বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে দ্রুতই যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুই লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানির অনুমতি দেয়া হচ্ছে। সম্পূর্ণ সরকারিভাবে এই গম ‘জি-টু-জি’ পদ্ধতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি একটি প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা হবে। প্রতি মেট্রিক টন (১০০০ কেজি) গম কিনতে ব্যয় হবে ৩০২.৭৫ ডলার। এই হিসাবে ২.২০ লাখ মেট্রিক টন গম কিনতে ব্যয় হবে (প্রতি ডলার ১২২.৭৫ টাকা ধরে) ৮১৭ কোটি ৫৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। আর প্রতি কেজি গমের দাম পড়বে ৩৭ টাকা ২০ পয়সা।
সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে উত্থাপন করা হবে। আগামীকাল বুধবার সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, সরকার থেকে সরকার (জি-টু-জি) পদ্ধতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউএস হুইট অ্যাসোসিয়েটস’ কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাগ্রোক্রপ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, সিঙ্গাপুর’ এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র হতে ‘কোস্ট ইন্স্যুরেন্স ফ্রেইট-লাইনার আউট (সিআইএফ-এলও) টার্মে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের জন্য ৬০:৪০ অনুপাতে দুই লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন গম সংগ্রহে প্রতি মেট্রিক টন ৩০২ দশমিক ৭৫ ডলার হিসেবে ৬ কোটি ৬৬ লাখ ৫ হাজার ডলার প্রয়োজন হবে। এ জন্য প্রতি ডলার ১২২.৭৫ টাকা হিসেবে বাংলাদেশী মুদ্রায় ব্যয় হবে ৮১৭ কোটি ৫৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম কেনার পেছনে যুক্তি তুলে ধরে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত ৩০ জুনে বাণিজ্য সচিবের পক্ষ থেকে খাদ্যসচিব বরাবর একটি চিঠি পাঠানো হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশী পণ্যের ওপর বিদ্যমান ১৫.৫% শুল্কের সাথে আমদানির ওপর আরো ৩৭% পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করলে সে দেশে বাংলাদেশের পণ্য রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে অধিক পণ্য আমদানির মাধ্যমে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম ও অন্যান্য কৃষিপণ্য আমদানির মাধ্যমে বাণিজ্যিক ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব। এই পদক্ষেপে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষা হবে এবং প্রস্তাবিত শুল্ক কমাতে আলোচনায় বা দর কষাকষি করতে সহায়ক হতে পারে। সরকারি খাতে গম এবং অন্যান্য খাদ্যশস্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হলে দেশটির সাথে বাংলাদেশের প্রায় ৬ বিলিয়ন বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসে ভূমিকা রাখতে পারে মর্মে তিনি মতামত দেন।
খাদ্য মন্ত্রণালয় জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি অধিদফতর থেকে জানানো হয়েছে, ইউএস হুয়েট অ্যাসোসিয়েটস (ইউএডব্লিউএ) হলো যুক্তরাষ্ট্রের গম শিল্পের প্রতিনিধিত্বকারী একটি সরকারি রফতানি বাজার উন্নয়ন সংস্থা এবং ইউএসডিএর সহযোগী অংশীদার।
উল্লেখ্য, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখার উদ্দেশ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক উৎস থেকে গম সংগ্রহ করে থাকে। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ৬,১০ লাখ মে.টন গম আমদানির জন্য বাজেটে অর্থের সংস্থান রাখা হয়েছে। দেশের সরকারি মজুদ বৃদ্ধি করে সরকারি খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণার্থে আমদানির ক্ষেত্রে বহুবিধ উৎস থাকলে দ্রুত খাদ্যশস্য আমদানি করা সহজতর এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ মূল্যে খাদ্যশস্য ক্রয় করা সম্ভব হয় বিধায় এ মন্ত্রণালয় প্রতি বছর সরকার থেকে সরকার (জি টু জি) পদ্ধতি এবং আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে গম সংগ্রহ করছে।