আজ ফিরছেন তারেক রহমান

দেড়যুগের নির্বাসন কাটিয়ে আজ দেশে ফিরছেন বিএনপির চলমান রাজনীতির মধ্যমনি, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাকে বহনকারী ফ্লাইটটি বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে।

মঈন উদ্দিন খান
Printed Edition

  • দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান
  • ৩০০ ফিটে হবে জনসমুদ্র
  • মায়ের কাছে যাওয়ার পথে দেবেন সংক্ষিপ্ত বক্তব্য
  • শনিবার যাবেন হাদির কবর জিয়ারতে

লন্ডনে দেড়যুগের নির্বাসন কাটিয়ে আজ দেশে ফিরছেন বিএনপির চলমান রাজনীতির মধ্যমনি, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাকে বহনকারী ফ্লাইটটি বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে। রিপোর্ট লেখার সময় তিনি স্ত্রী ও কন্যাসহ হিথ্রো বিমানবন্দর ত্যাগ করেছেন।

দলটির স্থায়ী কমিটি তারেক রহমানকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করেছে। তার সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। বিমানবন্দরে তারেককে স্বাগত জানাবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। এরপর রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকায়, লাখো নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেবেন তিনি। একই সাথে দেশে ফিরতে পেরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেন।

তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন রাজনৈতিক অঙ্গন, দলের নেতাকর্মী-সমর্থক এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ, কৌতূহল ও আবেগের সঞ্চার করেছে। এটি কেবল একজন নেতার দেশে ফেরা নয়, বরং দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ জনসমাগমের সম্ভাবনা বহন করছে।

তারেকের সাথে একই ফ্লাইটে ফিরছেন তার সহধর্মিণী ডা: জোবাইদা রহমান এবং কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমান, যিনি বাবার সাথে দেড় যুগ নির্বাসন কাটিয়েছেন। রাজনৈতিক উপদেষ্টা মাহদী আমিন জানিয়েছেন, দেশে নেমেই তারেকের প্রধান অগ্রাধিকার হবে চিকিৎসাধীন তার গুরুতর অসুস্থ মা, বেগম খালেদা জিয়াকে দেখা। তবে ৩০০ ফিট এলাকায় জনগণের প্রত্যাশার প্রতি সম্মান জানিয়ে অতি সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেবেন তিনি।

মাহদী আমিন বলেন, ৩০০ ফিটের অনুষ্ঠানটি কোনো জনসভা নয়, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানও নয়। এটি শুধু দেশবাসীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং দেশনেত্রীসহ দেশের কল্যাণ কামনায় দোয়া অনুষ্ঠানের একটি সংক্ষিপ্ত কর্মসূচি। অনুষ্ঠানে একমাত্র বক্তা হবেন তারেক রহমান।

জনদুর্ভোগ কমাতে রাজধানীজুড়ে ২০টি মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে চিকিৎসক, প্যারামেডিক, ওষুধপত্র ও অ্যাম্বুলেন্স থাকবে। এ ছাড়া ৩০০ ফিটের কাছাকাছি ৬ শয্যার অস্থায়ী ফিল্ড হাসপাতালের ব্যবস্থা করা হয়েছে, এর সাথে আইসিইউ সুবিধাসম্পন্ন অ্যাম্বুলেন্স সংযুক্ত। বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ, মোবাইল টয়লেট ও কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবক সার্বক্ষণিক দায়িত্বে থাকবেন। যানজট এড়াতে প্রধান পয়েন্টে আলাদা বাস পার্কিং ও হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে।

রাজনৈতিক গুরুত্ব : বহু বছর পর তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তনকে অনেকেই দেখছেন জনগণের ঐক্য সৃষ্টি এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক দেশ প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে।

তারেক রহমান ২০০৮ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান। দীর্ঘ সময় ফ্যাসিবাদী সরকারের নানা মামলা মোকাবেলা করতে হয়েছে তাকে। ৫ আগস্ট ২০২৪ গণ-অভ্যুত্থানের পর ধীরে ধীরে মামলা থেকে মুক্তি পান তিনি। এর পর থেকেই দেশে ফেরার প্রহর গুনছিলেন সমর্থকরা। আজ অবশেষে সেই দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটছে।

স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘ ১৭ বছরের রাজনৈতিক নির্বাসনের পর বুধবার মধ্যরাতে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-ফ্লাইটে দেশে ফিরবেন বলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কমিটির আহ্বায়ক সালাহউদ্দিন আহমদ ঢাকার গুলশানে সংবাদ সম্মেলনে নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ঢাকায় পৌঁছানোর পর তিনি সরাসরি সড়ক পথে এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন। এ পথে ৩৬ জুলাই এক্সপ্রেসওয়েতে বিএনপির পক্ষ থেকে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এটি কোনো রাজনৈতিক জনসভা নয়, কেবল দেশবাসীর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন এবং মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করা হবে।

