ভারতের পশ্চিমবাংলার সিনিয়র সাংবাদিক রক্তিম দাস বলেছেন, বাংলাদেশে যত দ্রুত নির্বাচন হবে তত দ্রুতই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তিনি বলেন, দু’দেশের মধ্যে একটা ডেমোক্র্যাটিক সম্পর্ক না হলে বাণিজ্যও এগোবে না। রক্তিম দাস কলকাতার দৈনিক যুগশঙ্খে প্রধান প্রতিবেদক হিসেবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হলে যে দল ক্ষমতায় থাকে তার বিরোধীরা বরাবরই ভারতের কলকাতাকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বেছে নেয় এবং এবারো তাই হয়েছে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের দায়ভার কেন ভারত নেবে এমন প্রশ্ন তুলে ভারতের এই সিনিয়র সাংবাদিক বলেন, বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া মানুষকে ঠেকাতেই ভিসা দেয়া বন্ধ করা হয়েছে।
টেলিফোনে নয়া দিগন্তকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে রক্তিম দাস এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারের সংক্ষেপিত অংশ পাঠকদের জন্য তুলে দেয়া হলো :
নয়া দিগন্ত : জুলাই আন্দোলনের এক বছর হয়ে গেল, এখন বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে?
রক্তিম দাস : পশ্চিমবাংলার মানুষ বা কলকাতার মানুষ বিষয়টা ভালোভাবে নিচ্ছে না, এটুকু বলতে পারি।
নয়া দিগন্ত : এর কারণ কী?
রক্তিম দাস : কারণ একটাই, যে কথাগুলো বলে জুলাই আন্দোলন হয়েছিল তার কোনো রিঅ্যাকশন সমাজের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশে ছিনতাই, ডাকাতি, রাহাজানি, সংখ্যালঘু নির্যাতন, বিরোধী দলের লোকের ওপর নির্যাতন এগুলোতো সুষ্ঠু গণতন্ত্রের বিষয় নয়। আর দ্বিতীয়ত নির্বাচনটা তারা দিচ্ছেন না, তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দেয়ার কথা ছিল, এটা দিচ্ছে না, এগুলো নিয়ে এখানকার মানুষ ব্যাপারটাকে ভালোভাবে নিচ্ছে না।
নয়া দিগন্ত : দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা তো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
রক্তিম দাস : হ্যাঁ সবই হচ্ছে। কারণ একটা ডেমোক্র্যাটিক কাঠামো না থাকলে কার সাথে ব্যবসা করবেন। দু’দেশের মধ্যে একটা ডেমোক্র্যাটিক পরিবেশ না থাকলে আপনি কার সাথে ব্যবসা করবেন। তাই না? এখানে যারা ওদেশের ব্যবসায়ীর সাথে কাজ করত তাদের অনেক ব্যবসায়ী এখন জেলে রয়েছে। আপনাদের ব্যবসায়ীদের সাথে রাজনৈতিক দলের একটা সম্পৃক্ততা রয়েছে, যেটা আমাদের এখানে সেভাবে নেই। আপনাদের ওখানে আওয়ামী লীগ বা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে ব্যবসায়ীদের সম্পর্ক ছিল যারা বাংলাদেশের বর্তমান রেজিমের বিরোধী ছিল তাদের অনেকে জেলে রয়েছে। তাদের অনেকের সাথে এখান থেকে ব্যবসায়ীরা কনটাক্ট করতে পারছে না, যার ফলে ব্যবসা যেগুলো ছিল সেগুলো বন্ধ হচ্ছে। উপরন্তু সরকারি যে বিষয়গুলো আছে সেগুলো সরকারি নীতির কারণে হচ্ছে।
নয়া দিগন্ত : দুই দেশের সরকারের নীতি কি ব্যবসার বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে? যেমন ভারতীয় ভিসা না দেয়াটা।
রক্তিম দাস : না না, ভিসা না দেয়ার ব্যাপারটা তো ইচ্ছে করেই বন্ধ করা হয়েছে। কারণ বাংলাদেশে যেকোনো একটা ঘটনা ঘটলে যে পরিমাণ বাংলাদেশী ভারতে চলে আসে, আপনি দেখবেন যখন রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়, এটা কি বিএনপি, কি আওয়ামী লীগ যারাই ক্ষমতায় থাকে তার অপনেন্ট এখানে চলে আসে। প্রত্যেকবারই তাই হয়। এখানে এসে তারা কলকাতা বা পশ্চিম বাংলাটাকে সহজ শেলটার বলে মনে করে। এখান থেকে বিভিন্ন ভাবে পাসপোর্ট বানিয়ে তারা বিদেশে চলে যায়, সেখানে গিয়ে তারা আকাম করে ধরা পড়ে তখন ইন্ডিয়ান পাসপোর্ট বলে তাদেরকে ইয়ে করা হয়।
নয়া দিগন্ত : এবারো আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী ভারতে পালিয়ে গেছে।
রক্তিম দাস : হ্যাঁ এবারো হয়েছে। তাদের যথাসম্ভব আটকানোর চেষ্টা করা হয়েছে, তা না হলে সব লোক চলে আসত।
নয়া দিগন্ত : তারপরও তো আওয়ামী লীগের কয়েক হাজার নেতাকর্মী গিয়েছে, সমস্যাটা কী হচ্ছে?
