ভালো বোলিংয়ের অন্তরায় বাজে ব্যাটিং

জসিম উদ্দিন রানা
Printed Edition

বাংলাদেশ ক্রিকেটে ব্যাটিং ব্যর্থতা যেন এখন নিয়মিত দৃশ্য। প্রতিটি সিরিজেই দেখা যায় একই চিত্র। বোলাররা প্রাণপণ লড়ে দলকে ম্যাচে রাখেন, কিন্তু ব্যাটারদের অদূরদর্শী শট খেলা, উইকেট বিলিয়ে দেয়া আর আত্মসমর্পণেই ভেস্তে যায় সব পরিকল্পনা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সাম্প্রতিক পরাজয়ও এর ব্যতিক্রম নয়। বল হাতে মিরাজ, তাসকিন কিংবা রিশাদরা দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে প্রতিপক্ষকে ছোট স্কোরে বেঁধে রাখলেও, ব্যাট হাতে সেটি পূরণ করতে পারেননি কেউই।

এক সময় বাংলাদেশ দলের শক্তি ছিল সংগ্রামী ব্যাটিং। শুরুর বিপর্যয় সামলে সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহরা ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতেন। কিন্তু এখন যেন সবাই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করছেন। দ্রুত উইকেট হারানো, সিঙ্গেল না নিয়ে বড় শটের ব্যর্থ চেষ্টা, আর ধৈর্যের অভাব। দলের স্কোরবোর্ডে যখনই চাপ আসে, তখনই দেখা যায় একের পর এক ব্যাটার ফিরে যাচ্ছেন নির্ভরতার বদলে হতাশা রেখে। এই ধারাবাহিক ব্যর্থতা শুধু ম্যাচ হারাচ্ছে না, দলের মনোবলও ভেঙে দিচ্ছে। মাঠের বাইরের পরিকল্পনা, কোচদের কৌশল, সব কিছুই বিফল হয়ে যাচ্ছে যখন টপঅর্ডার ভেঙে পড়ে অনভিজ্ঞতার চাপে। আর তাতে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে বোলারদের নিখুঁত বোলিং, দলের সামগ্রিক লড়াই। মিডল অর্ডারে ভরসার জায়গা তৈরি হচ্ছে না। হাহাকার যেন লেগেই রয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি কোনো এক দিনের সমস্যা নয়, বরং দীর্ঘ দিনের মানসিক ও টেকনিক্যাল দুর্বলতার প্রতিফলন। এখন সময় এসেছে কঠোর আত্মসমালোচনার। ভালো ব্যাটিংই ভালো ফলাফলের মূল ভিত্তি। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না। নইলে প্রতিটি সিরিজ শেষে একই আফসোসই ঘুরেফিরে আসবে। বোলাররা জিততে পারলেও ব্যাটাররা হারিয়ে দেন ম্যাচ। বোলারদের অসম্ভব ভালো বোলিংও ম্লান হয়ে যায় ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে। এটা কি শুধু একজন ব্যাটারের ব্যর্থতা! ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হারের কারণও সেই চিরাচরিত সম্মিলিত ব্যাটিং ব্যর্থতা।

লিটনের মাঠের ক্যাপ্টেন্সি ভালো, তিনি সেরা ব্যাটারদের একজন, ফলাফলের হিসেবে সফল অধিনায়ক, এসবই লিটনের পক্ষে কথা বলছে। একই সাথে, কিভাবে-কখন-কোথায়, কী কথা বলতে হয়, নেতা হিসেবে কিভাবে দলকে আগলে রাখতে হয়, কিভাবে টিমমেটদের জন্য ঢাল হিসেবে দাঁড়াতে হয়, সে জায়গাটায় বোধ হয় তার আরো সময় দরকার।

অথচ সেই হারের দায়ে যখন অধিনায়ক লিটন দাস শুধুমাত্র শামীম হোসেন পাটোয়ারীর দিকে আঙ্গুল তুলেন, তখন সেখানে আরো অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয় ? প্রথমতো একজন অধিনায়ক কখনোই এভাবে প্রকাশ্যে দলের একজন সদস্যকে দোষারোপ করে কথা বলতে পারেন না। এখানে লিটন দাসের উচিত ছিল ঢাল হিসেবে থাকা। দ্বিতীয়তো শামীম পাটোয়ারী যদি ব্যর্থ হয়ে থাকে তাহলে অধিনায়ক হিসেবে লিটন এই ম্যাচে কী করেছেন? তাহলে তার সমালোচনা কে করবে? তৃতীয়ত এই ম্যাচে আরো কয়েকজন ব্যাটার ব্যর্থ হয়েছেন। লিটন কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য করে কিছু বলেননি। তার এই বক্তব্যে বিভক্তি স্পষ্ট, শামীম অধিনায়কের পছন্দের তালিকায় নেই। সেই সাথে ক্লিয়ার হয়ে যায় আজ চট্টগ্রামে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচের একাদশে শামীম থাকাটা অস্বাভাবিক, না থাকাটাই স্বাভাবিক।