এস আলমের বিদেশী আদালতে মামলা করা ‘চোরের মার বড় গলা’ : গভর্নর

পাচার হওয়া টাকা ফেরত পেতে ৩-৪ বছর সময় লাগে

এস আলম দাবি করেছেন তিনি সিঙ্গাপুরের নাগরিক। আমরা দেখাবো যে তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালক ছিলেন।

বিশেষ সংবাদদাতা
Printed Edition

হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণখেলাপি পলাতক ব্যবসায়ী এস আলম ওয়াশিংটনে সালিসি আদালতে মামলা করার বিষয়টি ‘চোরের মার বড় গলা’ হিসেবে মন্তব্য করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, আমরা মামলাটা লড়ব।

বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ বিদেশ থেকে ফেরত আনতে ৪ থেকে ৫ বছর সময় লাগে উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, এর কম সময়ে তা সম্ভব নয় ।

গতকাল সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ‘মানিল্ডারিং প্রতিরোধে জাতীয় সমন্বয় কমিটির বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালাহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এই বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছাড়াও অর্থসচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এস আলম দাবি করেছেন তিনি সিঙ্গাপুরের নাগরিক। আমরা দেখাবো যে তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালক ছিলেন।

আলোচিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ বিশ্বব্যাংকের সালিসি আদালত ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট ডিসপিউটসে যে আবেদন করেছে, তার বিরুদ্ধে আইনিভাবে লড়বে বাংলাদেশ ব্যাংক। জানা গেছে, এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাইফুল আলম ও তার পরিবারের আইনজীবীরা গত ২৭ অক্টোবর ওয়াশিংটনে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট ডিসপিউটসে এই আবেদন জমা দেন। লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস এই খবর দিয়েছে।

২০০৪ সালে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তির আওতায় এই সালিসি মামলা করা হয়েছে। এস আলমের পরিবার বর্তমানে সিঙ্গাপুরে বসবাস করছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের খবর অনুযায়ী, পরিবারটি ২০২০ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করার পর ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব নিয়েছে।

পাচার করা অর্থ সহসা পুনরুদ্ধারের কোনো সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, বিদেশ থেকে অর্থ আনতে কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ বছর লাগে। এর নিচে হয় না। আশা করছি লন্ডনে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর (সাবেক ভূমিমন্ত্রী) মামলার সমাধান হয়ে যাবে। কারণ, ওই মামলায় সাইফুজ্জামান চৌধুরী লড়েননি। ফলে এমনিতেই মামলাটা তারা হেরে গেছেন। সেখানে একটা সুযোগ আছে। ওই মামলায় বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংক ও ইউসিবিএল পার্টি হয়েছে। তবে টাকাটা কবে আসবে সেটা এখনই বলা যাবে না। সেটা ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল, মে, জুন মাস লাগতে পারে। তিনি বলেন, বাকিগুলো আবেদনের ওপর নির্ভর করে। ইতোমধ্যে অনেকগুলো আবেদন করা হয়েছে। সেটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। সেখানে আমাদের কিছুই করার নেই। এ বিষয়ে অনেক অগ্রগতি হয়েছে, সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক।

পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক একীভূত করে নতুন করে গঠন করা সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের জন্য সরকার ইতোমধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড় করেছে বলে জানিয়ে গভর্নর বলেন, বাজেট থেকেই এই টাকা দেয়া হয়েছে।

আগের ব্যাংকগুলোর আমানতকারীরা কবে নাগাদ টাকা ফেরত পাবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটু সময় লাগবে, কিছু প্রক্রিয়াগত বিষয় রয়েছে। আমরা পরিকল্পনা করছি আমানতকারীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা সরাসরি জমা করে দেয়ার। একসাথে সবাই টাকা পাবেন।