আসন সমঝোতার দ্বারপ্রান্তে জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা ৮ দল। আগামী ২-৩ দিনের মধ্যেই চূড়ান্ত হতে পারে দলগুলোর আসন সমঝোতা। এরপর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হবে।
ত্রায়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ইতোমধ্যে প্রার্থীরা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা শুরু করেছেন। জামায়াতে ইসলামী এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক আসনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছে। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরাও বেশকিছু আসনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তবে আন্দোলন করা ৮ দলের এখনো চূড়ান্ত আসন সমঝোতা হয়নি বলে জানা গেছে। বর্তমানে দলগুলো পারস্পরিক আলোচনায় ব্যস্ত রয়েছে। গত কয়েকদিনে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন নেতারা। আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে আসন সমঝোতা হতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
নেতারা জানিয়েছেন, ৩০০ আসনেই তাদের প্রার্থী থাকবে। প্রার্থী তালিকা ঠিক হলে দলগুলো যার যার মার্কা নিয়ে নির্বাচন করবেন। তবে এক আসনে ৮ দলের একজন মাত্র প্রার্থী থাকবেন। যাকে সব দলের ভোটাররা ভোট দিবেন। এর মধ্যে কোন দল কতটি আসনে লড়বেন তা নিয়ে মাঠ পর্যায়ে জরিপ সম্পন্ন করেছে দলগুলো। প্রার্থী ঠিক করার ক্ষেত্রে কোন আসনে কোন প্রার্থীকে দিলে তিনি বিজয়ী হয়ে আসতে পারবেন সেটিই প্রধান শর্ত হিসেবে ধরা হচ্ছে। তবে দলগলোর শীর্ষ নেতাদের পছন্দের জায়গার ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া হতে পারে। কয়েকটি দলের শীর্ষ নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি দলই বেশি করে আসনের চাহিদা জানিয়েছেন। তবে আলোচনার পর এর সমাধান হবে। সর্বোচ্চ ৮-১০টি আসন নিয়ে একটু সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তবে সব দলই সর্বোচ্চ ছাড় দেয়ার মানসিকতা রয়েছে। এজন্য শেষ পর্যন্ত কোনো ধরনের সমস্যা হবে না বলে তারা জানিয়েছেন। দলগুলোর সূত্রে জানা গেছে, ৮ দলের মধ্যে সবচেয়ে বড় দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সবচেয়ে বেশি আসনে প্রার্থী থাকবে। তাদের আসনসংখ্যা ২০০ বা এর অল্প কমবেশি হতে পারে। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী থাকতে পারে ৫০-৬০টি আসনে। খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আসন থাকতে পারে ১৫-২০টির মধ্যে। খেলাফত আন্দোলনের ৫-৬টি, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির ২-৩টি, জাগপার ২-৩টি এবং বিডিপির ১-২টি আসন থাকতে পারে।
খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী নয়া দিগন্তকে বলেন, আসন সমঝোতা নিয়ে আমাদের নিয়মিত আলোচনা চলছে। বড় দল হিসেবে জামায়াতের সবচেয়ে বেশি প্রার্থী থাকবে। এরপর পর্যায়ক্রমে দলগুলোর অবস্থানের ওপর প্রার্থীসংখ্যা নির্ধারিত হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে প্রার্থী বিজয়ী হতে পারবে কি না সেটিই হবে প্রধান বিবেচ্য বিষয়। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় নেতাদের এলাকাকেও প্রাধান্য দেয়া হবে। তবে সব দলেরই প্রার্থী থাকবে।
খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক আব্দুল জলিল বলেন, এখানে আসন সমঝোতা হবে। কোনো দলের নেতৃত্বে নয়, আমরা সবাই মিলে আলোচনা করে প্রার্থী ঠিক করছি। প্রার্থী জিততে পারবে কি না এটাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বেশি। তবে দলগুলোর অবস্থান বিবেচনা নিয়ে প্রার্থীসংখ্যা নির্ধারিত হবে। আগামী সপ্তাহেই চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা জানা যাবে।
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার বলেন, আমাদের দল টু দল আলোচনা চলছে। এরপর সামগ্রিক আলোচনা হবে। এরপরই প্রার্থী চূড়ান্ত হবে। আগামী সোম-মঙ্গলবারের মধ্যে প্রার্থী চূড়ান্ত হবে। সমঝোতার মাধ্যমে সবকিছু হচ্ছে। সবার মধ্যেই ছাড় দেয়ার মানসিকতা রয়েছে। ফলে কোনো সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।
সারা দেশে দোয়া আজ : ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও বিপ্লবী জুলাইযোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদির রূহের মাগফিরাত কামনায় আজ সারা দেশে দোয়া অনুষ্ঠান করবে জামায়াতে ইসলামী। দেশের জেলা-মহানগরী শাখা সংগঠনের প্রতি দলটির পক্ষ থেকে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়া আগামীকাল রোববার সকাল ১০টায় রাজধানী ঢাকার মগবাজারের আল-ফালাহ মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় সংগঠনের উদ্যোগে অনুরূপ দোয়া অনুষ্ঠান করা হবে।
গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংগঠনের দায়িত্বশীলদের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল, সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মা’ছুম, ড. হামিদুর রহমান আযাদ (সাবেক এমপি), মাওলানা আবদুল হালিম ও অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য আবদুর রব, সাইফুল আলম খান মিলন, মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আবদুর রহমান মুসা প্রমুখ।
বৈঠকে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও বিপ্লবী জুলাই যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদির লাশ গ্রহণ ও তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠানসহ করণীয় বিষয়ে আলোচনা করা হয়।



