ফটিকছড়িতে জাতীয় নির্বাচনী হাওয়া

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ৫, জামায়াতের একক প্রার্থী

Printed Edition
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ৫, জামায়াতের একক প্রার্থী
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ৫, জামায়াতের একক প্রার্থী

আজগর আলী ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম)

আসন্ন ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ দিন দিন বেড়েই চলেছে। মাঠে এখন সরব বিএনপি, সক্রিয় জামায়াত। আর নেপথ্যে নড়াচড়া করছে নেজামে ইসলাম পার্টি। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে এই আসনে পাঁচজন মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও দলীয়ভাবে এখনো চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। অপরদিকে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একক প্রার্থী ঘোষণা করে ইতোমধ্যে মাঠে নেমে পড়েছে।

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সহ-সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও ২০১৮ সালের প্রার্থী কর্নেল (অব:) আজিমুল্লাহ বাহার চৌধুরী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার আলমগীর, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজী এবং চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সালাউদ্দিন। গত ১০ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরীর এক রেস্টুরেন্টে বিএনপির এই পাঁচ নেতাকে একই টেবিলে বৈঠকে বসতে দেখা যায়। মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবিটি ভাইরাল হয়। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মাহবুবে রহমান শামীম। জানা যায়, দলের দুঃসময়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যখন রাজপথের আন্দোলনে নামতে পারছিল না সে সময়ে পেশাজীবী ব্যানারে দলের পক্ষে অবদান রেখেছেন কাদের গণি চৌধুরী। এছাড়াও এলাকায় পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে। কর্নেল (অব:) আজিমুল্লাহ বাহার চৌধুরী তিনি বলেন, আমরা আলোচনা করেছি, দল যাকে প্রার্থী ঘোষণা করবে, অন্যরা তাকে সমর্থন জানিয়ে একসাথে মাঠে কাজ করবে। অন্যদিকে জামায়াতের ফটিকছড়ি আসনে চূড়ান্তভাবে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নুরুল আমিন। তিনি দলীয়ভাবে জোর প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠক ও গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র।

অতীত ভোটের ইতিহাস : চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনটি বরাবরই রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য আলহাজ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এ আসন থেকে এক লাখ ২৯ হাজার ৩৩৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী টানা দু’বার এমপি নির্বাচিত হন। তবে ২০২৪ সালের তথাকথিত ‘ডামি নির্বাচন’-এ আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও জোটগত সমীকরণে তরিকতের নজিবুল বশর বাদ পড়েন এবং সেবার নৌকা প্রতীকে এমপি হন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মরহুম রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির হয়ে কর্নেল (অব:) আজিমুল্লাহ বাহার চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনী প্রচারে তিনি আওয়ামী ও তরিকতপন্থীদের হামলায় রক্তাক্তও হন।

ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ঘাঁটি : ফটিকছড়িতে প্রায় ১৩৫টি কওমি মাদরাসা থাকায় এ আসনটি দীর্ঘ দিন ধরেই ধর্মভিত্তিক রাজনীতির এক শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। বিএনপি বরাবরই এখানে একটি শক্তিশালী ভোটব্যাংক ধরে রেখেছে। তবে এবার সেই ভোট ব্যাংকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী, যারা এরইমধ্যে একক প্রার্থী নিয়ে প্রচারণায় নেমেছে। এ ছাড়া মাঠে দেখা যাচ্ছে নেজামে ইসলাম পার্টি, চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন, আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত সমর্থিত দলগুলোকে।

অন্যদিকে, মাইজভাণ্ডার দরবারের অনুসারীদের ভোটব্যাংকও এখনো একটি প্রভাবশালী ফ্যাক্টর। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকলেও অতীতে তারা একাধিকবার এই আসনটি দখলে রেখেছিল। এখন তাদের ভোটব্যাংক কোন দিকে যাবে, তা নিয়েও চলছে নানা বিশ্লেষণ।

নতুন সমীকরণে ফটিকছড়ি : রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নতুন প্রেক্ষাপটে এবার ফটিকছড়িতে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। অন্যদিকে, জাতীয় পার্টি (এরশাদ), এনসিপি, গণ অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোটসহ ছোট ছোট দলগুলো এখনো তেমন আলোচনায় আসেনি।