নতুন নিরাপত্তাবাহিনী গঠনের খবরে বিমানবন্দরে উত্তেজনা

আন্দোলনের হুমকি বর্তমান নিরাপত্তাকর্মীদের

আমিনুল ইসলাম
Printed Edition

বিমানবন্দরের নিরাপত্তা রক্ষায় নতুন বাহিনী গঠানের চিন্তা করছে সরকার। এর প্রাথমিক নাম ঠিক করা হয়েছে এয়ার গার্ড বাংলাদেশ বা এজিবি। এই বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে সম্প্রতি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সমন্বয়ে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। অথচ এই কমিটিতে বেবিচকের কোনো প্রতিনিধি রাখা হয়নি। এই খবর ছড়িয়ে পড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বেসামরিক বিমান চলাচাল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নিজস্ব সিকিউরিটি বিভাগ এভিয়েশন সিকিউরিটির (এভসেক) সদস্যরা। তারা বলছেন, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা রক্ষায় একাধিক সংস্থা কাজ করে থাকে। এ ছাড়া ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার অর্থাৎ বেসামরিক নিরাপত্তার স্বার্থরক্ষা নীতির আওতায় বিমানবাহিনীও কাজ করে। এর বাইরে কেন আরেকটি বাহিনী গঠনের দরকার হলো তা পরিষ্কার নয়।

এভসেক সদস্যরা বলছেন, তাদের অনেক কর্মকর্তার পদ এখনো স্থায়ী হয়নি। তাদের বেতন বৃদ্ধির কথা থাকলেও সেটি বাড়েনি। এসব বিষয়ে সমাধান না করে নতুন বাহিনী গঠন অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রয়োজনে আগের মতো আন্দোলনে যাওয়ার কথা ভাবছেন বলে জানান এভসেক সদস্যরা।

জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিমানবন্দরে নিরাপত্তাবিধানে একটি বাহিনী গঠনের জন্য গত ৩১ আগস্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সমন্বয়ে ১২ সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির সভাপতি হচ্ছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও অর্থ)। সদস্যসচিব হলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব (প্রশাসন-১)। এ ছাড়া কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, পুলিশের প্রতিনিধিসহ ১২ জন সদস্য রয়েছেন। এই কমিটিই এই বাহিনী গঠনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। দ্রুতই কমিটির সদস্যরা বৈঠকে বসে এর অর্গানোগ্রাম বা প্রশাসনিক কাঠামো চূড়ান্ত করবেন।

এ দিকে এ বাহিনী গঠনের খবরে বেবিচকের নিজস্ব সিকিউরিটি বিভাগ এভসেক সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অচিরেই এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা আন্দোলনে যাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তারা বলছেন, এর আগেও এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি ফোর্স গঠন করার চেষ্টা করা হয়েছিল; কিন্তু এভসেক সদস্যরা তা প্রতিহত করেছেন। এবারো তা করতে দেয়া হবে না।

জানা যায়, এর আগে বছরের শুরুর দিকে দেশের বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি ফোর্স নামে নতুন বাহিনী গঠনের প্রস্তাব করেছিল বেবিচক। বিষয়টি ফাঁস হলে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন বেবিচকের এভসেক বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা এটি বাতিল করাসহ বেশ কয়েকটি দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামেন। তারা রাস্তা অবরোধসহ তৎকালীন চেয়ারম্যান মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়ার অপসারণও দাবি করেন। পরে চেয়ারম্যান এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এভসেকের কর্মকর্তারা বলেন, এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হলে আমরা আবারো বাতিলের জন্য আন্দোলন করব। এটা আমরা কোনোভাবেই মানব না। তারা বলেন, নতুন কিছু করার আগে বেবিচককে সংস্কারের আওতায় আনতে হবে। প্রতিষ্ঠান বেসামরিক হলেও এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রায় সবই সামরিক বাহিনীর। এই জায়গায়টাই আগে সংস্কার করতে হবে। আমরা এবার সেই পদক্ষেই নেব। এ দিকে নতুন এই বাহিনী গঠনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এই মুহূর্তে এ ধরনের বাহিনীর কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না; বরং পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো এয়ারপোর্ট অথরিটি গঠন করে তার অধীনে বাহিনী গঠন করা হলে সেটি ফলপ্রসূ হবে। কারণ নতুন গঠনকৃত এ বাহিনীতে অফিসাররা ডেপুটেশনে আসবেন আবার চলে যাবেন। এতে করে খুব একটা ফলপ্রসূ হবে না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বেবিচক বা এভসেক-এর কোনো কর্মকর্তা সরাসরি কথা বলতে রাজি হননি। তবে বেবিচকের সাবেক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব:) মফিদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা অবশ্যই ইতিবাচক; কিন্তু কমিটিতে সিভিল এভিয়েশনের কোনো সদস্য রাখা হয়নি। তাদেরও প্রতিনিধি রাখা দরকার ছিল। বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় কোনো কিছু করতে হলে অবশ্যই সিভিল এভিয়েশনের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইকাওয়ের রুলসও অনুসরণ করতে হবে। মোট কথা, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সাথে আলোচনার মাধ্যমেই নতুন এ উদ্যোগ এগিয়ে নিতে হবে।