বদলে যাচ্ছে পর্যটন খাত

আবুল কালাম
Printed Edition

বদলে যাচ্ছে দেশের পর্যটন খাত। আগামী দেড় যুগের মধ্যে দেশে মাসে অন্তত ৫০ হাজার বিদেশী পর্যটক ফেরাতে কাজ করছে পর্যটন করপোরেশন ও ট্যুরিজম বোর্ড। এ ছাড়া প্রাথমিক অবস্থায় ৫টি ট্যুরিজম স্পটকে আন্তর্জাতিক মানের করতে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকিগুলোর উন্নয়নেও পরিকল্পনা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবকাঠামো, মানসম্মত রাস্তা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, পর্যটন শিল্পের সমন্বয়হীনতা, দক্ষ জনবলের অভাব, বাজেট, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, সেবায় ভোগান্তি, অতিরিক্ত হোটেল ভাড়া ও ভ্রমণ ব্যয়, যানজট, বিনোদন ও ভিসা ব্যবস্থাসহ একাধিক সমস্যা এ খাতের উন্নয়নে বড় বাধা হয়ে কাজ করছে। তাই ভ্রমণ ও পর্যটন আয়ের বৈশ্বিক তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে। অথচ বাংলাদেশের পর্যটন খাতের উন্নয়নে সরকারের পর্যটন করপোরেশন, ট্যুরিজম বোর্ড ছাড়াও বেসরকারিভাবে অনেক ট্যুর অপারেটরসহ টুরিস্ট পুলিশ রয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতায় সব উন্নয়ন পরিকল্পনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। তাই আগামী ১৬ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে মাসে ৫০ হাজার বিদেশী ট্যুরিস্ট আনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কার্যক্রম চলছে।

উন্নয়নে পিছিয়ে পড়ার বিষয়ে ট্যুরিজম বোর্ডের একজন কর্মকর্তার ভাষ্য, নানান অনিশ্চয়তায় এ খাত এতদিন অন্ধকারে আটকা পড়েছিল। পদে পদে অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতা, অধিকাংশ পর্যটন স্পটে নিরাপত্তার ঘাটতি, যোগাযোগ ব্যবস্থার দুর্বলতা, মূল্যস্ফীতির চাপ, গরম আবহাওয়া, উড়োজাহাজের চড়া ভাড়া এসব নিয়ে পর্যটকদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। ফলে ভরা মওসুমেও দেশের পর্যটন এলাকায় অধিকাংশ হোটেল, রিসোর্ট ফাঁকা থাকত। মানুষের মধ্যে নিজের দেশে কম খরচে ঘুরতে যাওয়ার চেয়ে বিদেশে যাওয়ার আগ্রহ ছিল বেশী। কিন্তু বর্তমানে সংশ্লিষ্টরা এর সমাধানে উদ্যোগ নিয়েছেন। এই কাজ শেষ হলে পর্যটকরা নতুন এক বাংলাদেশ দেখবে।

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সাবেক সভাপতি শিবলুল আজম কোরাইশী নয়া দিগন্তকে বলেন, পর্যটন খাত স্থিতিশীল হতে সময় লাগবে। কারণ এর অবকাঠামোগত দুর্বলতা, দেশীয় বিমান ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা, প্রচারের অভাব, নিরাপত্তা ও বিদেশী পর্যটকদের কাছে সুরক্ষা ব্যবস্থা অনেক বড় বিষয়। উন্নত সেবা ও তথ্যের অভাব যেমন রয়েছে, তেমনি পর্যটকের জন্য বাড়তি খরচ একটি বড় বোঝা। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী পর্যটন বাজারের ৫৩ শতাংশ আসে আমেরিকা এবং ইউরোপ থেকে। যা থেকে আমরা অনেকটাই বঞ্চিত। এসব সমস্যার সমাধান না হলে এর উন্নয়ন অসম্ভব। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে গেলে তা আন্তর্জাতিক মানে উন্নত করা খুব কঠিন হবে না। ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আবু তাহির মোহাম্মদ জাবের জানান, ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশে ৫৫ লাখ ট্যুরিস্ট আনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে তারা এখন কাজ করছেন। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ও ট্যুরিজম বোর্ডের অধীনে এর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এখন বিদেশী পর্যটক বাড়লেও আশানুরূপ না। এখন পর্যটনকে অগ্রাধিকারের জায়গায় নিতে হবে। স্পটে যাওয়ার জন্য রাস্তা, যানবাহন, বিশ্রাম, বিনোদন, টয়লেট, খাবারের মান ও মূল্য, থাকার জায়গা এসব উন্নত করতে হবে। তাই আপাতত ৫টি ট্যুরিজম স্পটকে আন্তর্জাতিক মানের করতে কাজ চলছে। পর্যায়ক্রমে বাকিগুলোর উন্নয়ন করা হবে।

অন্য দিকে (টোয়াব) সচিব নিজাম উদ্দিন নয়া দিগন্তকে বলেন, বিদেশী পর্যটক না এলে এ খাতের কাক্সিক্ষত লক্ষ পূরণ হবে না। যেহেতু বাংলাদেশ এখনো অনেক দেশের লাল তালিকায় রয়েছে তাই পর্যটক আসছেন না। তা ছাড়া ভিসা জটিলতায়ও পর্যটক প্রতিকূলতায় রয়েছেন। সব মিলিয়ে বিদেশী পর্যটকদের জন্য আমরা এখানো অনেক পিছিয়ে, তার সমাধানে এখন কাজ করতে হবে। তাই আমরা এর উন্নয়নে ক্যাম্পিংসহ কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। এসবের সমাধান হলে এ খাত পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করছি।