রক্তিম দাস : হ্যাঁ আছেতো। আমাদের এখানে তো প্রচুর এরকম ধরা পড়ছে ।
নয়া দিগন্ত : আপনাদের সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে এ ব্যাপারটা কী ধরনের সমস্যা তৈরি করছে?
রক্তিম দাস : একটা জিনিস ভাবুন, আপনার দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির দায়ভার কেন আমাদের নিতে হবে? আমার দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের দায়ভার কি আপনার দেশ নেবে। নেবে না। অবশ্যই এটা আপনার দেশের ব্যাপার। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন বাংলাদেশের মানুষ কাকে কিভাবে ক্ষমতায় আনবে এটা তাদের ইচ্ছা। তারা যদি মনে করে জুলাই বিপ্লবীরা সঠিক, আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট সেটা তাদের ইচ্ছা। তারপর তারা ক্ষমতায় আসার পর পুরো দোষটা ইন্ডিয়ার ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। তারা যে কথাগুলো বলেছে এতে কলকাতার মানুষ ক্ষুব্ধ। চার দিনের মধ্যে কলকাতা দখল করবে, এগুলো তো অ্যালাউ করা হয়েছে, না?
নয়া দিগন্ত : বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে তো শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হয়েছে।
রক্তিম দাস : না না, শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হয়েছে ঠিক আছে কিন্তু শেখ হাসিনা তো এখানে আশ্রয়ে এসেছেন। তিনি এখানে আশ্রয় নিয়েছেন। ফেরত দেয়ার কথা তো পরে। আগে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কী ভূমিকা ছিল, খোদ মুহাম্মদ ইউনূস চায়নায় গিয়ে কী বলেছিলেন? আপনাদের একজন প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তা আমাদের উত্তর পূর্বাঞ্চল দখল করার ডাক দিয়েছিলেন। কলকাতা দখলের ডাক দিয়েছিলেন।
নয়া দিগন্ত : এই ধরনের কথাবার্তাতো দুই দিক থেকেই আছে, যেমন চিকেন নেক, ফেনীকে আলাদা করে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করে নেয়ার কথা তো আপনাদের ওখান থেকে বলা হয়েছে।
রক্তিম দাস : না, না। প্রথম আওয়াজতো ওই দিক থেকে এসেছে। ওইটা হওয়ার পর এই আওয়াজটা এসেছে। একটা কথা মনে রাখবেন। বন্ধু পরিবর্তন করা যায় কিন্তু প্রতিবেশীকে চেঞ্জ করা যায় না।
নয়া দিগন্ত : হ্যাঁ, এটাতো দুই দেশের জন্যই সত্যি। তাই না?
রক্তিম দাস : আপনার ওখানে অস্থিরতা আমার এখানে অস্থিরতা তৈরি করে।
নয়া দিগন্ত : ঠিক, তাহলে কিভাবে দুই দেশের স্বার্থ অক্ষুণœ রেখে আগানো যায়?
রক্তিম দাস : স্বার্থ অক্ষুণœ রাখার প্রক্রিয়া একটাই- দ্রুত ইলেকশনে যাওয়া। একটা গভর্নমেন্ট আসুক সেইটা বিএনপি আসুক, জামায়াত আসুক, এক্স ওয়াই জেড যেই আসুক। একটা গভর্নমেন্ট আসলে তার অনেক দায়বদ্ধতা থাকে। জাতীয়ভাবে দায়বদ্ধতা থাকে, আন্তর্জাতিকভাবেও দায়বদ্ধতা থাকে। সেখানে সে অনেক কিছু করতে পারে না। এখানে তো কারো কোনো দায়বদ্ধতা নেই।
নয়া দিগন্ত : অনেকে বলেন বা বরাবরই দেখা গেছে যে, বাংলাদেশ ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোনো বিশেষ দলের প্রতি ভারতের সরকার প্রাধান্য দেয়। ফলে যেটা দুই দেশের জনগণের মধ্যে হওয়ার প্রয়োজন ছিল, তা গড়ে ওঠেনি।
রক্তিম দাস : সে কথা যদি বলেন, তাহলে তো আপনাকে আমি এ কথা বলব, যখন বলা হয়েছিল যে কংগ্রেসের সাথে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক এবং মোদি সরকার ক্ষমতায় আসলে বিএনপির সাথে সম্পর্ক হবে সেটা কখনো হয়েছে? এটাতো হয়নি। সরকারের সাথে সরকারের সম্পর্ক হয়েছে।
নয়া দিগন্ত : দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক হলে তো তা আরো শক্তিশালী হতো না?
