডাকসু ইলেকশনের পর এই ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু ডাকসু শেষে আবার পুরোনো নিয়মেই সব ফিরে যায়। তাই বলতে পারি, আমি নির্বাচিত হলে এক হলের মেয়েরা যাতে অন্য হলে নির্বিঘেœ যেতে পারে, তার ব্যবস্থা করবো।

আমরা ক্যাম্পাসে সহনশীল রাজনীতি চেয়েছি : আবিদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেছেন, আমরা ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে একটা সহনশীল রাজনীতির চর্চা চেয়েছি; কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে বার বার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

গতকাল সোমবার বিকেলে মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডাকসুর সার্বিক পরিস্থিতিতে নিয়ে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

এ সময় ছাত্রদলের প্যানেলের জিএস প্রার্থী তানভীর বারী হামিম, এজিএস প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদসহ সম্পাদক প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

আবিদ বলেন, আমরা আশঙ্কা করছি গুপ্ত সংগঠন বা অন্য সংগঠন আমাদের প্রার্থীদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে না পেরে মিথ্যা প্রপাগান্ডা চালাবে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনলাইন গ্রুপে প্রতিনিয়ত প্রপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে। এ জন্য, এসব গ্রুপ নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান তিনি।

তিনি উমামা ফাতেমার আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়ে বলেন, উমামা রোকেয়া হলে প্রবেশের ফলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও নির্বাচনকেন্দ্রিক মেয়েদের প্রবেশ শিথিল করা হয়েছে। কিন্তু সেটি শুরু হবে আগামীকাল থেকে। উমামা ফাতেমা যদিও ক্ষমা চেয়েছেন, কিন্তু আইন অমান্য করে ক্ষমা চাইলেই তো হয় না; এটিকে স্বাভাবিক করা হয়। আশাকরি নির্বাচন কমিশন এটি নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিবে।

আবিদুল আরো বলেন, ‘বিজয় একাত্তর হলের এজিএস প্রার্থী তানিম কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগের হয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা করেছিল। সে কিভাবে এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে? আবার ‘স্বতন্ত্র ঐক্য জোট’ থেকে মমিনুল ইসলাম বিধান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে নির্বাচন করছেন। তিনি ২০২২ সালে ছাত্রদলের ওপর হামলায় জড়িত ছিলেন। জগন্নাথ হলের স্বপন রায় ছাত্রলীগের উপবিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন, এখনও পদত্যাগ করেননি, অথচ তিনি ভিপি পদে নির্বাচন করছেন।’

ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী এ নেতা বলেন, ‘আগে ছাত্রলীগের (নিষিদ্ধ) সময় ছিল গণরুম-গেস্টরুম কালচার, এখন চলছে মুড়ি পার্টির কালচার। মুড়ি পার্টিতে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, প্যানেলের কয়জনের নাম তারা মুখস্থ করতে পেরেছে। যে বেশি প্রার্থীর নাম বলতে পারছে, তাকে উপঢৌকন দেয়া হচ্ছে।’

প্রচারণা শুরুর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আগামীকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু হবে। কিন্তু গতকাল রাত ১টা ১৩ মিনিটে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রচারণা চালিয়েছে। যদিও তিনি ক্ষমা চেয়েছেন, কিন্তু একটি ঘটনা ঘটিয়ে পরে ক্ষমা চাইলে অন্যরা একই সুযোগ নেবে। প্রশাসনকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।’

স্যার এ এফ রহমান হলের প্রভোস্ট কাজী মাহফুজুল হক সুপান শিবির ও বাগছাসকে সরাসরি পেট্রোনাইজ করেছেন বলে অভিযোগ তোলেন আবিদ। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানান তিনি।

প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সমর্থিত ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’।

গতকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন এলাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাবি প্রশাসনের বিভিন্ন কার্যক্রমের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেন তারা।

সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী খায়রুল আহসান মারজান বলেন, নির্বাচন বিধিমালা অনুযায়ী ২৬ তারিখের আগ পর্যন্ত কোনো ধরনের ব্যানার-ফেস্টুন লাগাতে পারবেন না প্রার্থীরা। কিন্তু, অনেক প্রার্থী নিয়মিত ব্যানার-ফেস্টুন লাগিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন, যা নির্বাচনী আচরণবিধির স্পষ্ট লঙ্ঘন।

গতকাল ও আমরা দেখেছি উমামা ফাতেমা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে রোকেয়া হলে প্রাচরণা চালাচ্ছেন। তিনি কারো প্রতিনিধিত্ব করেন কিনা? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কি তাকে ভিপি হিসেবে নির্বাচিত করার জন্য ধরে নিয়েছে কিনা? যদি না হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি কেন?

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন তাদের নিরপেক্ষ বক্তব্য এখন পর্যন্ত দিতে পারেনি। ছাত্রদলের সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান হলগুলোতে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। তিনি এবং তার প্যানেলের অনেকে পাঠকক্ষ ও অন্যান্য জায়গায় কুশল বিনিময় করেছেন। আমরা আরো দেখেছি, নির্বাচনের মনোনয়ন সংগ্রহের দিন সাধারণ সম্পাদক (জিএস) শেখ তানভীর বারী হামিম দলবল নিয়ে স্লোগান দিয়ে প্রার্থী মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন।

মারজান বলেন, ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের সদস্যরা প্রতিদিন মিডিয়াতে জানান দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। তারাও শিক্ষার্থীদের কুশল বিনিময় করছেন।

তিনি আরো বলেন, ভোটেকন্দ্রের তুলনায় ভোটার সংখ্যা অনেক বেশি। ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র আটটি ভোটকেন্দ্র আছে। এত কম সংখ্যক কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করতে গেলে দিন পেরিয়ে রাত হয়ে যাবে। কারণ একজন শিক্ষার্থীকে ৪২টি ভোট দিতে হবে।