আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ভয়ভীতি বা সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া থামানো যাবে না। তিনি বলেছেন, আমি আল্লাহর ওপর ভরসা করে কাজ করছি, আমাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর এজলাস কক্ষে দেয়া এক সংবর্ধনায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় ট্রাইব্যুনাল-২ এর সদস্য বিচারক মো: মনজুরুল বাসিত ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবির উপস্থিত ছিলেন। অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান এবং চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামও সংবর্ধনায় অংশ নেন।
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দৃঢ় অঙ্গীকার
বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী আরো বলেন, আমরা এখানে বসেছি দেশের জাতীয় দায়িত্ব পালনের জন্য। আমাদের প্রধান লক্ষ্য হবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও আইনের শাসন রক্ষা করা। আমরা শত বাধা ও ভয়ভীতির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বহীনভাবে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করব।
তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে দেশের স্বাধীনতা এনেছে। তাদের আত্মত্যাগের ফলে আজ আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছি। তাই তাদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা থেকে এ বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হবে।’
বিচারপতি চৌধুরী আরো বলেন, কোনো ধরনের সন্ত্রাসী হামলা বা ভয় দেখিয়ে বিচারকের কাজ থেকে বিচ্যুত করা যাবে না। আমরা যে ন্যায়বিচারের তরী নিয়ে যাচ্ছি, তা আল্লাহর সাহায্যে সঠিক তীরে পৌঁছাবে।
গণহত্যার বিচার : ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই
সংবর্ধনায় বিচারপতি চৌধুরী তার বক্তৃতায় দেশটির অতীত রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রসঙ্গও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছরে যারা দেশ শাসন করেছে, তারা নিষ্ঠুরভাবে দেশবাসীর ওপর অত্যাচার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলার সাহস পায়নি। এখন তারা আবার ফিরে আসতে চাইছে, তবে আমরা তাদের ফিরতে দেব না। আমরা জাতির জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সারা দেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ জমা পড়ে। বিচারপতি চৌধুরী বলেন, ‘এ গণহত্যার বিচার কার্যক্রম এখন ট্রাইব্যুনাল-২ এর হাতে। আমরা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার এবং বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে বিচার কাজ চালাব।’
ট্রাইব্যুনাল-২ এর গঠন ও উদ্দেশ্য
গত ৮ মে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন করে। বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীতে চেয়ারম্যান এবং বিচারক মো: মঞ্জুরুল বাসিত ও নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবিরকে সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ট্রাইব্যুনাল-২ গঠনের উদ্দেশ্য ছিল ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সারা দেশে সংঘটিত গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দ্রুত বিচার করা।
বিচারপতি চৌধুরী বলেন, এ বিচারে আমাদের প্রথম লক্ষ্য হবে আন্তর্জাতিক বিচার প্রক্রিয়া অনুসরণ করা এবং যাতে দেশের জনগণ মনে করে যে, তাদের ন্যায়বিচারের অধিকার পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ
সংবর্ধনায় অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই, যেকোনো ধরনের প্রশ্নবোধক চিহ্ন না থেকে, এ বিচার আন্তর্জাতিক মানে এবং নিরপেক্ষভাবে হবে। আমাদের উদ্দেশ্য হলো এ বিচার যেন জনগণের এবং আন্তর্জাতিক মহলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।’
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আজকের সংবর্ধনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল-২ এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হলো। আমরা আশা করি, আগামী দিনগুলোতে নতুন মামলাগুলোর বিচার শুরু হবে এবং এতে দেশবাসী দ্রুত অগ্রগতি দেখতে পারবেন।’
বিচারের পথে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়
বিচারপতি চৌধুরী তার বক্তৃতায় আরো বলেন, আমরা জানি, সন্ত্রাসী শক্তিরা এখনো সক্রিয়, তবে আমরা তাদের পথে বাধা সৃষ্টি করতে প্রস্তুত। আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা, এবং সে জন্য আমরা একটুও পিছপা হবো না। বিচারের এ তরী আল্লাহর সাহায্যে তীরে পৌঁছাবে।