জুবায়ের বিন মামুন
বাবা-মা হারা ছোট্ট জামিল। বয়স আট কিংবা নয়। পেটের দায়ে ভিক্ষা করে বেড়ায়। দিন আনে দিন খায়। কখনো তিন বেলা ভাতও জোটেনা কপালে। ছোট বোন জাইমাকে নিয়ে গুলিস্তানের বস্তিতে তার বসবাস। জাইমার বয়স চারের বেশি হবে না। তবে পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে সে অনেক কিছু বুঝতে শিখেছে। তার জন্য করা ভাইয়ের কষ্টগুলো কচি মনে অনুভব করতে শিখেছে। এ জন্য নিজের ইচ্ছাগুলোকে গোপন করে রাখে; যেন তার ইচ্ছেগুলো পূরণ করতে গিয়ে তার ভাইয়ের কষ্ট পোহাতে না হয়।
গত ক’দিন ধরে জামিল দেখে আসছে; তার আদুরে বোনটা সারাক্ষণ মনমরা হয়ে থাকে। কারণ জিজ্ঞাসা করলে মুখ ফুটে কিছু বলতে গিয়েও থমকে যায়। মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। সবই জামিল বুঝতে পারে। কিন্তু রহস্য উদঘাটন করতে পারে না। এতদিন জামিল তার বোনের যে না বলা কথাটি উদ্ধার করতে পারেনি, তা আজ জাইমা নিজ থেকে বলেই হু হু করে কেঁদে ওঠে। সে বলে, ভাইয়া! আমারে বিরানি (বিরিয়ানি) খাওয়াইতে পারবা? মেলা দিন ধইরা খাইতে মন চাইতাছে।
সেদিন। তীব্র গরমের তাপদাহে ঝিম ধরা দুপুরে জামিল অন্য দিনের মতোই ভিক্ষা করতে বেরিয়েছিল। রাস্তাঘাটে লোকজন তেমন দেখা নেই। তবুও সে প্রখর রৌদ্রতাপে বোনের ইচ্ছা পূরণ করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে লোকের দ্বারে দ্বারে হাত পেতেছে। বেশ টাকাও পেয়েছিল। শেষ বিকেল। জামিল-জাইমান বিরিয়ানি কিনে প্রফুল্ল মনে ফিরছিল। হঠাৎ তাদের সামনে এক বৃদ্ধ ভিখিরিকে এক দোকানি তার দোকান থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। মুহূর্তে সে মাটিতে গড়িয়ে পড়ে।
অমনি ভাইবোন দু’জন হন্তদন্ত হয়ে ভিখারির দিকে দৌড়ে যায়। তার সেবা করে। তখন ভিখিরি তাদেরকে বলে তিনি আজ তিন দিন উপোস। যা শুনে তাদের চোখ ছলছল করে উঠে। তখন পাশ থেকে জাইমা তার ভাইকে ডেকে বলে; ভাইয়া, আমাগো খানাটা বৃদ্ধ দাদুকে দিয়া দাও। আমরা পরে আবার খামুনে। জামিলও তাই ভাবছিল। তখন তারা তাদের খাবার সেই বৃদ্ধ লোকটিকে দিলে সে এমনভাবে খায় যে বহুদিন ধরে পেটে দানাপানিও জোটেনি, যা দেখে জামিল-জাইমার মন প্রশান্তিতে ভরে যায়। আর ভাবতে থাকে; এমন সুখ লাখ টাকা দিয়েও কেনা সম্ভব নয়, যা আজীবন স্মৃতির ক্যানভাসের থাকবে।
মাদরাসাতুদ দাওয়াহ আল-ইসলামিয়া রাখালিয়া বাজার, লক্ষ্মীপুর



