বাসস
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, বিগত সরকারের সময় যারাই দেশে ছাত্র-জনতাকে গুম, খুন বা হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলেন, পর্যায়ক্রমে তাদের সবার বিচার করা হবে।
গতকাল দুপুরে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাতের সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, অঙ্গীকার নিয়ে এসেছিলাম যে বিচারের কাজ শুরু করব, আমরা সেই বিচারের কাজ শুরু করতে পেরেছি। যারা দেশের ছাত্র-জনতা হত্যা ও গুমের সাথে জড়িত ছিলেন, তাদের সবারই বিচার হবে।
উপদেষ্টা আরো বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনাসহ অনেকের বিচার কাজই ট্রাইব্যুনালে চলমান রয়েছে। পরবর্তীতে জনগণের ভোটে যে সরকার নির্বাচিত হবেন, তারা এ বিচার কাজকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
উপদেষ্টা আরো বলেন, আমার এলাকা রামগঞ্জ, তথা লক্ষ্মীপুরে মাদক নিরাময়কেন্দ্র, নার্সিং কলেজ স্থাপন, সদর হাসপাতাল উন্নীতকরণ ও শিক্ষা ব্যবস্থাসহ অনেকগুলো কমিশন সংস্কারের প্রস্তাবনা প্রস্তুত করেছে। খুব শিগগিরই রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে সংস্কার না করলেই নয়, নির্বাচনের আগে আমরা সেসব সংস্কার করতে চাই। শেখ হাসিনা যেসব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে, যে প্রতিষ্ঠানগুলো হাসিনাকে টিকিয়ে রেখেছিল- সেসব প্রতিষ্ঠানকে একই রকম রেখে আমরা নির্বাচন করতে পারি না।
তিনি বলেন, নির্বাচন করার আগে অবশ্যই হাসিনার দালালদের উৎখাত করে এবং খুনি হাসিনাসহ তার দোসরদের বিচার করে আমাদের নির্বাচনের দিকে এগোতে হবে।
উপদেষ্টা বলেন, আগামী সপ্তাহে ফ্যাসিস্ট, খুনি শেখ হাসিনার বিচার হবে এবং আমরা একটি রায় পাবো। এতে জুলাই শহীদদের পরিবার, যারা অবর্ণনীয় কষ্টের ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন, তাদের ব্যথা কিছুটা হলেও লাঘব হবে। সংস্কার কাজে আমরা অনেক দূর অগ্রসর হয়েছি। রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্য হয়ে জুলাই সনদে সই করেছেন- এটা বাংলাদেশের জন্য বড় একটি প্রাপ্তি। এর ভেতর দিয়ে বাংলাদেশ একটা নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করল।
তিনি বলেন, জুলাই সনদ ও সংস্কার কার্যক্রমের মাধ্যমে পরবর্তীতে যে নির্বাচিত সরকার আসবে, তারা যদি সংস্কার কাজগুলোকে যথাযথভাবে করতে পারে তাহলে যে নতুন বাংলাদেশ আমরা চেয়েছিলাম, সে রকম একটা দেশ দেখতে পাবো। যেখানে সবার ক্ষমতার ভারসাম্য থাকবে, বিচারে আইনের শাসন থাকবে, সুবিচার থাকবে। গুম খুন আর ফেরত আসবে না।
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে মাহফুজ আলম বলেন, আসুন, বাংলাদেশ-পন্থার মধ্য দিয়ে আমরা যারা ফ্যাসিবাদ-বিরোধী শক্তি আছি, ঐক্যবদ্ধ হই। সংস্কারগুলো করার জন্য সরকারকে সহযোগিতা করুন। প্রয়োজনে আমরা আবার লড়াই করব, শহীদদের পথ অনুসরণ করে আমরা শাহাদাতের পথ বেছে নেবো। শুধু আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট শাসন-ব্যবস্থা উৎখাত করে সন্তুষ্ট হলে চলবে না, বরং আওয়ামী লীগ ফ্যাসিজমের যত বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন প্রান্তে, প্রশাসনে, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে রয়ে গেছে, তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।
সভা শেষে তথ্য উপদেষ্টা রামগঞ্জের দরিদ্র কৃষকদের মাঝে কৃষি প্রণোদনা বিতরণ, জুলাই শহীদ পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ ও সাবেক এমপি ও প্রতিমন্ত্রী জিয়াউল হক জিয়ার ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম রবিন শীষের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন- এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-আহ্বায়ক মাহাবুব আলমসহ উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ ও নাগরিকরা।
এর আগে, সকালে উপদেষ্টা রামগঞ্জ পৌঁছালে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার ও পুলিশ সুপার মো: আকতার হোসেনসহ প্রশসানের কর্মকর্তারা। পরে উপদেষ্টাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।



