আমাদের চোখের সামনে ঘটে যাচ্ছে একটি নীরব বিপ্লব। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি দিন দিন আরো শক্তিশালী হয়ে উঠছে। এটি এখন আর শুধু কল্পগল্পের ফ্যান্টাসি নয়, বাস্তবে মানুষের প্রতিদ্বন্দ্বী। এআইয়ের কারণে মানুষ ভবিষ্যতে চাকরি হারাবে কিনা, তা নিয়ে রয়েছে নানান মত। কেউ কেউ মনে করেন, এআই মানুষের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং সহযোগী হবে। আবার অনেকের মতে, এআই অল্প দিনের মধ্যে এমন জায়গায় পৌঁছে যাবে যে, মানুষ চাকরি হারাতে বাধ্য হবে।
ওপেন এআইয়ের প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান মনে করেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) কর্মক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে। তার মতে, এ পরিবর্তনের প্রথম ধাক্কা আসবে গ্রাহকসেবা খাতে। গ্রাহকসেবার পর প্রোগ্রামাররাও এআইয়ের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন অনুষ্ঠান ‘দ্য টুকার কার্লসন শো’তে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, বর্তমানে ফোন বা কম্পিউটারের মাধ্যমে যে বিপুল গ্রাহকসেবা দেয়া হয়, তার একটি বড় অংশ শিগগিরই এআই আরো ভালোভাবে সম্পন্ন করবে। ফলে এ খাতের অনেক কর্মী চাকরি হারাবেন।’
অল্টম্যান বলেন, ‘ইতিহাস বলছে, গড়ে প্রতি ৭৫ বছরে চাকরির ধরনে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে, প্রায় অর্ধেক চাকরি নতুনভাবে রূপান্তরিত হয়। তবে আমার ধারণা, এবার পরিবর্তনটা অনেক দ্রুত ঘটবে। এক ধরনের আকস্মিক ভারসাম্য বদলের মতো।’ তবে এই পরিবর্তন মানে মানুষের সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি নয়। অল্টম্যানের মতে, কলসেন্টারের মতো খাতের কাঠামোয় দ্রুত পরিবর্তন আসবে, যদিও আগের ধারণা ছিল, মানুষ একসময় পুরোপুরি প্রতিস্থাপিত হবে। তবে অল্টম্যান মনে করেন, যেসব পেশায় মানুষের আবেগ, সহমর্মিতা ও প্রত্যক্ষ সংযোগ অপরিহার্য, সেসব জায়গায় মানুষকে সরানো সম্ভব নয়। নার্সিং তেমন একটি পেশা। তিনি বলেন, ‘এআই বা রোবট যতই উন্নত হোক না কেন, রোগী বা দুর্বল অবস্থায় থাকা কেউ শেষ পর্যন্ত মানুষের কাছ থেকেই আশ্বাস চাইবেন।’
অল্টম্যান বলেন, প্রতিদিন শতকোটি মানুষ তাদের তৈরি চ্যাটবট ব্যবহার করছেন। এ বাস্তবতা তার জন্য বাড়তি চাপের কারণ। এ বাস্তবতা আমাকে প্রচণ্ডভাবে দায়িত্বশীল করে তোলে। বড় নৈতিক সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে আমি তেমন ভয় পাই না, যদিও সেখানে ভুল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে আসল উদ্বেগ তৈরি করে ছোট ছোট সিদ্ধান্ত, যেগুলো বাস্তব জীবনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
গত বছর ওরাকল ঘোষণা দিয়েছিল, তারা গ্রাহকসেবার সবকিছু স্বয়ংক্রিয় করতে চায়। একইভাবে সেলসফোর্সের প্রধান নির্বাহী মার্ক বেনিওফ জানিয়েছেন, তাদের প্রতিষ্ঠানে ইতোমধ্যে চার হাজার গ্রাহকসেবাকর্মী কমানো হয়েছে। তবে এআইয়ের অগ্রগতির সম্ভাবনা নিয়েও অনেকে সংশয়ে আছেন। গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনারের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৭ সালের মধ্যে অর্ধেক প্রতিষ্ঠান আবারো গ্রাহকসেবা খাতে কর্মী কমানোর পরিকল্পনা থেকে সরে আসবে। ফলে সতর্কতার বার্তাটি এখন বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। চিকিৎসক এবং নার্সরা চাকরিতে নিরাপদ থাকলেও স্বাস্থ্যসেবার বিশাল প্রশাসনিক কর্মীবাহিনী এআইয়ের কাছে দ্রুত চাকরি হারাবে। মেডিকেল কোডার, ইন্স্যুরেন্স ক্লেইম প্রসেসর, ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের, রোগীর তথ্য প্রবেশ-এসব কাজ এআইয়ের সাহায্যে আরো দ্রুত করা যাবে।