রক্তিম দাস : দুই দেশের জনগণের মধ্যে তো সম্পর্ক আছেই। এত কিছুর পরও তো ভারত সরকার যেসব জিনিস পাঠানোর তা পাঠাচ্ছে। তাহলে তো সবকিছু বন্ধ করে দেয়া উচিত ছিল।
নয়া দিগন্ত : আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে দেখলাম যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর যে শুল্ক বাড়িয়েছে তাতে বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগ এলে দুই দেশই লাভবান হতে পারে।
রক্তিম দাস : সেটাতো আনন্দবাজারের বক্তব্য। আনন্দবাজার তার মত করে দেখে। আনন্দবাজার ন্যাশনাল পলিটিক্সও তার একটা নিদিষ্ট রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখে। আমার মনে হয় না এভাবে কিছু হবে। কারণ ট্রাম্পকে কখনো বিশ^াস করা যায় না। আজকে আপনাকে ২৫ শতাংশ শুল্ক দিয়েছে তো কালকে আপনাকে আবার ৬০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে দেবে।
নয়া দিগন্ত : চুক্তি করেও দেখা গেছে চুক্তি থেকে সরে এলেন।
রক্তিম দাস : হ্যাঁ, ট্রাম্পকে কখনো বিশ্বাস করা যায় না।
নয়া দিগন্ত : বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগের সুযোগ কি আছে?
রক্তিম দাস : যতক্ষণ পর্যন্ত পরিস্থিতি ঠিক না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত কে বিনিয়োগ করতে যাবে। আপনি তো অস্বীকার করতে পারেন না যে, আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট কি ফ্যাসিস্ট না সেটা আপনার দেশের জনগণ ঠিক করবে- এক নম্বর। দুই নম্বর হলো যে, আওয়ামী লীগের আমলে শান্তিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আর আজকের শান্তি শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এক নয়।
নয়া দিগন্ত : আওয়ামী লীগের আমলে তো অনেক মানুষ মারা গেছে, গুম হয়েছে, বাকস্বাধীনতা বলে কিছু ছিল না।
রক্তিম দাস : হ্যাঁ সব মারা গেছে। সেটাকে জাস্টিফায়েড করে তো আজকেরটা করতে পারেন না।
নয়া দিগন্ত : ভোটাধিকারও তো ছিল না।
রক্তিম দাস : ঠিক, মানছি তো। আওয়ামী লীগের আমলে ভোটাধিকার ছিল না আওয়ামী লীগতো একটা ফ্যাসিস্ট শক্তি ছিল। তাকে সরিয়ে দিয়ে যখন একটা ইন্টেরিম গভর্নমেন্ট এসেছে সে কী করবে? তার প্রথম কাজ হবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা, সেটা কি ঠিক হয়েছে? সেটাতো বাংলাদেশে হয়নি।
নয়া দিগন্ত : সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অন্তত অনেক ভালো আছে।
রক্তিম দাস : আপনার কি মনে হয়। আগের চেয়ে ভালো আছে? সরকারতো সরকারের মতো করে বলবেই। কোনো সরকার সে যে সরকারই হোক ফ্যাসিস্ট হোক আর অফ্যাসিস্ট হোক, সে তার শাসন আমলকে সর্বোচ্চ শাসন আমল বলবে। সেটা সে বলছে। কিন্তু বাস্তবিক রিপোর্ট কী বলছে, মানবাধিকার কমিশন কী বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কী বলছে, ইউনাইটেড ন্যাশন কী বলছে? প্রথম কথা হচ্ছে আপনার দেশে সুষ্ঠু একটা গণতান্ত্রিক নির্বাচন খুব দরকার এবং সেটা সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে। আওয়ামী লীগ যদি ফ্যাসিস্ট হয় আপনি আওয়ামী লীগকে তাড়িয়েছেন খুব ভালো কথা, জুলাই আন্দোলনকারী কতজন সারা বাংলাদেশে? ধরুন, কুড়ি লাখ লোক তাড়িয়েছে। বাকি সবার মতামততো নিতে হবে। তাহলে ভোটে যেতে হবে। সব রাজনৈতিক দলকে ভোটে অংশগ্রহণ করতে দিতে হবে। একটা উদাহরণ দেই, ১৯৭৭ সালে ইন্দিরা গান্ধী ভারতে জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন, তারপর ইলেকশনে কংগ্রেসকে সবাই প্রত্যাখ্যান করেছিল। ইন্দিরা গান্ধীকে আবার ৫-৬ বছর পরে ফিরে আসতে হয়েছিল। সে জন্য আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দলকে সুযোগ দেয়া উচিত ভোটে। মানুষ ঠিক করবে যে কারা ফ্যাসিস্ট। আমি আপনি বলে দিলে তো ফ্যাসিস্ট ঠিক হয়ে যায় না। যেহেতু বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশ, সংবিধান আছে, সংবিধান অনুযায়ী ভোট হবে এবং তার মধ্যে দিয়ে মানুষ ঠিক করবে কে ফ্যাসিস্ট।
