মানবিক বাংলাদেশ গঠন

প্রতিবন্ধীদের জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ পরিকল্পনা জামায়াতের

খালিদ সাইফুল্লাহ
Printed Edition
আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে ধানমন্ডিতে এক অনুষ্ঠানে ডা: শফিকুর রহমান  : নয়া দিগন্ত
আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে ধানমন্ডিতে এক অনুষ্ঠানে ডা: শফিকুর রহমান : নয়া দিগন্ত

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুসহ সব ধরনের প্রতিবন্ধীদের জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সরকার গঠন করতে পারলে তাদের যথাযথ সম্মান, যতœ ও অধিকারগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেবে দলটি। এ বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা শিগগিরই প্রকাশ করবে দলটি। নির্বাচনী ইশতিহারেও এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।

প্রতিবন্ধীদের নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রথমবারের মতো পরিচালিত ‘জাতীয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি জরিপ (এনএসপিডি) ২০২১’ এর তথ্য মতে, বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার ২.৮০ শতাংশ বা ৪৬ লাখ ২৪ হাজার ৪৪১ জন প্রতিবন্ধী। এর মধ্যে পুরুষ ৩.২৯ শতাশ এবং নারী ২.৩৪ শতাশ। এ জরিপটি ২০২১ সালে পরিচালিত হলেও চূড়ান্ত প্রতিবেদন ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত হয়। জরিপের তথ্য মতে, কর্মক্ষম হওয়া সত্ত্বেও ৬৬.২২ শতাংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি কর্মের বাইরে রয়েছেন। এছাড়া প্রায় ৯৮% প্রতিবন্ধী ব্যক্তি কোনো না কোনো সময়ে বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হন, যার মধ্যে প্রতিবেশীর কাছ থেকে দুর্ব্যবহারের হার সর্বাধিক (৯১%)। এরপর আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে ৪৩.৩৩ %, বন্ধুদের কাছ থেকে ২৮.৪১% এবং নিজের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে ২৬.৯৭%। এছাড়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ৭৭% সম্পূর্ণভাবে পরিবারের ওপর নির্ভরশীল।

জরিপের তথ্য অনুসারে, দেশে প্রতিবন্ধী শিশুর সংখ্যা পাঁচ লাখ ২৪ হাজার ২৮৮ জন। ফাংশনাল ডিফিকাল্টির বিভিন্ন ধরনের মধ্যে রয়েছে দেখা, শোনা, হাঁটা, আঙুল ব্যবহার করে সূক্ষ্ম কাজ করা, যোগাযোগ, শেখা, খেলা বা আচরণ নিয়ন্ত্রণ। প্রতিবন্ধী শিশুদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় নথিভুক্ত নয়। জরিপ বলছে, প্রতিবন্ধী শিশুদের (৫-১৭ বছর বয়সী) মধ্যে মাত্র ৬৫ শতাংশ শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং মাত্র ৩৫ শতাংশ শিশু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নথিভুক্ত আছে। মোট ৬০ শতাংশ প্রতিবন্ধী শিশু আনুষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে। সমীক্ষায় আরো উঠে এসেছে, প্রতিবন্ধী শিশুদের মধ্যে যারা আনুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করছে তারা তাদের বয়স অনুপাতে শিক্ষাগতভাবে গড়ে দুই বছরের বেশি পিছিয়ে। এছাড়া শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষের মধ্যে প্রতিবন্ধিতা বেশি। প্রতিবন্ধীর ২ দশমিক ৯২ শতাংশ গ্রামে বসবাস করে এবং ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ থাকে শহরে। সামাজিকভাবেও বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য ও হয়রানির শিকার হন প্রতিবন্ধীরা। সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকেও তারা বঞ্চিত। এমনকি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) বিভিন্ন কর্মসূচি থেকেও তারা সেবা পাননা। অনেকে বঞ্চনা ও হয়রানির অভিযোগ করেন না। যারা করেছেন, তারাও সুবিচার পাননি।

এ অবস্থায় প্রতিবন্ধীদের অধিকার রক্ষায় পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সরকার গঠন করতে পারলে প্রতিবন্ধীদের অধিকার রক্ষার পাশাপাশি তাদের যতœ ও অধিকারগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়নের কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে দলটি। এ বিষয়ে এখনই বিস্তারিত না জানালেও তাদের সদিচ্ছার বিষয়টি এরই মধ্যে উঠে এসেছে। আগামী নির্বাচনের আগে ইশতেহারে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে বলে জানা গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, সাবেক চাকসু ভিপি অ্যাডভোকেট মো: জসীম উদ্দীন সরকারের উদ্যোগে গতকাল ধানমন্ডি এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে প্রতিবন্ধী নারী-পুরুষ, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ‘অপ্রতিরোধ্য সম্মাননা’ প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার সাথে লড়াই করা সব অংশগ্রহণকারীর হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট, আর্থিক সহায়তা এবং বিভিন্ন উপহার সামগ্রী তুলে দেয়া হয়।

প্রতিবন্ধীদের নিয়ে পরিকল্পনার বিষয়ে অ্যাডভোকেট মো: জসীম উদ্দীন সরকার বলেন, শারীরিক সীমাবদ্ধতা কোনোদিনই জীবনের শেষ নয় বরং নতুন করে উঠে দাঁড়ানোর অদম্য শক্তির শুরু। এজন্য তাদের প্রতি সহানুভূতি নয়, সহমর্মিতা, সঠিক দিকনির্দেশনা এবং সমান সুযোগ পেলেই এ বিশেষ সম নাগরিকরাই দেশের প্রকৃত সম্পদে রূপান্তরিত হবেন। আমরা এমন একটি মানবিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক জনপদ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই যেখানে প্রতিটি মানুষের অধিকার, মর্যাদা ও সম্ভাবনা সুরক্ষিত থাকবে; যেখানে কেউ পিছিয়ে থাকবে না, সবাই সামনে এগিয়ে যাবে একটি সুন্দর ভবিষ্যতের পথে। ইনশাআল্লাহ, আগামী দিনগুলোতেও তাদের হাতে এ সম্মাননা তুলে দেবো। এটিই হবে তাদের প্রতি সম্মান, স্বীকৃতি এবং নতুন উদ্দীপনার প্রতীক।

এ প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেন, প্রতিটি শিশুই জান্নাতের একেকটি ফুলের কুঁড়ি। আর আল্লাহ তায়ালা এই দুনিয়ায় কিছু বিশেষ ফুলের কুঁড়ি পাঠান, যাদের প্রয়োজন হয় একটু বেশি আদর, স্নেহ, মমতা, ভালোবাসা ও যতœ। এ বিশেষ ফুলের কুঁড়িগুলোই হলো আমাদের সমাজের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা। তাদের প্রতি সঠিক মনোযোগ, সঠিক পরিবেশ ও ভালোবাসা দিলে তারাও একদিন গড়ে উঠবে সুনাগরিক হিসেবে এবং এই দেশের জন্য রাখবে অনন্যসাধারণ অবদান।

তিনি আরো বলেন, আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় এবং জনগণের ভালোবাসায় সরকার গঠন করতে পারলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি সত্যিকারের মানবিক বাংলাদেশ গঠন করবে, যেখানে এই জান্নাতের ফুলের কুঁড়িগুলো তাদের যতœ ও অধিকারগুলো পুরোপুরি উপভোগ করতে পারবে এবং একদিন পরিপূর্ণ ফুল হয়ে ফুটে উঠবে, ইনশাআল্লাহ।