আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতে ইসিকে কালো টাকার ব্যবহার বন্ধ এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও প্রচারণায় বড় দলগুলো যেন ছোট দলগুলোকে বাধা না দেয়; সে ব্যাপারে ইসিকে কঠোর হতে আহ্বান জানিয়েছেন সংলাপে অংশ নেয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
তারা বলেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) দৃঢ়তা দেখাতে না পারায় সাংবিধানিক এ সংস্থাটির স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, আমরা ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ নাবিকের মতো এগিয়ে যাচ্ছি। সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে ভবিষ্যতে যত চ্যালেঞ্জ আসুক, তা মোকাবেলা করতে আমরা প্রস্তুত।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে রাজনৈতিক দলের সাথে ধারাবাহিক সংলাপের তৃতীয় দিনে গতকাল নেতারা এসব কথা বলেন। এতে স্বাগত বক্তব্যে সিইসি, সংলাপে চার কমিশনার ও ইসির অতিরিক্ত সচিব উপস্থিত ছিলেন। গতকাল সংলাপের প্রথম ধাপে মুক্তিজোটের আবু লায়েস মুন্না, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান, বিকল্পধারা বাংলাদেশের আব্দুল মান্নান, কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিএমএলের নজরুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বে প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। বিকেলে দ্বিতীয় ধাপে জাকের পার্টি, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পাটি), বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, খেলাফত মজলিস ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বিকল্পধারার আবদুল মান্নান বলেন, তিনটি ক্ষমতা যদি আপনাদের থাকে তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। আচরণবিধি ভঙ্গে প্রার্থিতা বাতিল করা, দলীয় এজেন্ট ভোট কেন্দ্রের আশপাশে থাকতে না দেয়া ও দূরের কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা।
মুসলিম লীগের নেতা বলেন, কালো টাকার ব্যবহার বন্ধ করা না গেলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। আগের রাতে টাকা দিয়ে ভোট কিনে নেবে। আর গণভোটের ব্যাপারে সাধারণ ভোটারদের সচেতন ও বুঝাতে হবে।
ন্যাপের নেতারা বলেন, অস্ত্রমুক্ত নির্বাচন করে আপনারা একটা ইতিহাস সৃষ্টি করুন।
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব আব্দুস সামাদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা থেকে ইসি নিয়ন্ত্রিত হলে সে কমিশন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনও দিতে পারে না।
জাকের পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার বলেন, কালো টাকা ও পেশিশক্তির দৌরাত্ম্য বন্ধ করার করতে হবে। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে নির্বাচন তামাশার হবে।
আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ আচরণবিধির কিছু বিধানের সমালোচনা করে বলেন, ইসি প্রার্থীর হাত-পা বেঁধে দিচ্ছে। তিনি বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নির্বাচনী প্রচারণায় না থাকার বিধানের সমালোচনা করে বলেন, পর্নোগ্রাফি থেকে শুরু করে হেন কোনো বাজে কাজ নেই, যা তার নামে ছড়ানো হচ্ছে না। ইসির কাছে জানতে চাই, কিভাবে তারা এ সিভিয়ার প্রবলেম মোকাবেলা করবেন।
খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মুনতাসীর আলী তফসিল ঘোষণার দিন থেকে যৌথ বাহিনী মোতায়েন, নির্বাচনের তিন দিন আগে সেনা মোতায়েন এবং কালো টাকার প্রভাব বন্ধে ইসির নিজস্ব গোয়েন্দা টিম রাখার দাবি জানান।
সিইসি বলেন, একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আমরা চেষ্টা করে যাবো। আমাদের নিয়ত একদম পরিষ্কার, আমাদের কমিটমেন্ট পরিষ্কার। আমরা সেভাবেই কাজ করছি। যত ঝঞ্ঝা, যত সাইক্লোন, যত ঝড় আসুক না কেন, আমরা তা মোকাবেলা করবো। একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য যত পদক্ষেপ নেয়া দরকার নেবো। রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা না পেলে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। এ সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে সবার সহযোগিতা চাই।
জাতীয় নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি ও ইসির অগ্রগতি তুলে ধরার পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশী, সরকারি চাকরিজীবী, নির্বাচনের কাজে সম্পৃক্ত জনবল ও কারাবন্দিদের জন্য পোস্টাল ভোটের প্রস্তুতির কথাও জানান সিইসি। তিনি বলেন, অনেক নতুন বিষয় আমাদের ঘাড়ে এসে পড়েছে। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা কিন্তু হাল ছাড়িনি। এগিয়ে যাচ্ছি। সেদিন আমি বলছিলাম যে, ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ জাহাজের নাবিকের মতো আমরা স্টিয়ারিং করে, নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে যাচ্ছি। ইনশাআল্লাহ, সাকসেসফুলি আমরা এ পর্যন্ত এসেছি।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বর্তমান ইসি আসার পর থেকে নানা ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করে যাচ্ছে, ভবিষ্যতেও মোকাবেলা করবে এবং সেক্ষেত্রে দলগুলোর সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতেও যত চ্যালেঞ্জই আসুক, ইনশাআল্লাহ আমরা মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত এবং এগুলাকে উতরিয়ে আমাদের এগোতে হবে।
আচরণবিধি প্রতিপালনের লক্ষ্যে দলগুলোর সহায়তাই মূল লক্ষ্য উল্লেখ করে সিইসি বলেন, আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া সুন্দর কোনো নির্বাচন করা যাবে না; এটি একদম নিশ্চিত। রাজনৈতিক দলগুলো না চাইলে এবং তারা সমস্যা সৃষ্টি করতে চাইলে দেখবেন নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এটি একটি রেওয়াজের অংশ। সব সময় জাতীয় নির্বাচনের আগে অংশীজনের আলোচনা করা হয়। দেশটা তো আমাদের সবার। দেশটাকে সুন্দর রাখতে হলে এর প্রাথমিক শর্ত হচ্ছে একটি সুন্দর নির্বাচন। সুন্দর নির্বাচনের মাধ্যমে যদি প্রতিনিধি নির্বাচন করে তাদের কাছে দেশটাকে হস্তান্তর করা যায়; তাহলে আমার মনে হয় দেশের জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আপনাদের সম্পূর্ণ সহযোগিতা কামনা করি এবং আমি প্রত্যাশা করি এ সহযোগিতা আমরা পাবো।
নির্বাচন কমিশনার মো: আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, আচরণবিধি প্রতিপালনে আমরা কঠোর ভূমিকায় যাবো, কাউকে ছাড় দেবো না। তফসিল ঘোষণার পরে কঠোর হব, অন্যায়ের ক্ষেত্রে আমরা কাউকে চিনব না।
নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ বলেন, আপনারা সহযোগিতা করলে আলহামদুল্লিাহ, আর অসহযোগিতা করেন তো ইন্নালিল্লাহ।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) মো: আবুল ফজল মো: সানাউল্লাহ এআই’র অপপ্রচার প্রসঙ্গে বলেন, ভালো তথ্য দিয়ে খারাপ তথ্যকে হ্যান্ডেল করতে হবে এবং চিহ্নিতদের আইনের আওতায় আনা হবে।



