অভিজ্ঞ শিক্ষক নেই, ৩০ কোটি টাকার ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়নি শিক্ষার্থী!

খাদেমুল বাবুল, জামালপুর
Printed Edition

ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যেখানে পড়াশোনা করে তৈরি হন প্যাথলজিস্ট, রেডিওগ্রাফারসহ বিভিন্ন দক্ষ স্বাস্থ্য পরীক্ষক। এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পেয়ে থাকেন। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত দেশে বর্তমানে সরকারি আইএইচটি রয়েছে ২৩টি। এরই অংশ হিসেবে ২০১৬ সালের দিকে জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলার ধর্মকুড়া এলাকায় প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি।

বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা বলে এ প্রতিষ্ঠানে একের পর এক ইমারত নির্মাণ করা হয়। একাডেমিক ভবন, ছাত্রাবাস, ছাত্রীনিবাস, শিক্ষক নিবাস ও অধ্যক্ষের বাসভবনসহ নান্দনিক অবকাঠামো গড়ে তোলা হলেও প্রকৃত শিক্ষাকার্যে ন্যূনতম অগ্রগতি হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তাদের দাবি- নির্মাণকাজের নামে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করা হলেও শিক্ষার মানোন্নয়নে কাক্সিক্ষত উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

প্রতিষ্ঠানটি স্থাপনের ১০ বছরেও পর্যাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়নি। বর্তমানে অধ্যক্ষসহ মাত্র তিনজন শিক্ষক ও ১২ জন অতিথি শিক্ষক দিয়ে প্রায় সাত শতাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ- এসব শিক্ষক চিকিৎসা শিক্ষার ক্ষেত্রে যথাযথ যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা না থাকায় শিক্ষার গুণগত মান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে এখান থেকে পড়াশোনা করে দেশের স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা শিক্ষার্থী তৈরি হচ্ছে না। ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম শুরু হলেও চলতি ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের নির্দেশে জামালপুর ইনস্টিটিউটসহ দেশের মোট আটটি আইএইচটিতে এবার শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত রাখা হয়েছে। এতে বিশাল ক্যাম্পাস ও কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবনগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন স্থানীয় সচেতন মহল। স্থানীয় আমজাদ হোসেন বলেন, নির্মাণকাজের নামে বিপুল অর্থ লুটপাট করা হয়েছে। শিক্ষাকার্যক্রম গড়ে তোলার দিকে রাষ্ট্রের মনোযোগ ছিল না। আরেক স্থানীয় বাসিন্দা ফাইজুল্লাহ বলেন, প্রতিষ্ঠার সময় আশা ছিল ইসলামপুর উপজেলার শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন দিগন্তের সূচনা হবে, কিন্তু বাস্তবে সেই আশা পূরণ হয়নি। এ বিষয়ে জামালপুর আইএইচটির অধ্যক্ষ ডা: মজিবুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের নির্দেশ অনুযায়ী এ বছর জামালপুরসহ আটটি ইনস্টিটিউটে ছাত্রছাত্রী ভর্তি না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত কথা বলতে রাজি হননি তিনি।

অন্য দিকে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসাশিক্ষা) অধ্যাপক ডা: রুবীনা ইয়াসমিনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর ব্যস্ততার অজুহাতে তিনি ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। পরে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও ফোন রিসিভ করেননি।