২০২৬ শিক্ষাবর্ষের বিনামূল্যের পাঠ্যবই যথাসময়ে মুদ্রণ নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি। বার বার তাগিদ দেয়ার পরেও গতকাল বুধবার পর্যন্ত বই মুদ্রণের চুক্তিই করেনি অধিকাংশ প্রেস মালিক। ফলে মাধ্যমিকের ২১ কোটি পাঠ্যবই জানুয়ারির আগে মুদ্রণ ও বিতরণ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। যদিও অনেক প্রেস মালিক চাইছেন কৌশলে যেকোনো উপায়ে সময় ক্ষেপণ করে নিম্নমানের কাগজ ব্যবহার করে বই ছাপতে। কিন্তু ইতোমধ্যে প্রাথমিকের বই মুদ্রণে বেশ কিছু প্রেসে অভিযান চালিয়ে নিম্নমানের কাগজ জব্দ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। একই কৌশল নিয়ে মাধ্যমিকের বই মুদ্রণেও নিম্নমানের কাগজ ব্যবহার বাড়তে পারে বলে আগেই সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন মনিটরিং টিমের কর্মকর্তারা।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্র জানায়, নতুন বছরের শুরুতে এবার প্রাথমিকের ৮ কোটি ৫৯ লাখ ২৪ হাজার ৮৫৪ কপি বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিতে তৎপর রয়েছেন এনসিটিবির উৎপাদন ও বিতরণ শাখার কর্মকর্তারা। গতকাল বুধবার পর্যন্ত প্রাথমিকের ৮৮ শতাংশ বই জেলা উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। বাকি ১২ শতাংশ বইয়ের মধ্যে প্রি ডেলিভারি ইন্সপেকশনও (পিডিআই) সম্পন্ন হওয়ার পথে। অবশ্য প্রাক-প্রাথমিকের প্রায় ৯৭ ভাগ বই ইতোমধ্যে ছাপা ও সরবরাহও স¤পন্ন হয়েছে। এনসিটিবির উৎপাদন নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মুহাম্মদ আবু নাসের টুকু এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, প্রাথমিকের বই মুদ্রণ ও পিডিআই’র যে গতি এই গতিধারা অব্যাহত থাকলে চলতি নভেম্বর মাসের মধ্যেই শতভাগ মুদ্রণ ও বিতরণ শেষ করা সম্ভব হবে।
অন্য দিকে মাধ্যমিকের ২১ কোটি পাঠ্যবই মুদ্রণ নিয়ে এখনো শঙ্কা কাটেনি। বই মুদ্রণের জন্য টেন্ডারে কাজ পাওয়া প্রেসগুলোকে তাগিদ দিয়েও তাদেরকে চুক্তি করানো যাচ্ছে না। এনসিটিবির বিতরণ শাখা থেকে জানা যায়, এখন শুধুমাত্র নবম শ্রেণী ছাড়া অন্যান্য শ্রেণীর বই মুদ্রণে গতিও শ্লথ। বিশেষ করে ষষ্ঠ সপ্তম এবং অষ্টম শ্রেণীর পাঠ্যবই মুদ্রণে কোনো কাজই শুরু হয়নি। সবগুলো প্রেস এখন নবম শ্রেণীর বই মুদ্রণ নিয়ে ব্যস্ততা দেখাচ্ছে। যদিও নবম শ্রেণীর ২২১টি লটের কাজ পেয়েছে মোট ৯৭টি প্রেস।
সূত্র আরো জানায়, ষষ্ঠ শ্রেণীর ৯৮টি লটের বই মুদ্রণের কাজ পেয়েছে ২৪টি প্রেস। এই ২৪টি প্রেসের মধ্যে মাত্র ৯টি প্রেস গতকাল পর্যন্ত চুক্তি করেছে। বাকি ১৫টি প্রেস চুক্তি করতে গড়িমসি করছে। সপ্তম শ্রেণীর ১০০ লটের কাজ পেয়েছে ৩১টি প্রেস। এর মধ্যে এখনো চুক্তি করেনি ১৩টি প্রেস। অষ্টম শ্রেণীর ১০০ লটের বইয়ের কাজ পেয়েছে ৩৮টি প্রেস। গতকাল বুধবার পর্যন্ত মাত্র ৫টি প্রেস চুক্তি করেছে বাকি ৩৩টি প্রেসকে তাগিদ দেয়ার পরও তারা চুক্তি করেনি।
পাঠ্যবই মুদ্রণের এই ধীর গতির বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করে গত মঙ্গলবার এনসিটিবির চেয়ারম্যানের অরিরিক্ত দায়িত্বে থাকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো: মাহবুবুল হক পাটওয়ারি বিকেল ৩টায় বিভিন্ন প্রেস মালিকদের নিয়ে জরুরি সভা করেছেন। সভায় প্রেস মালিকদের চুক্তি না করার কারণ এবং তাদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। একই সাথে নতুন শিক্ষা বর্ষের শুরুতে কিভাবে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে দেয়া যায় সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে গতকাল বুধবার এনসিটিবির বিতরণ নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মতিউর রহমান পাঠান এই প্রতিবেককে জানান, দেরিতে হলেও সব প্রেস মালিক এই চুক্তি করবেন। যদিও এখন তারা নবম শ্রেণীর বই মুদ্রণে ব্যস্ত আছেন। তবে আগামী ৪ ডিসেম্বরের মধ্যে সবাইকেই চুক্তি করতে হবে। এই ডেড লাইন তাদেরকে জানিয়েও দেয়া হয়েছে। আর চুক্তি সম্পাদনের ৩০ দিনের মধ্যে প্রেস মালিকদের শতভাগ বই মুদ্রণ শেষে পিডিআই এবং সরবরাহ শেষ করতে হবে। সেই হিসাবে ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই সব বই মুদ্রণ শেষ হবে বলেও এই কর্মকর্তা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আর নতুন বছরের শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে দেয়াও সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।



