পররাষ্ট্র ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের গাফিলতিতে লিবিয়ায় ১১তম আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেননি বাংলাদেশ। বিশ্ব ধর্মীয় অঙ্গনে অত্যন্ত মর্যাদাশীল এ প্রতিযোগিতাটি গত ১ মুহাররম, শুক্রবার থেকে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে এ প্রতিযোগিতায় কারো অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। গত বৃহস্পতিবার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-১ শাখা হতে এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের নির্দেশে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মু. আঃ আউয়াল হাওলাদারকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। এ কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন উন্নয়ন অধিশাখার যুগ্মসচিব মো: সাজজাদুল হাসান ও প্রশাসন-১ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মো: আব্দুল মোমিন।
বাংলাদেশের লাখ লাখ মাদরাসা ছাত্রের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু এ ধরনের আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা। তারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন এ ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য। বিভিন্ন সময় বিশে^র বিভিন্ন দেশের এ ধরনের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশী প্রতিযোগীরা অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হয়ে পুরস্কার হিসেবে লাখ লাখ টাকার নগদ অর্থ পেয়ে থাকেন। এ ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী মুসলিম দেশগুলো বাংলাদেশ সম্পর্কে উঁচু ধারণা পোষণ করে। বিভিন্ন সময় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু থাকে বাংলাদেশ।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা যায়, লিবিয়া সরকার ১১তম আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য গত ১৬ এপ্রিল বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়। এতে প্রতিযোগী বাছাই করে লিবিয়া সরকারের কাছে প্রার্থীদের নাম পাঠানোর সর্বশেষ তারিখ ১৭ মে উল্লেখ করা হয়। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের বিমানের টিকিট এবং থাকা খাওয়াসহ যাবতীয় খরচ আয়োজক সংস্থা বহন করবে মর্মে পত্রে উল্লেখ করা হয়েছিল। প্রতিযোগিতার বিষয়ে লিবিয়া সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পত্র প্রেরণ করা হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা ১৪ দিন পর ৪ মে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নথি উত্থাপন করা হলে ইচ্ছাকৃতভাবে দেড় মাস নথিটি আটকে রাখা হয়। দেড় মাস পর নথি ছাড়া হয় এবং প্রার্থীদের নাম প্রেরণের সর্বশেষ তারিখ অর্থাৎ ১৭ মে পার হয়ে যাওয়ার প্রায় এক মাস পর গত ১৫ জুন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নামকাওয়াস্তে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে পত্র প্রেরণ করা হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তখন আর কিছুই করার ছিল না। কারণ তারা চিঠি পাওয়ার একমাস আগেই প্রার্থীদের নাম প্রেরণের সর্বশেষ তারিখ পার হয়ে যায়।
এ কারণে লিবিয়ার ত্রিপোলীস্থ আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের কাক্সিক্ষত প্রার্থীর অনুপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হতবাক হন। তারা তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকাস্থ লিবিয়া দূতাবাসে যোগাযোগ করেন। লিবিয়া দূতাবাস কর্তৃপক্ষ সাথে সাথে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে জানতে চান বাংলাদেশের প্রার্থী লিবিয়ায় কেন যাননি। বিষয়টি ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের নজরে আনা হলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আঃ ছালাম খানকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। ধর্মীয় অঙ্গনে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ এ ধরনের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের কোনো প্রতিনিধি না থাকার ঘটনা স্বাধীনতার পরে এই প্রথম। এ নিয়ে খোদ ধর্ম মন্ত্রণালয় তোলপাড় শুরু হয়েছে। সারা দেশের আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে আগ্রহী কুরআনের হাফেজদের মাঝেও বিরাজ করছে চরম অসন্তোষ। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কুরআন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশের সুনাম নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ধর্ম মন্ত্রণালয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসররা এখনো বহালতবিয়তে থাকায় লিবিয়ায় আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার আমন্ত্রণপত্রটি দীর্ঘ একমাস আটকে রাখা হয়।
এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ওই আমন্ত্রণপত্রটি ১৪ দিন আটকে রাখা হয়। এ নিয়ে কারো মাথাব্যথ্যা নেই। আমন্ত্রণপত্র আটকে রাখায় লিবিয়ায় কুরআন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে প্রার্থী বাছাই কার্যক্রম চালাতে পারেনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ।
এদিকে এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে পত্র প্রাপ্তির তারিখ এবং তা নিষ্পত্তিতে বিলম্বের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর দায়দায়িত্ব নির্ধারণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া, কমিটিকে সুপারিশসহ তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ধর্মসচিব এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামাণিক নয়া দিগন্তকে বলেন, কিছু কর্মকর্তার গাফিলতির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। এজন্য তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি প্রতিবেদন দিলে তখন প্রকৃত বিষয় জানা যাবে।