তারেক রহমানের কর্মসূচি পরের দিনও গুরুত্বপূর্ণ : জুমার নামাজের পর শেরেবাংলানগরে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত এবং সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। এ ছাড়া ভোটার হিসেবে প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমও সম্পন্ন করবেন। তবে কিছু কর্মসূচি চূড়ান্ত হয়নি এবং সময়মতো সংবাদমাধ্যমে জানানো হবে।

নিরাপত্তা ও জনসংঘর্ষ পরিহার : বিএনপির প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা এ কে এম সাইফুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন, দলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হবে। এ ছাড়া সরকারের তরফ থেকেও সর্বোচ্চ সহায়তা থাকবে।

সালাহউদ্দিন আহমদ আগেই জনগণের জন্য সম্ভাব্য কষ্ট ও অসুবিধার জন্য ‘অগ্রিম ক্ষমা’ প্রার্থনা করেছেন। তিনি জানান, তারেক রহমান কোনো কর্মসূচি সমর্থন করেন না, যা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করতে পারে। তাই সরকারি ছুটির দিনকে নির্বাচিত করেছেন, যাতে জনসাধারণের সমস্যার মাত্রা কম থাকে।

রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট : রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কেবল ব্যক্তিগত বা পারিবারিক আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি বিএনপির জন্য একটি নতুন রাজনৈতিক মুহূর্ত এবং দলের পুনর্গঠনের একটি কৌশলগত সূচনা। দীর্ঘ সময় বিদেশে থাকা নেতার প্রত্যাবর্তন দেশের রাজনৈতিক মেরুকরণ ও ক্ষমতার ভারসাম্যের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আগামী জাতীয় নির্বাচন ও রাজনৈতিক সমীকরণের জন্য এটি দিকনির্দেশক হতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তি ও সরকারি সংস্থার সহযোগিতা ছাড়া, এত বড় নেতৃবৃন্দের প্রত্যাবর্তন নির্বিঘ্নে করানো সম্ভব হতো না। এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্বচ্ছতা ও প্রশাসনিক সক্ষমতার একটি পরীক্ষাও বটে।

প্রথম ৩ দিনের কর্মসূচি

প্রথম দিন : বিমানবন্দরে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা অভ্যর্থনা জানাবেন। এরপর সড়ক পথে এভারকেয়ার হাসপাতাল যাবেন। ৩০০ ফিটে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও দোয়া করবেন। এরপর গুলশান অ্যাভিনিউতে ১৯৬ নম্বর বাসায় যাবেন।

দ্বিতীয় দিন (শুক্রবার) : জুমার পর শেরেবাংলানগরে জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত। এরপর সড়কপথে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।

তৃতীয় দিন (শনিবার) : নিজের ভোটার হিসেবে দায়িত্ব পালন, হাদির কবর জিয়ারত এবং পঙ্গু হাসপাতালে জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের দেখা।

নিরাপত্তা ও জনসেবা : চেয়ারপারসনের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, দলগত নিরাপত্তা ব্যবস্থা সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হবে। প্রধান ভিত্তি হলো নেতাকর্মী ও জনগণ।

সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন, সিলেট বিমানবন্দরে কোনো নেতাকর্মী ভিড় করবেন না। ঢাকায় পূর্বনির্ধারিত প্রস্তুতির মাধ্যমে অনুষ্ঠান পরিচালিত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কমিটির সদস্য মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল উপস্থিত ছিলেন।

রাজধানীর রাস্তা ও ব্যানার : রাজধানীর বড় সড়ক ও মোহনাগুলোতে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে ব্যানার টানানো হয়েছে। লেখা আছে:

* ‘লিডার আসছে’

* ‘তারেক রহমানের আগমন, গণতন্ত্রের জাগরণ’

* ‘সবার রাষ্ট্র বাংলাদেশ, সবার আগে বাংলাদেশ’

* ‘আজ একটাই সুর, একটাই গান, বাংলাদেশের প্রাণ তারেক রহমান’

* ‘তারেক রহমান আসছে, জাগছে আশা মনে-প্রাণে’

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শীর্ষ নেতা, ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলন ও ২৪ সালের ৫ আগস্টের ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের নেতা-নেত্রীদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

অফিস ও কার্যক্রম : দেশে ফিরে নিয়মিত গুলশান কার্যালয় থেকে অফিস করবেন। দোতলায় নতুন কক্ষ, কার্যালয়ের অন্যান্য তলায় দায়িত্বপ্রাপ্তদের বসার ব্যবস্থা ও গবেষণা সেল তৈরি করা হয়েছে।

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন বলেন, এই কার্যালয় থেকে নির্বাচনের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।