বিরল খনিজ রফতানিতে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ চীনের

Printed Edition

বিবিসি

উচ্চ প্রযুক্তি পণ্যের উৎপাদনে অপরিহার্য উপাদান বিরল খনিজ রফতানির নীতিমালা আরো কঠোর করেছে চীন। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ‘জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার উদ্দেশ্যে’ ঘোষিত নতুন এই বিধিনিষেধগুলো প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তি এবং অনুমোদনহীন বিদেশে সহযোগিতার বিষয়ে বিদ্যমান নিয়মগুলোকে আরো আনুষ্ঠানিকতা দিয়েছে। এই কঠোর নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে সম্ভবত বিদেশী অস্ত্র নির্মাতা ও কিছু সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানির কাছে এসব উপাদান রফতানি বন্ধ করতে চলেছে চীন। বিরল খনিজ রফতানি বর্তমানে বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য ও শুল্ক আলোচনার অন্যতম বিতর্কিত বিষয়। চলতি মাসের শেষের দিকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৈঠকে বসার কথা। এমন সময়ে এই ঘোষণা এলো।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিরল খনিজ আহরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ বা এর মাধ্যমে চুম্বক তৈরির প্রযুক্তি শুধুমাত্র সরকারের অনুমতি নিয়েই রফতানি করা যাবে। এই প্রযুক্তিগুলোর মধ্যে অনেকগুলোতেই ইতোমধ্যে বিধিনিষেধ ছিল। গত এপ্রিলেও চীন বেশ কিছু বিরল খনিজ এবং সংশ্লিষ্ট কাঁচামাল রফতানি নিয়ন্ত্রণ তালিকায় যুক্ত করেছিল, যার ফলে সে সময় বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দেয়। তবে নতুন এই ঘোষণায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এবং চিপ শিল্পের নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানিকে রফতানির লাইসেন্স দেয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এ ছাড়া চীনা কোম্পানিগুলো সরকারের অনুমতি ছাড়া বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সাথে বিরল খনিজ সম্পর্কিত কোনো প্রকল্পে কাজ করতে পারবে না।

যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে যে, তারা দ্বৈত ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তি (যা বেসামরিক ও সামরিক- দুই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায়) রাশিয়ায় পাঠানোর মাধ্যমে ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধকে পরোক্ষভাবে সহায়তা করছে। তবে বেইজিং বারবার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সর্বশেষ ঘোষণায় চীন আরো স্পষ্ট করেছে, কোন কোন প্রযুক্তি ও প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের আওতায় পড়বে। এর মধ্যে রয়েছে খনন, গলন ও পৃথকীকরণ, চৌম্বক উপাদান তৈরি এবং অন্যান্য উৎস থেকে বিরল খনিজ পুনরুদ্ধার বা রিসাইক্লিং। ঘোষণায় আরো বলা হয়েছে, উৎপাদন সরঞ্জামের সংযোজন, ডিবাগিং বা ত্রুটি বের করা, রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও উন্নয়ন কার্যক্রমও সরকারের অনুমতি ছাড়া রফতানি করা যাবে না।

১৭টি রাসায়নিকভাবে অনুরূপ উপাদানের একটি দলকে বলা হয় বিরল খনিজ, যা আধুনিক প্রযুক্তি পণ্যের উৎপাদনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এগুলো বিশুদ্ধ অবস্থায় পাওয়া অত্যন্ত কঠিন এবং উত্তোলন প্রক্রিয়া ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর তাই এদের ‘বিরল’ বলা হয়।

নিওডিমিয়াম খনিজটি শক্তিশালী চুম্বক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, যা লাউডস্পিকার, কম্পিউটার হার্ড ড্রাইভ, বৈদ্যুতিক গাড়ির মোটর, জেট ইঞ্জিন বানাতে প্রয়োজন হয়। চীন বর্তমানে বিরল খনিজ আহরণ এবং পরিশোধনের ক্ষেত্রে প্রায় একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রেখেছে। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার (আইএ) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে বিরল খনিজের ৬১ শতাংশ উৎপাদন এবং ৯২ শতাংশ প্রক্রিয়াজাতকরণ চীনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাই চীনের এই সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর। কেন না দেশটিতে বিরল খনিজ আহরণের বড় শিল্প থাকলেও সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করার পর্যাপ্ত সুবিধা নেই।