অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে পোশাক খাত

ভালো প্রবৃদ্ধি, নীতি সহায়তা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন জরুরি

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এই সময়কালে তৈরী পোশাক খাত থেকে আয় হয়েছে ৯ দশমিক ৯২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের কোয়ার্টারের (৯.১১৫ বিলিয়ন ডলার) তুলনায় ৮.৮৮ শতাংশ বেশি। আর গত বছরের একই সময়ের (৯.৫১১ বিলিয়ন ডলার) তুলনায় ৪.৩৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

বিশেষ সংবাদদাতা
Printed Edition

বাংলাদেশের রেডিমেড গার্মেন্ট (আরএমজি) খাত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দেশের রফতানি আয়ের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে নিজেকে স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এই সময়কালে তৈরী পোশাক খাত থেকে আয় হয়েছে ৯ দশমিক ৯২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের কোয়ার্টারের (৯.১১৫ বিলিয়ন ডলার) তুলনায় ৮.৮৮ শতাংশ বেশি। আর গত বছরের একই সময়ের (৯.৫১১ বিলিয়ন ডলার) তুলনায় ৪.৩৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

রফতানির প্রধান গন্তব্য : এই তিন মাসে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক রফতানি প্রধানত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইতালি, কানাডা এবং বেলজিয়াম-এ হয়েছে। এই নয়টি দেশ থেকে তৈরী পোশাক রফতানি আয় হয়েছে ৭.১৫৪ বিলিয়ন ডলার, যা মোট খাতের ৭২.০৮ শতাংশ।

প্রধান পণ্যভিত্তিক অবদান হলো- নিটওয়্যার-৪৫.২৬%, ওভেন গার্মেন্ট-৩৫.৬২% এবং অন্যান্য পণ্য (লেদার, কৃষি পণ্য, জুট পণ্য, ফ্রোজেন ফিশ ইত্যাদি) মোট আয়ের প্রায় ১০.৯%।

নিটওয়্যার রফতানি এই কোয়ার্টারে হয়েছে ৫.৫৫৪ বিলিয়ন ডলার, যা আগের কোয়ার্টারের তুলনায় ১০.৬৮ শতাংশ বেশি এবং গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩.৮৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ওভেন গার্মেন্ট রফতানি হয়েছে ৪.৩৭১ বিলিয়ন ডলার, আগের কোয়ার্টারের তুলনায় ৬.৬৮ শতাংশ বেশি।

খরচ ও নিট রফতানি : রফতানির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি হয়েছে ৩.৮৩৭ বিলিয়ন ডলার, যা মোট রফতানির প্রায় ৩৮.৬৬%। ফলে খাতের নিট রফতানি দাঁড়িয়েছে ৬.০৮৭ বিলিয়ন ডলার, যা আগের কোয়ার্টারের তুলনায় ১৭.৬২ শতাংশ এবং গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮.৩৭ শতাংশ বেশি।

নীতিগত সহায়তা ও উদ্যোগ : সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক আরেএমজি খাতের সম্প্রসারণ ও রফতানি বৃদ্ধির জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে :

প্রিশিপমেন্ট ক্রেডিট : ৫০ বিলিয়ন টাকার পুনঃফাইন্যান্স সুবিধা। এক্সপোর্ট ইনসেনটিভ : বিভিন্ন পণ্যের জন্য নগদ প্রণোদনা, বিশেষ করে ইউরো জোনে অতিরিক্ত ১%। গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ) : সবুজ প্রযুক্তি ও পরিবেশ বান্ধব উদ্যোগে বিনিয়োগের জন্য ৫০ বিলিয়ন টাকা। এক্সপোর্ট ফ্যাসিলিটেশন প্রিফাইন্যান্স ফান্ড (ইএফপিএফ) : রফতানি খাতে উৎপাদন ও লিকুইডিটি সহায়তার জন্য ১০০ বিলিয়ন টাকা। এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইডিএফ) : রফতানি প্রস্তুতি ও কাঁচামাল আমদানিতে ১৮০-২৭০ দিনের মধ্যে ডলার ঋণ।

বিশ্লেষণ ও চ্যালেঞ্জ : যুগোপযোগী চাহিদা, প্রযুক্তিগত উন্নতি ও বৈদেশিক বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক দাম আরএমজি খাতের বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। তবে নতুন আন্তর্জাতিক শুল্ক, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বৈশ্বিক চাহিদার ওঠানামা খাতের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, মানোন্নয়ন, পরিবেশ ও সামাজিক মানদণ্ড নিশ্চিত করা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের আরএমজি খাতের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান বজায় রাখবে।

সার্বিকভাবে ২০২৬ অর্থবছরের প্রথম কোয়ার্টারে আরএমজি খাত দৃঢ়প্রবৃদ্ধি প্রদর্শন করেছে। এই খাত দেশের অর্থনীতিতে প্রধান অবদান রাখছে এবং রফতানিভিত্তিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। তবে আগামী সময়ে ধারাবাহিক বৃদ্ধির জন্য সরকারি নীতি সমর্থন, আন্তর্জাতিক বাজারে কৌশলগত সম্পর্ক এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন অপরিহার্য।