বাড্ডায় লাশ উদ্ধার

ইঁদুর খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে আসে নিখোঁজ তরুণ-তরুণীর লাশ

Printed Edition

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর বাড্ডায় নিখোঁজ হওয়া তরুণ-তরুণীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় কোনো ক্লু উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। কী কারণে ওই দুই তরুণ-তরুণীর মৃত্যু হলো সেই রহস্য এখনো জানা যায়নি। আবাসিক ভবনের যে বাসার সিসি ক্যামেরা ছিল সেগুলো নষ্ট হওয়ায় তদন্তের কোনো গতি মিলছে না বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় যুগল লাশের রহস্য শিগগিরই উদঘাটন করতে পারবেন বলে আশাবাদী তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। বাড়ির মালিক আতিক জানান, কয়েক দিন আগে তার স্ত্রী মারা যান। তিনি গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। সেখান থেকে গত শনিবার ফিরে বাসাবাড়ি পরিষ্কার করতে গিয়ে পচা গন্ধ পান। পরে খুঁজে বেশ কয়েকটি মরা ইঁদুর দেখে তা ফেলে দেন। গত রোববার সকালে উঠে আবারো গন্ধ পেয়ে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। পরে নিচতলার পরিত্যক্ত কারখানায় পরিষ্কার করতে পাঠান কেয়ারটেকার সুলতান আহমেদকে। তিনিই প্রথম লাশ দুটি দেখতে পান এবং পুলিশে খবর দেন। তিনি আরো বলেন, বাড়ির সিসি ক্যামেরাগুলো অচল থাকায় ঘটনার কোনো দৃশ্য পাওয়া যায়নি। পুলিশের ভাষ্যমতে, নিচতলার কারখানায় ‘টিপ’ তালা দেয়া ছিল, যা ভেতর ও বাইরে- দু’দিক থেকেই লাগানো যায়।

বাড়িতে থাকা কয়েকজন বলেন, ইবনে কাসীর ক্যাডেট মাদরাসার বাড্ডা শাখার কেয়ারটেকার (তত্ত্বাবধায়ক) হিসেবে কাজ করতেন সাইফুল ইসলাম (২৪)। আর একই মাদরাসায় রান্না ও পরিচ্ছন্নতার কাজ করতেন শাকিলা আক্তার (২০)। বিগত কয়েক মাস ওই ভবনে কাজের সুবাদে দু’জনের মধ্যে গড়ে উঠে প্রেমের সম্পর্ক। গত ২৩ অক্টোবর মাদরাসায় উপস্থিত ছিলেন দু’জনেই। ২৪ ও ২৫ তারিখ শুক্র-শনিবার মাদরাসা বন্ধ ছিল। ২৬ তারিখ মাদরাসা খুলতে সাইফুলকে খবর দেয়া হলে তাকে পাওয়া যায়নি। একই দিন শাকিলাও যায়নি মাদরাসায়। দু’জনের পরিবারকে জানানো হলে ২৭ তারিখ সাইফুল ও শাকিলা নিখোঁজের জিডিও করা হয়।

জিডির এক সপ্তাহ পর গত রোববার বিকেলে ওই ভবনের নিচ তলার পোশাক কারখানার ভেতর থেকে দু’জনের গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ভবনটি থেকে দুর্গন্ধ আসলে প্রথমে মৃত ইঁদুর ভেবে পরিষ্কার করানো হয়। কিন্তু গন্ধ না কমায় নিচতলার পরিত্যক্ত কারখানায় পরিষ্কার করতে যায় ওই ভবনের আরেক কেয়ারটেকার সুলতান আহমেদ। তিনিই প্রথম লাশ দুটি দেখতে পান।

বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) সফিকুল ইসলাম বলেন, জোড়া লাশ উদ্ধারের পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে কাজ করেন বাড্ডা থানা পুলিশ। লাশগুলো গলিত হওয়ায় সোমবার সকালে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়। পরে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এই ঘটনায় অজ্ঞাত আসামি উল্লেখ করে মামলা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ওই ভবনের আশপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। ভবনে সিসিটিভি আছে, কিন্তু তা নষ্ট। এই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা কাজ করছে। বাড়িওয়ালা, মাদরাসার দায়িত্বে থাকা কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে। সিসিটিভি সচল থাকলে তদন্তের কাজটি হয়তো আরো দ্রুত হতো।

উত্তর বাড্ডার পূর্বাঞ্চল ২ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাড়িটি ইবনে কাসীর ক্যাডেট মাদরাসা হিসেবেই পরিচিত। ভবনটির সামনে বিশাল এক মাদরাসার সাইনবোর্ড রয়েছে। তিনতলা বাড়িটির তৃতীয় তলায় ইবনে কাসীর ক্যাডেট মাদরাসা, দ্বিতীয় তলায় বাড়ির মালিক আতিক পরিবারসহ থাকেন। নিচতলায় পরিত্যক্ত পোশাক কারখানা এমব্রয়ডারি ফ্যাক্টরি।

গতকাল বিকেলে ওই ভবনে তদন্তকালীন সময়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইব্রাহীম বলেন, আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি। বাসার আশপাশে সিসি ক্যামেরা নাই। ভবনে সিসি ক্যামেরা আছে তবে তা অচল অবস্থায় আছে। বাড়ির মালিক ও মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলছি। তারাও সহযোগিতা করছে।