ঘিওরে বিলের পানিতে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের পলো বাইচ

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)
Printed Edition
ঘিওরে বিলের পানিতে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের পলো বাইচ
ঘিওরে বিলের পানিতে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের পলো বাইচ

আব্দুর রাজ্জাক ঘিওর (মানিকগঞ্জ)

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার পয়লা ইউনিয়নের বাসুদেববাড়ী সংলগ্ন শ্যামপুর বৃহত্তর বিলে অনুষ্ঠিত হয়েছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী সম্মিলিত মাছ শিকার উৎসব ‘পলো বাইচ’। গত বুধবার ভোর থেকেই বিলজুড়ে জড়ো হন হাজারো মৎস্যশিকারি ও দর্শনার্থী। শীতের শুরুর আভাসে বর্ষার পানি নামার সাথে সাথে এই ঐতিহ্যবাহী আয়োজনকে ঘিরে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের আমেজ।

আয়োজকরা জানান, দীর্ঘ দিন ধরে পয়লা, বাসুদেববাড়ী, শ্যামপুরসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষ নিজেদের উদ্যোগে এ আয়োজন করে আসছেন। সপ্তাহখানেক আগে থেকেই বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রচারণার ফলে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এক হাজারেরও বেশি পেশাদার ও সৌখিন শিকারি পলো, ঝাঁকি জাল, টানা জালসহ দেশীয় শিকারি উপকরণ নিয়ে অংশ নেন।

সকাল গড়াতেই দলবদ্ধ শিকারিরা পানিতে নামলে মুহূর্তেই বিলজুড়ে সৃষ্টি হয় এক উৎসবমুখর পরিবেশ। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে প্রবীণ পর্যন্ত সবাই মেতে ওঠেন গ্রামীণ এই মিলনমেলায়। দর্শনার্থীরাও হয়ে ওঠেন ঐতিহ্যের রঙে রঙিন।

উৎসবে ধরা পড়ে বোয়াল, গজার, শোল, ট্যাংরা, পুঁটি, মাগুরসহ নানা জাতের দেশী মাছ। শিকারিদের মুখে মুখে তাই ছিল আনন্দ আর সাফল্যের গল্প।

শিবালয় থেকে আসা মৎস্যশিকারি সুরেশ রায় বলেন, ‘পলো বাইচ আমাদের বাপ-দাদার আমলের ঐতিহ্য। খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ায় এ ধরনের আয়োজন এখন বিরল। তাই বছরের এই একদিনের আনন্দের অপেক্ষায় থাকি।’

ঘিওরের তরুণ অংশগ্রহণকারী ইশতিয়াক জানান, ‘দু’টি শোল আর একটি ছোট বোয়াল ধরেছি। নতুন প্রজন্ম যেন এই ঐতিহ্য ভুলে না যায়, তাই এমন আয়োজন খুব দরকার।’

দর্শনার্থী কলেজশিক্ষার্থী সাদিয়া, মুদি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলামসহ অনেকে বলেন, ‘এত মানুষের একসাথে মাছ ধরা দেখাটা দারুণ অভিজ্ঞতা। পরিবেশটা আরো চমৎকার।’

আয়োজকদের পক্ষ থেকে প্রবীণ শামছ উদ্দিন মাতব্বর বলেন, ‘পলো বাইচকে ঘিরে পুরো এলাকায় উৎসবের আবহ বিরাজ করে। এটি শুধু মাছ ধরা নয়, গ্রামীণ সম্প্রীতি ও সামাজিক বন্ধনের এক অপূর্ব প্রকাশ।’