গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা

প্রতি ১ লাখের জন্য একজনেরও কম মনোরোগ বিশেষজ্ঞ

Printed Edition

বিশেষ সংবাদদাতা

বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার কাঠামো এখনো সীমিত। প্রতি এক লাখ জনের বিপরীতে একজনেরও কম মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। সরকারি হাসপাতালগুলোতে দুর্যোগ-পরবর্তী মানসিক সেবা কার্যত অনুপস্থিত। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নীতিমালায় ‘মনোসামাজিক সহায়তা’ বিষয়টি এখনো প্রান্তিক অবস্থানে বলে এক আলোচনায় বক্তারা জানিয়েছেন। তারা বলেন, বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ ও ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। প্রতি বছর ৫০-৬০ লাখ মানুষ বিভিন্ন দুর্যোগে তিগ্রস্ত হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন ও ভূমিধসের মাত্রা বাড়ছে। এসব ঘটনার মানসিক প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি বিশেষ করে নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ওপর।

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস-২০২৫ কে সামনে রেখে রাজধানীর এক হোটেলে গতকাল গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনায় বক্তারা এই অভিমত জানান। যার প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘দুর্যোগ ও সঙ্কটকালে মানসিক স্বাস্থ্য’। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহের শীর্ষ সমন্বয়কারী প্রতিষ্ঠান এডাব (এসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিজ ইন বাংলাদেশ) আয়োজিত এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন এডাব ঢাকা মহানগর সভাপতি কাজী বেবী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নির্বাহী পরিচালক, উৎস ও শিক্ষক নাট্যকলা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় মোস্তফা কামাল যাত্রা। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন এডাব পরিচালক এ কে এম জসীম উদ্দিন। বক্তব্য রাখেন, এডাব এর কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সৈয়দা শামীমা সুলতানা, নারী নেত্রী জেসমিন সুলতানা পারু, বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরাম এর সদস্য নাসরীন গীতি।

উপস্থাপনায় বলা হয়, বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতায় দুর্যোগ ও মানবিক সঙ্কটের ঘনঘটা বেড়ে চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ভূমিধস, অগ্নিকাণ্ড, মহামারী, বাস্তুচ্যুতি ও সঙ্ঘাত এসব দুর্যোগ মানুষের শারীরিক জীবনের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশের মতো একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশে প্রতি বছরই হাজার হাজার মানুষ তাদের ঘরবাড়ি, জীবিকা, প্রিয়জন হারায়। এই তি শুধু বস্তুগত নয়, মানসিকভাবে বিধ্বংসী। দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ের শোক, ট্রমা, উদ্বেগ, হতাশা এবং ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা অনেককে মানসিকভাবে ভেঙে ফেলে। তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জাতীয় কাঠামোতে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা মনোসামাজিক সহায়তা এখনো পর্যাপ্তভাবে অন্তর্ভুক্ত নয়। দুর্যোগে আক্রান্ত মানুষের জন্য চিকিৎসা, খাদ্য, আশ্রয় ইত্যাদি জরুরি সেবা যতটা অগ্রাধিকার পায়, মানসিক পুনরুদ্ধার সেবা ততটা গুরুত্ব পায় না।

প্রবন্ধে বলা হয়, ২০২২ সালের সিলেটের ভয়াবহ বন্যার পর অনেক পরিবার উদ্বেগ, নিদ্রাহীনতা ও হতাশায় ভুগেছে। আর ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা আগমনের সময় হাজারো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে মানসিক অস্থিতিশীলতার শিকার হয়। কোভিড-১৯ মহামারীর সময় সমাজের সব শ্রেণীর মানুষ মানসিক চাপে আক্রান্ত হয়- ভয়, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, কর্মহীনতা ও শোকের কারণে। এসব প্রমাণ করে, দুর্যোগ ও সঙ্কট শুধু অর্থনৈতিক তি নয়, মানসিক স্বাস্থ্যও একটি বড় মানবিক সঙ্কট।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দুর্যোগ ও সঙ্কটে মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হন। মানসিক স্বাস্থ্য রার েেত্র আমরা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে উদাসীন, সামাজিক ট্যাবু কাজ করে। দেশের চার কোটি মানসিক রোগীর বিপরীতে সাইকোলজিস্ট মাত্র ৪৬৫ জন। মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সভায় যেসব সুপারিশ তুলে ধরা হয় তা হলো : মানসিক স্বাস্থ্য আইন ২০১৮-এর সফল বাস্তবায়ন; ইউনিয়ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারিভাবে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা; আশ্রয় কেন্দ্র ও পুনর্বাসন ক্যাম্পে মনোসামাজিক সাপোর্ট কর্নার স্থাপন; শিাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলর নিয়োগ; মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা।