চুয়াডাঙ্গা-২ (দামুড়হুদা-জীবননগর) আসনে প্রায় তিন দশক পর সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামছে বিএনপি ও জামায়াত। দামুড়হুদা ও জীবননগর উপজেলা এবং চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ, নেহালপুর, গড়াইটুপি ও বেগমপুর ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনটি ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জাতীয় রাজনীতির নানা উত্তাপ ও পালাবদলের সাক্ষী। গত চার দশকে এখান থেকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (সিরাজ), জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী একবার, বিএনপি তিনবার এবং আওয়ামী লীগ চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। ফলে এই আসনের ভোটের সমীকরণ সবসময়ই বহুমাত্রিক।
তবে এবারের নির্বাচনে এনসিপি, জাতীয় পার্টি, এবি পার্টি বা গণ অধিকার পরিষদের প্রার্থী মাঠে না থাকায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে বিএনপি বনাম জামায়াতের সরাসরি লড়াই। সর্বশেষ এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল ১৯৯১ সালে। সেই নির্বাচনে জামায়াতের মাওলানা হাবিবুর রহমান ৪৯ হাজার ৬৮৮ ভোট পেয়ে জয়ী হন, বিএনপির মোজাম্মেল হক পান ৪০ হাজার ২০ ভোট। এরপর দীর্ঘ দিন জোট রাজনীতির কারণে দুই দল মুখোমুখি হয়নি।
১৯৯৬ সালে জুনের নির্বাচনে বিএনপির মোজাম্মেল হক ৬৪ হাজার ৭৫৫ ভোটে জয়ী হন, আওয়ামী লীগের মির্জা সুলতান রাজা অল্প ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েন। ২০০১ সালে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হয়ে মোজাম্মেল হক রেকর্ড এক লাখ ৪৬ হাজার ৫৪৮ ভোট পান। ২০০৮ সালে পালাবদলে মহাজোটের প্রার্থী হাজী আলী আজগর টগর এক লাখ ৫৬ হাজার ৩২৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। বিশ্লেষকদের মতে, সে সময় বিএনপি ও জামায়াতের ভোট পুরোপুরি একীভূত হয়নি।
নির্বাচন কমিশনের ইঙ্গিতে ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় দামুড়হুদা, দর্শনা ও জীবননগরজুড়ে এখন জোর প্রচার চলছে। বিএনপির প্রার্থী মাহমুদ হাসান খান বাবু কেন্দ্রীয় বিএনপির উপ-কোষাধ্যক্ষ, জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিজিএমইএর বর্তমান সভাপতি। জামায়াতের প্রার্থী অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন দলের কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ও জেলা আমির। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন হাসানুজ্জামান সজীব, যদিও মাঠে তাকে তুলনামূলকভাবে কম সক্রিয় দেখা গেছে।
প্রচারণায় বিএনপি প্রার্থীর মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, এ আসন বিএনপির ঐতিহ্যবাহী ঘাঁটি। সুষ্ঠু ভোট হলে বিজয় নিশ্চিত। তিনি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষির উন্নয়নে ৩১ দফা পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। জামায়াত প্রার্থী আইনজীবী রুহুল আমিন জানান, দীর্ঘ দিন মামলা ও নির্যাতনের মধ্যেও তিনি মানুষের পাশে ছিলেন। ইনসাফভিত্তিক রাজনীতি ও অঞ্চলজুড়ে সুষম উন্নয়নের অঙ্গীকার তার। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হাসানুজ্জামান সজীব বলেন, ভোটাররা এবার নতুন বিকল্প খুঁজছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে মোট ভোটার চার লাখ ১৫ হাজার ২৭ জন। নারী ভোটার পুরুষের চেয়ে সামান্য বেশি। বিশ্লেষকদের মতে, নতুন ভোটার তরুণরাই ফল নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবে। এক তরুণ ভোটার বলেন, মাদকমুক্ত সমাজ, কর্মসংস্থান ও বাস্তব উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি যে দেবে, তাকেই আমরা ভোট দেবো। সরব প্রচার, উঠান বৈঠক ও পথসভায় আসন এখন মুখর। চার দশক পেরিয়ে ২০২৬-এ শেষ হাসি কার মুখে ফুটবে সে উত্তর যেটাই হোক জনগণ চায় সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তন।



