নয়া দিগন্ত ডেস্ক
২০০৫ সালের ৭ ডিসেম্বর ইদ্রিস আলী ও মরিয়াম বেগমের অভাবের সংসারে এক টুকরো সুখের প্রদীপ হয়ে জন্ম নেন মারুফ হোসেন। তিন পুত্র সন্তানের প্রথম মারুফ ছিলেন বাবা-মায়ের চোখের মণি। তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে বরিশালের গ্রামের বাড়িতেই। বরিশালের একতা ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চলে আসেন ঢাকায়। ফুচকা বিক্রেতা বাবার ব্যবসার কাজে সাহায্য করতে।
ঢাকায় ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাথে শুরু থেকেই জড়িত হয়ে পড়েন মারুফ। ১৬ জুলাই রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে পেটোয়া পুলিশ বাহিনীর এক সদস্য ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করলে শিক্ষার্থীদের সমর্থনে দেশের সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে এবং বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে। সাধারণ মানুষের বিক্ষোভের মাত্রা যেমন বাড়তে থাকে তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে আন্দোলন কমানোর নামে সরকারি পেটয়া বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের তাণ্ডব। সাধারণ ছাত্র-জনতার উপর সরকারের এই অন্যায় অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করতে পারেনি টগবগে তরুণ যুবক মারুফ হাসান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তিনিও যুক্ত হন আন্দোলনরত ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে।
অন্যান্য দিনের মতো ১৯ জুলাই ২০২৪ শুক্রবার পবিত্র জুমার দিনও শহীদ মারুফ হোসেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে আন্দোলনের মাঠে ছিলেন সারা দিন। সেখানে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার সাথে সরকারি পেটোয়া বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে দিনভর।
আনুমানিক সন্ধ্যা ৬টা। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর ন্যক্কারজনকভাবে ভারী আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় স্বৈরাচারীর সহযোগী পুলিশ বাহিনী। পিশাচের বুলেটের আঘাতে ঝাঁঝরা হয় মারুফের বুক। নির্মম পরিহাসের বিষয় হলো ১৯ জুলাই বুলেট বিদ্ধ হয়ে শাহাদতবরণ করলেও মারুফের লাশ খুঁজে পাওয়া যায়নি দুই দিন পর্যন্ত। ঘটনার দুই দিন পর অনেক খোঁজাখুঁজি করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে পাওয়া যায় শহীদ মারুফ হাসানের লাশ। একুশে জুলাই বাড্ডায় নামাজে জানাজা শেষে দাফন করা হয় স্থানীয় কবরস্থানে।