বাউলের আল্লাহকে নিয়ে কটূক্তির ঘটনা পরিকল্পিত মন্তব্য করে দেশের বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, বাউল আবুল সরকার আল্লাহর সাথে যেন কৌতুক করেছেন। এটা ক্ষমার অযোগ্য। তারা বলেন, কয়েক বছর আগে এমনটা না হলেও এখন বাউলদের মধ্যে দিন দিন সহনশীলতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা কমে আসছে। আবুল সরকার যা করেছেন তা কোনোভাবেই মেনে নেয়ার মতো নয়। তার ভিডিওটি দেখলে মনে হয় তিনি নির্দ্ধিধায় আল্লাহর সাথে কৌতুক করছেন। শিল্পী সমাজ এর দায় নেবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, সব ধর্মের আসল মর্ম হলো মানব মুক্তি, মানবতার কল্যাণ। এখানে কোনো ধর্মকে কটাক্ষ করার অধিকার কারো নেই। কারণ ধর্মের স্বাধীনতা সবার আছে। তাই কেউ এটি করে থাকলে তা অবশ্যই নিন্দনীয়।
লালন গবেষক মনজুর রহমান এ বিষয়ে নয়া দিগন্তকে বলেন, আবুল সরকার যা করেছেন তা অত্যন্ত গর্হিত। ক্ষমার অযোগ্য। এটা মেনে নেয়া যায় না। বাউলদের কাজ হলো আদর্শের মাধ্যমে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা। কিন্তু আল্লাহকে নিয়ে কটূক্তি বাউলদের মূল নীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এতে করে মানুষের শ্রদ্ধাবোধের জায়গা নষ্ট হচ্ছে। ফলে এক সময় বাউল দেখলেই মানুষ ঘৃণা করবে।
তিনি বলেন, বাউল সাধকরা মূলত সত্য সুন্দরের পক্ষে সব সময় নিজেদের উৎসর্গ করেছেন। কিন্তু এখন আমরা দেখছি এর বিপরীতে নারী আর গাজার নেশায় বুঁদ হয়ে তারা সত্য সুন্দরের অনুসন্ধান করছে, যা মানুষকে ভালোর পরিবর্তে খারাপ পথে ধাবিত করছে। এর কারণ দিন দিন বাউলদের মধ্যে সামাজিক দায়বদ্ধতা কমে আসছে, যা কিছুতেই কাম্য নয়। এর ফলে অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে।
হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী নয়া দিগন্তকে বলেন, এটা পরিকল্পিত ঘটনা। আসন্ন নির্বাচন বাধাগ্রস্তে দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে বাউল আবুল সরকারদের ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বাউলকাণ্ডে মূল অপরাধীর উসকানিমূলক বক্তব্যের পরিবর্তে জনতার প্রতিক্রিয়াকে বড় করে দেখিয়ে ভ্রান্ত ব্যাখ্যা ছড়ানো হচ্ছে। কেউ বাকস্বাধীনতার নামে অন্যের বিশ্বাসকে আঘাত করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বাউল আবুল হোসেন সেই অপরাধ করেই পরিস্থিতি উসকে দিয়েছে। এখন যারা তার পক্ষ নিচ্ছে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা জরুরি।
বাউলশিল্পী করিম শাহ বলেন, এমনটা কিছুতেই মেনে নেয়ার মতো না। অবশ্যই এর প্রতিকার হওয়া উচিত। আল্লাহকে নিয়ে বাউল আবুল সরকারের কটূক্তির দায় শিল্পী সমাজ নেবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, মহান প্রভুকে ছোট করে কিছু অর্জন কোনো শিল্পীর কাজ হতে পারে না।
আল্লাহকে নিয়ে কটাক্ষে বাউল আবুল সরকারের তীব্র সমালোচনা করে জনপ্রিয় লোকসঙ্গীতশিল্পী মৌসুমী আক্তার সালমা বলেন, উনার (আবুল সরকার) ভিডিওটা দেখার পর আমার একবারো মনে হয়নি তিনি মুখ ফসকে বলেছেন বা ভুলভাল উল্টাপাল্টা কিছু বলে ফেলেছেন। মনে হচ্ছে তিনি যেন নির্দ্ধিধায় আল্লাহর সাথে কৌতুক করছেন। একজন বাউলের এ ধরনের আচরণ আমি কখনোই মানতে পারি না। এ জন্য পুরো শিল্পী সমাজ লজ্জিত হয়। এর দায় কিন্তু আমরা নেব না। তিনি বলেন, মহান প্রভুকে নিয়ে টানাটানি আমাদের হৃদয়ে লাগে, বুকে আঘাত লাগে, এটা কেউ সহ্য করবে না। মা-বাবাকে গালি দিলেই সহ্য করা যায় না, সেখানে সৃষ্টিকর্তাকে নিয়ে কিছু বললে তার বান্দারা তো চুপ থাকবে না।
সালমা বলেন, ‘আপনাকে এতটুকু পারমিশন কেউ দেয়নি যে, সৃষ্টিকর্তা ও রাসুলকে বাজেভাবে অপমান করবেন। আপনারা পুরো শিল্পী সমাজকে কলঙ্কিত করবেন, এ ক্ষমতা কিন্তু কেউ আপনাকে দেয়নি। আপনার জন্য এ রকম কলঙ্ক আমরা নিতে পারব না।’
আরেক লোকসঙ্গীতশিল্পী নোলক বাবু এক ভিডিও বার্তায় বলেন, এ পৃথিবীতে আমার আল্লাহ ও রাসূলকে সা: নিয়ে কেউ যদি কোনো বাজে কথা বলে, সে যত বড় প্রভাবশালী ব্যক্তি হোক না কেন তার সর্বোচ্চ শাস্তি পেতেই হবে। পৃথিবীর সবকিছু নিয়ে কথা বলা যায় ‘কিন্তু আল্লাহ ও রাসূলকে নিয়ে কথা বললে এটা মুসলমান কখনোই ছাড় দিবে না।’



