রুপালী পর্দায় ফিরল ইরানি ক্লাসিক

এই আয়োজনে অংশ নিয়েছে ইরানের জাতীয় চলচ্চিত্র সংরক্ষণাগার, যারা দীর্ঘদিন ধরে দেশটির ক্লাসিক চলচ্চিত্র সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারের কাজে নিয়োজিত।

Printed Edition
রুপালী পর্দায় ফিরল ইরানি ক্লাসিক
রুপালী পর্দায় ফিরল ইরানি ক্লাসিক

সাকিবুল হাসান

ইরানি চলচ্চিত্রের সোনালি অধ্যায় নতুন আঙ্গিকে ফিরে এসেছে। ‘স্বদেশের জন্য ইরানি চলচ্চিত্র’ শিরোনামের বিশেষ প্রদর্শনী অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে সদ্য, যার উদ্বোধনী দিন উদযাপন করা হয় কিংবদন্তি নির্মাতা আব্বাস কিয়ারোস্তামির প্রশংসিত চলচ্চিত্র ‘খানে-য়ে দোস্ত কোজাস্ত?’ এর পুনরুদ্ধারকৃত সংস্করণ প্রদর্শনের মাধ্যমে। শহরের প্রাচীনতম চলচ্চিত্র জাদুঘরে শুরু হওয়া এ উদ্যোগে উপস্থিত ছিলেন বিখ্যাত চিত্রগ্রাহক ও চিত্রনাট্যকার মাহমুদ কালারি ও প্রখ্যাত সাহিত্যিক আবদুল জাবার কাকাই। প্রদর্শনীর পর আয়োজিত এক আলোচনায় তারা কিয়ারোস্তামির চলচ্চিত্রধারা ও চলচ্চিত্রটির আবেগঘন নির্মাণশৈলী নিয়ে মতবিনিময় করেন। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন হামিদ রেজা মোদাক্কেক। চলচ্চিত্রটির প্রধান কাহিনী আবর্তিত হয়েছে আহমাদ নামের এক আট বছরের ছেলেকে ঘিরে, যে ভুল করে তার বন্ধুর খাতা বাড়িতে নিয়ে আসে। পরদিন খাতা ফেরত না দিলে বন্ধুকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হবে- এই আশঙ্কায় আহমাদ নিজের ছোট্ট পায়ে বন্ধুর বাড়ি খুঁজে বেড়ায় গ্রামজুড়ে।

এই সরল অথচ মর্মস্পর্শী গল্পের মধ্যে দিয়ে নির্মাতা তুলে ধরেছেন গ্রামীণ জীবনের সৌন্দর্য, মানবিক সম্পর্কের সূক্ষ্মতা এবং শিশুমনের আন্তরিক অনুসন্ধান। সরলতা ও সংবেদনশীলতার যুগলবন্দিতে চলচ্চিত্রটি হয়ে উঠেছে এক অনন্য শিল্পকর্ম।

এই আয়োজনে অংশ নিয়েছে ইরানের জাতীয় চলচ্চিত্র সংরক্ষণাগার, যারা দীর্ঘদিন ধরে দেশটির ক্লাসিক চলচ্চিত্র সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারের কাজে নিয়োজিত। চলচ্চিত্র সংস্থা প্রধান রাইদ ফেরেইজাদেহ জানান, প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য হলো ইরানি চলচ্চিত্রের ঐতিহ্য ও শিকড়ের সাথে নতুন প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দেয়া।

উদ্বোধনী আয়োজনের পর ধারাবাহিকভাবে দেশজুড়ে প্রদর্শিত হবে আরো চারটি ঐতিহাসিক চলচ্চিত্র। সেগুলো হলো :

১. শিরে সাঙ্গি (পাথরের সিংহ) : মাসউদ জাফারি জোজানি নির্মিত এই চলচ্চিত্রে দেখা যায়, বাখতিয়ারি অঞ্চলে এক বিদেশী নাগরিকের রহস্যময় হত্যাকাণ্ড এবং সেই ঘটনাকে ঘিরে গ্রামজুড়ে ছড়িয়ে পড়া উত্তেজনা। তদন্তে নামেন এক পুলিশ কর্মকর্তা ও এক বিদেশী কূটনীতিক, যাদের অনুসন্ধানে মুখোমুখি হতে হয় স্থানীয় লোকজনের রক্তাক্ত অতীতের।

২. গিলানে : রাখশন বানি-এ তেমাদ ও মোহসেন আব্দোলভাহাব পরিচালিত এই চলচ্চিত্রে দেখানো হয়, ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় এক গ্রামীণ নারীর সংগ্রাম। নিজের ছেলেকে যুদ্ধে পাঠিয়ে, পরে মেয়েকে সাথে নিয়ে রাজধানীতে পলায়নরত জামাতাকে খুঁজতে বের হন তিনি।

৩. সারজামিনে আফতাব (সূর্যের দেশ) : আহমাদরেজা দারভিশ পরিচালিত এই চলচ্চিত্রে যুদ্ধবিধ্বস্ত খোররাম শহরের একটি হাসপাতাল ঘিরে আবর্তিত হয় গল্প। আহত রোগী, চিকিৎসক, নার্স ও বন্দীদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টায় উঠে আসে যুদ্ধের নির্মম বাস্তবতা।

৪. নাখোদা খোরশিদ (অধিনায়ক খোরশিদ) : নাসের তাকভাই নির্মিত এই চলচ্চিত্রে এক হাতে প্রতিবন্ধী একজন নাবিক নিজের বাঁচার তাগিদে চোরাচালানে জড়িয়ে পড়েন। দুর্বৃত্তদের বিশ্বাসঘাতে জর্জরিত হয়ে তিনি প্রতিশোধ গ্রহণ করেন কিন্তু নিজেও প্রাণ হারান।

এই মহতী প্রদর্শনী শুধু চলচ্চিত্র প্রদর্শনেই সীমাবদ্ধ নয়, প্রতিটি প্রদর্শনের পর থাকছে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আলোচনাসভা, যেখানে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে চলচ্চিত্রের নির্মাণরীতি, ভাষা, সামাজিক প্রেক্ষাপট ও বর্তমান সময়ের প্রভাব। চলচ্চিত্রপ্রেমীদের জন্য এই আয়োজন এক দারুণ সুযোগ-ইরানি সংস্কৃতির গভীরে ঢুকে পড়ার, অতীত ও বর্তমানের সেতুবন্ধন গড়ার।