ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল শাপে বর হয়েছে : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

কূটনৈতিক প্রতিবেদক
Printed Edition

ভারত তৃতীয় দেশে পণ্য পাঠাতে গত এপ্রিল থেকে বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তার মতে, এটি বাংলাদেশের জন্য ‘শাপে বর’ হয়েছে।

ভারত তৃতীয় দেশে পণ্য পাঠাতে গত এপ্রিল থেকে বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তার মতে, এটি বাংলাদেশের জন্য ‘শাপে বর’ হয়েছে।ভারত তৃতীয় দেশে পণ্য পাঠাতে গত এপ্রিল থেকে বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তার মতে, এটি বাংলাদেশের জন্য ‘শাপে বর’ হয়েছে।

গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তৌহিদ হোসেন বলেন, ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের বিষয়ে আমি যেটা দেখতে পেয়েছি সেটি হলো, এটি আমাদের জন্য শাপে বর হয়েছে। ভারতের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরশীলতা কমে গেছে, আমাদের রফতানিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। বরং একটি বিকল্প মেকানিজম দাঁড়িয়ে গেছে। দিল্লির পরিবর্তে চিটাগাং এবং সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পণ্য যাচ্ছে। কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তাই আমি মনে করি, এটি একদিক থেকে ভালোই হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে পণ্য সরাসরি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যেতে পারছে। তাহলে কেন সব কিছুর জন্য অন্য দেশের ভেতর দিয়ে আমাদের ট্রানজিট সুবিধা নিতে হবে?

বাংলাদেশের জন্য ভারত একের পর এক সুবিধা বাতিল করছে- এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরাও আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী একটি সুবিধা বাতিল করেছি। আমরা স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ করেছি। সেটি আমাদের প্রয়োজন ছিল বলেই করেছি। কিন্তু তারা যেটি করেছে, এটি তাদের প্রয়োজনে করেছে কি না, তা জানি না।

তৌহিদ হোসেন বলেন, ভারতের পুশইন অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে হাজারের বেশি মানুষকে ভারত পুশইন করে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। বিভিন্ন ধাপে ভারতকে চিঠি পাঠিয়েও এটি বন্ধ করা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় ভারতের সাথে কনস্যুলার সংলাপ করার বিষয়টি সরকার বিবেচনায় নিচ্ছে। আমরা সাবস্ট্যানটিভ একটি চিঠি পাঠাবো, যেটাতে কিছু পদ্ধতির কথা আমরা আরেকবার উল্লেখ করবো। কনস্যুলার ইস্যুতে আলাপ-আলোচনার জন্য একটি মেকানিজম আছে। আমরা সেটি ব্যবহার করার চেষ্টা করবো।

সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার প্রথম দিকে কঠোর প্রতিবাদ জানালেও এখন তেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো হচ্ছে না কেন- এমন প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, এগুলো গা সওয়া হওয়া সম্ভব নয়। এগুলো নিয়ে নমনীয়তা দেখানোও সম্ভব নয়। আমরা এগুলোর প্রতিবাদ করেছি এবং এই প্রক্রিয়া চালু আছে। এ বিষয়ে আমরা অবশ্যই শক্ত ভাষায় প্রতিবাদ করবো। সীমান্ত হত্যাকাণ্ড কখনোই মেনে নেয়া হবে না।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে বাংলাদেশের করা অনুরোধের কোনো সাড়া ভারতের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশীদের ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশ অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করছে, এর কারণ কি- জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এ জন্য অনেকাংশে বাংলাদেশীরাই দায়ী। আমাদের দেশের মানুষ এবং ব্যবসায়ীরা দায়ী, বিশেষ করে যারা বিদেশে মানুষ পাঠান তারা। বাংলাদেশের প্রতি মালয়েশিয়ার কোনো বিরূপ মনোভাব নেই। সেই মালয়েশিয়াতেও আমাদের চেয়ে বৈধপথে যাওয়া নেপালি শ্রমিকের সংখ্যা বেশি ছিল। মালয়েশিয়াতে আমাদের অবৈধ শ্রমিকের সংখ্যা বেশি ছিল। এটি তাদের দোষ নয়, আমাদের দোষ। তাই আমাদের ঘর সামলাতে হবে। অনেকের হয়তো আমার কথা পছন্দ হবে না, কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, এই একটি ক্ষেত্রে আমাদের অনেক কিছু করার আছে।

এ দিকে ভুটানের রাষ্ট্রদূত ও শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার গতকাল পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে পৃথকভাবে সাক্ষাৎ করেছেন।