বাসস
বেকারত্ব টেকসই উন্নয়নের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘যুবকদের অন্তর্ভুক্তি ছাড়া টেকসই বৈশ্বিক অগ্রগতি সম্ভব নয়। প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তির বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে, তবে এর সুফল যেন লোভের প্রাচীরে বন্ধ রাখা না হয়।’
প্রধান উপদেষ্টা নিউ ইয়র্কে ‘যুবদের জন্য বিশ্ব কর্মসূচি’র ৩০তম বার্ষিকী উপলক্ষে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনে আয়োজিত এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘‘পঁচাশি বছর বয়সে এসে আজকের আলোচ্য বিষয় ‘অন্তঃপ্রজন্মীয় সহযোগিতার মাধ্যমে বৈশ্বিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করা’-এর গভীরতা আমি অনুভব করছি। গত বছর বাংলাদেশে আমরা দেখেছি যুবশক্তির অসাধারণ ক্ষমতা। তারা সাহসের সাথে বহু বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়েছে, আমাদের জাতির পথ পুনর্নির্ধারণ করেছে এবং আমাকে সংস্কার ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরের দায়িত্ব দিয়েছে।’’
প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, ‘সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বেকারত্ব। যুব বেকারত্ব প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় চারগুণ বেশি, বিশেষত নিম্ন আয়ের দেশে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা একটি জাতীয় যুব উদ্যোক্তা নীতি চালু করেছি, যা অর্থ, দক্ষতা ও বাজার প্রবেশ নিশ্চিত করে। এর ফলে যুবরা চাকরি প্রার্থী নয়, চাকরি সৃষ্টিকারী হয়ে উঠবে। আমরা স্বাধীন সংস্কার কমিশনগুলোতে যুব অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছি এবং একটি জাতীয় নীতি প্রতিযোগিতা চালু করেছি, যাতে যুবদের কণ্ঠস্বর গণতান্ত্রিক নবায়নে অন্তর্ভুক্ত হয়।’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘কোনো দেশ একা যুবশক্তিকে ক্ষমতায়িত করতে পারে না। বাধা দূর করতে, ন্যায় নিশ্চিত করতে এবং অন্তঃপ্রজন্মীয় নেতৃত্বকে উৎসাহিত করতে বৈশ্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন। নয়তো হতাশা অশান্তিতে রূপ নিতে পারে, যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে।’
স্বাস্থ্যসেবা অর্থ উপার্জনকারীদের হাতে ছেড়ে দেয়া উচিত নয়
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত বুধবার বলেছেন, স্বাস্থ্যসেবা অর্থ উপার্জনকারীদের হাতে ছেড়ে দেয়া উচিত নয়।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে অর্থ উপার্জন করা খুব সহজ হতে পারে। এর পেছনে রয়েছে সর্বাধিক মুনাফা অর্জন। ফলে, অর্থ উপার্জনের এ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের ‘উচ্চ পর্যায়ের কর্ম অধিবেশন : প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা রূপান্তর- বাংলাদেশের নীলনকশা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এ মন্তব্য করেন।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা অত্যন্ত মৌলিক বিষয়টি উত্থাপন করেছি- ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা অর্থ উপার্জনকারীদের হাতে ছেড়ে দেয়া উচিত নয়। আমি বলছি না যে অর্থ উপার্জনকারীরা খারাপ মানুষ। আমি বলছি, এটি কেবল তাদের ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত নয়।
কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন টিকা জটিলতার কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, টিকা বিতরণ খুবই ভুলভাবে করা হয়েছিল। বিশ্বের ১০টি দেশ টিকা উৎপাদনের প্রায় ৮০ শতাংশ গ্রহণ করেছিল।
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম, এনসিপি নেতা ডা: তাসনিম জারা ও ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক ড. আসিফ সালেহ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।