আনাদোলু এজেন্সি ও দ্য গার্ডিয়ান
ইয়েমেনের হাউছি গোষ্ঠীর সাথে এক প্রকার যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, হাউছি বিদ্রোহীরা হোয়াইট হাউজকে আশ্বস্ত করেছে যে তারা বাণিজ্যিক জাহাজের ওপর আর কোনো আক্রমণ চালাবে না। এই প্রতিশ্রুতির পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকাও ইয়েমেনের ওপর চলমান আক্রমণাত্মক কার্যক্রম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
হোয়াইট হাউজে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নিকে আতিথ্য দেয়ার সময় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা তাদের (হাউছিদের) কথা মেনে নেব। তারা বলেছে যে তারা আর জাহাজে হামলা করবে না এবং আমাদের সামরিক পদক্ষেপের উদ্দেশ্যও মূলত এটাই ছিল।’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এই প্রসঙ্গে জানান, মার্কিন হামলা সর্বদা এই অঞ্চলে আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই পরিচালিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল হামলা বন্ধ করা এবং যদি তারা এটি বন্ধ করে, তাহলে আমরাও পাল্টা হামলা বন্ধ করতে পারি।’
এই চুক্তির সত্যতা নিশ্চিত করেছে মধ্যস্থতাকারী দেশ ওমান। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই সমঝোতা লোহিত সাগরে নৌ চলাচলের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। তবে হাউছিদের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু গোষ্ঠীটির রাজনৈতিক নেতা মাহদি আল-মাশাত বলেছেন, লোহিত সাগরে চলাচলকারী বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা বন্ধ হলেও ইসরাইলের বিরুদ্ধে তাদের আক্রমণ অব্যাহত থাকবে। হাউছি গোষ্ঠী অভিযোগ করেছে, গত মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে ইয়েমেনে তীব্র মার্কিন সামরিক অভিযান শুরু হয়েছে, যার আওতায় যুক্তরাষ্ট্র প্রায় এক হাজার ৩০০টি বিমান ও নৌ হামলা চালিয়েছে। এর ফলে শত শত বেসামরিক লোক হতাহত হয়েছে বলেও তারা দাবি করে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের নভেম্বর মাস থেকে গোষ্ঠীটি লোহিত সাগর, আরব সাগর, বাব আল-মান্দাব প্রণালি এবং এডেন উপসাগর দিয়ে যাতায়াতকারী জাহাজগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে আসছিল। তাদের ভাষ্য, গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের সাথে সংহতি প্রকাশের জন্য তারা ইসরাইল এবং তার মিত্রদের জাহাজে এই হামলা চালাচ্ছিল। দেড় বছরের বেশি সময় ধরে চলমান গাজা যুদ্ধে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৫২ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর হাউছিরা হামলা বন্ধ করেছিল। কিন্তু মার্চ মাসে গাজায় ইসরাইলের নতুন করে বিমান হামলা শুরুর পর তারা পুনরায় জাহাজগুলোতে আক্রমণ শুরু করে। গত ৪ মে হাউছিরা ইসরাইলের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বেন গুরিয়নে একটি বড় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালে উত্তেজনা আরো বৃদ্ধি পায়। এর প্রতিশোধ হিসেবে ইসরাইলও ইয়েমেনের হাউছি নিয়ন্ত্রিত বেশ কয়েকটি স্থানে হামলা চালায়, যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হোদেইদাহ এবং কাছাকাছি একটি সিমেন্ট কারখানাও ছিল। হাউছি নিয়ন্ত্রিত আল-মাসিরাহ টিভির খবরে বলা হয়েছে, ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে তিনজন নিহত এবং ৩৫ জন আহত হয়েছে।



