লালমনিরহাটে আখ চাষে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হয়েছে। এক সময় এ অঞ্চলে আখ চাষ তেমন জনপ্রিয় না হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কৃষকরা লাভজনক এ ফসলের দিকে ঝুঁকছেন। বাজারে চাহিদা ও ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকদের মুখে ফুটছে হাসি। কৃষি বিভাগ বলছে, আখ চাষ আরো সম্প্রসারণে সরকারি উদ্যোগ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি খরিপ মৌসুমে জেলায় প্রায় ৭০০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক হাজার হেক্টর। বিশেষ করে উঁচু জমি ও বেলে-দোয়াশ মাটি আখ চাষের জন্য অনুকূল হওয়ায় কৃষকরা ধানসহ অন্যান্য ফসলের পরিবর্তে এখন আখ চাষে ঝুঁকছেন।
হাতীবান্ধা উপজেলার গোতামারী গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান আখ চাষে সাফল্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। দুই বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আখ চাষ শুরু করেন তিনি। গত বছর এক লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় তিন লাখ টাকার আখ বিক্রি করে ভালো লাভ করেন। চলতি মৌসুমেও তার জমিতে বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে প্রতিটি আখ ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিবিয়ে খাওয়ার পাশাপাশি গুড় তৈরির জন্যও এ অঞ্চলের আখ বেশ জনপ্রিয়।
আবদুল মান্নান জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর আখের ফলন বেশ ভালো হয়েছে। উৎপাদন খরচের তুলনায় দ্বিগুণ দাম পাচ্ছি। এতে আমরা উৎসাহিত হচ্ছি।
গোতামারী এলাকার আরেক কৃষক মিজানুর হোসেন বলেন, আগে শুধু ধানের আবাদ করতাম। ধানে লাভ নেই বললেই চলে। এখন আখের আবাদ করে দেখছি খরচ কম, লাভ বেশি। তাই আগামীতে আরো বেশি জমিতে আখ চাষের পরিকল্পনা করছি।
স্থানীয় আখ বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম জানান, বাজারে আখের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এলাকায় আখ তুললেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। গুড় তৈরির কারখানাগুলো থেকেও নিয়মিত চাহিদা আসছে।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমা ইয়াসমিন বলেন, আখ একটি অর্থকরী ফসল। এক সময় এ অঞ্চলে আখ চাষ প্রায় হারিয়েই গিয়েছিল। তবে গত দুই বছর ধরে আবারো আখ চাষের প্রবণতা বাড়ছে। বর্তমানে জেলার প্রতিটি উপজেলায় আখ চাষ হচ্ছে। কৃষকদের আরো উৎসাহিত করতে আমরা প্রশিক্ষণ ও সরকারি সহায়তা দেয়ার উদ্যোগ নিচ্ছি।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, আখ চাষ শুধু কৃষকদের আর্থিক সচ্ছলতাই বাড়াচ্ছে না, বরং স্থানীয় বাজার ও শিল্প কারখানায়ও সরবরাহ বৃদ্ধি করছে। এ কারণে আখ চাষ সম্প্রসারণে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে লালমনিরহাটে আখ হতে পারে প্রধান অর্থকরী ফসলের একটি।