ব্যাংকের ঋণখেলাপিরা বরাবরের মতো এবারো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। এ কারণে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক ঋণখেলাপিরা ঋণ নবায়নে ব্যাংকগুলোতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন। তবে, বিশেষ কৌশলে যাতে সুযোগ না পায় সে জন্য এবার ব্যাংকগুলোকে কঠোর নজরদারিতে রাখবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ অর্থাৎ ২০২৪ জানুয়ারির নির্বাচনে অনেক ঋণখেলাপি নানা কৌশলে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে ওই সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছিল। আগে সাধারণত, কোনো প্রার্থী ঋণখেলাপি কী না তা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমোদন নেয়া হতো। নির্বাচন কমিশন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদের তালিকা দেয়া হতো। বাংলাদেশ ব্যাংক তার কেন্দ্রীয় ঋণতথ্য বিভাগ অর্থাৎ সিআইবি থেকে তথ্য যাচাই-বাছাই করে প্রার্থীদের বিষয়ে মতামত পাঠাতো। কোনো প্রার্থী ঋণখেলাপি হলে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবিতে সংরক্ষণ থাকতো। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সহজেই সিআইবি থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারতো। কিন্তু ২০২৪ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে হঠাৎ করে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তা শিথিল করা হয়। বলা হয়, প্রার্থী ঋণখেলাপি কী না সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোই সে বিষয়ে মতামত দেবে। এর ফলে অনেকেই ঋণ পরিশোধ না করলেও ব্যাংকগুলো পতিত সরকারের প্রভাবশালী প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার অনুমতি দিয়ে দেয়।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, বিভিন্ন মৌসুমে সাধারণত ব্যাংকের মন্দ মানের কিছু ঋণ আদায় হয়। আদায় হয় নিয়মিত খেলাপি ঋণও। এমন এক মৌসুম হলো নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনে কোনো ঋণখেলাপি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার জন্য ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করে থাকেন। এভাবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাংকের ঋণ আদায় বেড়ে যায়। কিন্তু পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনগুলোতে ঋণ পরিশোধ তো দূরের কথা, আওয়ামী প্রার্থীদেরকে সিএসআর তহবিল থেকে আর্থিক সহযোগিতা করার অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ইতোমধ্যে একটি ব্যাংকে অনুসন্ধান করতে গিয়ে এমন তথ্য পেয়েছে। ওই ব্যাংক তার সিএসআর তহবিল থেকে ১০ কোটি টাকা বিশেষ কৌশলে কয়েকজন প্রার্থীকে সরবরাহ করেছে বলে প্রমাণ পেয়েছে। বিশেষ বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস আলমের দখল করা ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল অঙ্কের সিএসআরের অর্থ পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী তহবিলে জোগান দেয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, এবার যারা ঋণখেলাপি তাদের কোনোভাবেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেয়া হবে না। তাদেরকে ব্যাংক কোম্পানি আইন মেনেই ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদিও ব্যাংকগুলোই অনাপত্তিপত্র দেবে, এর পরেও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর ওপর বিশেষ নজরদারি রাখবে। পাশাপাশি উচ্চ আদালত থেকে ঋণখেলাপি কেউ স্থগিতাদেশ নিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে না পারেন, সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক দক্ষ আইনজীবীর মাধ্যমে রিট খারিজ করার ব্যবস্থা করবেন।
এ দিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর মনোভাব ইতোমধ্যেই ব্যাংকগুলো জানতে পেরেছে। আর এ কারণেই আগামী জাতীয় নির্বাচনে সম্ভাব্য যেসব প্রার্থী নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবেন তারা আগে থেকেই ব্যাংকগুলোতে যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার সোনালী ব্যাংকের একটি শাখায় এমন একজন সম্ভাব্য প্রার্থী এসে নামেমাত্র ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ নবায়নের জন্য চেষ্টা করেছেন। তবে, ব্যাংকের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে, ঋণ নবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা কোনোভাবেই উপেক্ষা করা হবে না। যথাযথভাবে ডাউন পেমেন্ট দিয়েই ঋণ নবায়ন করতে হবে।
বেসরকারি আরেক ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তাদের ব্যাংকেও সম্ভাব্য ঋণখেলাপি প্রার্থীরা ঋণ নবায়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন। তবে, যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেই ঋণ নবায়ন করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তিনি আশা করেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আশানুরূপ খেলাপি ঋণ আদায় হবে।