নয়া দিগন্ত : বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক ভবিষ্যৎটা কেমন দেখেন আপনারা।
রক্তিম দাস : নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সরকার না আসা পর্যন্ত বাংলাদেশ কোন দিকে যাবে বলা সম্ভব নয়। কারণ ইন্টেরিম সরকার একটা আপৎকালীন ব্যবস্থা। গোটা ভারতবর্ষ চায় শেখ হাসিনার আমলের চেয়ে আরো ভালো সম্পর্ক, যেন বলা হয় শেখ হাসিনার আমলে ভারতের সাথে সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে তার থেকেও ভালো সম্পর্ক করার দায়ভার ইউনূস সরকারের আছে। সেটা ইউনূস সরকার ইচ্ছে করলেই পারে।
নয়া দিগন্ত : সম্পর্কতো দুই দেশের তরফ থেকেই আগাতে হয়।
রক্তিম দাস : অবশ্যই। প্রথমত তাদের থেকেই আগাতে হবে। ভারত তো কখনো বাংলাদেশের বিরোধিতা করে কোনো কথা বলে নাই। ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ইউনাইটেড ন্যাশনে যেভাবে কথা বলেছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তেমনটি কি বলেছে? পাশের দেশ থাকলে তো মানুষ আসবেই। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রতিটা নির্বাচনে ভারত কেন আসবে সামনে? আমাদের নির্বাচনে কি বাংলাদেশ আসে। নেপালেও তো নির্বাচন হয় সেখানে কি ভারত আসে। শ্রীলঙ্কায় নির্বাচন হয় সেখনে কি ভারত আসে।
নয়া দিগন্ত : অতীতে তো এমন উদাহরণ রয়েছে যে, সুজাতা সিং ঢাকায় এসে বলেছেন রাজনৈতিক দলগুলোকে কাকে ভোট দিতে হবে।
রক্তিম দাস : আমি এখানে উদাহরণ দেই। আপনারাই তো ডেকে নিয়ে আসেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে জ্ঞান শোনেন। মালদ্বীপের সাথে ভারতের সম্পর্ক দেখেন কোথায় পৌঁছে গেছে। শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান কারো স্বাধীনতা আন্দোলনে ভারতের অংশগ্রহণ ছিল না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ভারতের অংশগ্রহণ ছিল। তার এক বছর পর কেন ভারত বাংলাদেশের মধ্যে পাসপোর্ট ভিসা চালু হলো। নেপাল যেতে তো আমাদের কোনো ভিসা লাগে না, নেপালের লোকও তো ভারতে এসে চাকরি করে। ভুটানের লোকও চাকরি করে, আমরাও তো যাই ভুটানে। শ্রীলঙ্কাও তাই। তাহলে বাংলাদেশের সাথে ভারতের কী এমন বিষয় যে যারা একসাথে লড়াই করল তাদের বেলায় কেন ভিসা লাগবে। এর উত্তর খুঁজতে হবে। কেন আমাকে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া লাগাতে হবে। সুজাতা সিং ঢাকায় গিয়ে কী বলেছিলেন তার কোনো ডকুমেন্ট আছে। আমিও তো শুনেছিলাম মোদি সরকার বিএনপিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসবে। নির্বাচন যত দ্রুত হবে ততই দ্রুত বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক ভালো হবে।
নয়া দিগন্ত : আঞ্চলিক সহযোগিতা হিসেবে সার্ককে সক্রিয় করার ক্ষেত্রে বরাবরই ভারতের কোনো সহায়তা পাওয়া যায় না।
রক্তিম দাস : পাকিস্তানের সাথে আমরা কোন কিছু করব না। এগুলো কি মেনে নেয়া যায় যে, ইউনূসের আমলে পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস প্রেস ক্লাবে পালন করা হবে, জিন্নাহর জন্মদিন, মৃত্যুদিন পালন করা হবে, বলা হবে জিন্নাহ জাতির পিতা। এগুলোতো মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী। আমি আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধের নয়, সামগ্রিক মুক্তিযুদ্ধের কথা বলেছি। পাকিস্তানকে নিয়ে কোনো আঞ্চলিক সহযোগিতা নয়। একটা অসুস্থ দেশ নিয়ে কোনো আঞ্চলিক সহযোগিতা হতে পারে না।