ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কিশোরগঞ্জ-১ (হোসেনপুর-কিশোরগঞ্জ সদর) আসনে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া। হাটবাজার, রাস্তার মোড় ও অলিগলি ছেয়ে গেছে পোস্টার-ব্যানারে। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বত্রই আলোচনায় কে হচ্ছেন আসনের যোগ্য কাণ্ডারি।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে ভোটাধিকার বঞ্চিত সাধারণ মানুষের মধ্যেও এক ধরনের আকাক্সক্ষা ও উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে। কেননা এ আসনটি জেলার অন্যান্য আসনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ আসনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে অন্য আসনগুলোতে। ইতোমধ্যে বিএনপির ডজনখানেক মনোনয়নপ্রত্যাশী এবং জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী অধ্যাপক মোসাদ্দেক আলী ভূঁইয়া ভোটারদের মন জয়ে পথসভা, মিছিল ও মিটিংয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।
স্থানীয় নির্বাচন অফিসের তথ্যমতে, এবার কিশোরগঞ্জ -১ আসনে মোট ভোটার রয়েছেন ৫ লাখ ১৫ হাজার ৫১১ জন। তাদের মধ্যে ২ লাখ ৬১ হাজার ৪১৩ জন পুরুষ এবং ২ লাখ ৫৪ হাজার ৯৬ জন নারী ভোটার। কিশোরগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। পরে ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ডা: মো: ফজলুল করিম, ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো: ফজলুর রহমান, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির মো: আলমগীর হোসাইন এবং ১৯৯১ সালে বিএনপির মাওলানা আতাউর রহমান খান বিজয়ী হন। পরবর্তীতে একাধারে ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে সৈয়দ আশরাফের ছোট বোন ডা: জাকিয়া নূর লিপি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের সরব উপস্থিতি রাজনীতিতে ভিন্ন মাত্রা যুক্ত করেছে। তবে বর্তমানে হোসেনপুর উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রুপিংয়ের কারণে কোন্দল থাকলেও ৫ আগস্টের পরবর্তী রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামীর চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে।
কিশোরগঞ্জ-১ আসনে জামায়াতের একক প্রার্থী হলেন ক্লিন ইমেজের অধিকারী অধ্যাপক মোসাদ্দেক আলী ভূঁইয়া। বিপরীতে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জননেতা মির্জা আব্বাসের ছোট ভাই কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা মির্জা খোকন, জেলা বিএনপির সহসভাপতি মো: রেজাউল করিম খান চুন্নু, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো: মাজহারুল ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ভিপি খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল ও সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী ইসরাইল মিয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আ.ঈ.ম ওয়ালী উল্লা রব্বানী, অ্যাডভোকেট শরিফুল ইসলাম, মো: রুহুল হোসাইন, জেলা বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার মো: আতিকুর রহমান, হোসেনপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শিল্পপতি জহিরুল ইসলাম মবিন, ঢাবির জিয়াউর রহমান হলের সাবেক ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মনিরুল হক রাজনের নামও শোনা যাচ্ছে। এদিকে আ.ঈ.ম ওয়ালী উল্লাহ রব্বানী দীর্ঘদিন ধরে কিশোরগঞ্জের রাজনীতিতে অনুপস্থিত থাকলেও তার সমর্থকরা কিশোরগঞ্জ শহরের আশপাশে বড় ধরনের কয়েকটি শোডাউন করেছেন। একই কায়দায় নির্বাচনী মাঠে সরব রয়েছেন অপর নবীন প্রার্থী ব্যারিস্টার আতিকুর রহমানসহ আরো অনেকে।
অপরদিকে এ আসনে বেশ জোরে সোরে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন জামায়াতে ইসলামী ঘোষিত একক প্রার্থী অধ্যক্ষ মোসাদ্দেক আলী ভূঁইয়া। তিনি বিএনপির ১১ প্রার্থীর বিপরীতে একক প্রার্থী হিসেবে ভোটার ও জনগণের মন জয়ে সচেষ্টা রয়েছেন। এ ছাড়া গণ অধিকার পরিষদের সম্ভাব্য প্রার্থী হলেন দলটির কেন্দ্রীয় উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ, সিপিবির জেলা কমিটির সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট এনামুল হক, ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা মাওলানা ওবায়দুর রহমান নদভী, জাতীয় উলামা মাশায়েখ পরিষদের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: আজিজুর রহমান সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন।
জামায়াত প্রার্থী অধ্যাপক মোসাদ্দেক আলী বলেন, দল সুসংগঠিতভাবে নির্বাচনী মাঠে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় থাকার কারণে মাঠপর্যায়ে দলীয় গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। তার সাথে অধ্যাপক জয়নউদ্দিন, আমির আমিনুল ইসলাম, অধ্যাপক মহিবুল্লাহ ও অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম ফকির মতি মাঠে প্রচার চালাচ্ছেন।
এদিকে আলোচনায় রয়েছেন গণ অধিকার পরিষদের আবু হানিফ, সিপিবির সাবেক নেতা অ্যাডভোকেট এনামুল হক, ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা ওবায়দুর রহমান নদভী, জাতীয় উলামা মাশায়েখ পরিষদের মো: আজিজুর রহমান। তবে জাসদসহ অন্যান্য বাম দলগুলোর তেমন নির্বাচনী তৎপরতা চোখে পড়ছে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অনুপস্থিত থাকায় বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে। তবে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ থাকলে জয় তাদের দিকেই ঝুঁকে থাকবে বলে তারা মনে করছেন।