১৩ নভেম্বর ঘিরে কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

কিছুসংখ্যক অল্প বয়সী বহিরাগত চোরাগুপ্তা মিছিল, দু-একটি ককটেল বিস্ফোরণ ও কয়েকটি বাসে আগুন দিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কঠোরভাবে দমন করতে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য। যারা গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি প্রতিটি ঘটনা কঠোরভাবে দমন করতে সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেছে।

আমিনুল ইসলাম
Printed Edition

  • মাঠে নেমেছে বিপুলসংখ্যক পুলিশ
  • বৃদ্ধি করা হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি
  • ঢাকায় গ্রেফতার ৫৫২ জন

১৩ নভেম্বর ঘিরে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা চালানো হলেও বড় ধরনের কোনো নাশকতার শঙ্কা দেখছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। কিছুসংখ্যক অল্প বয়সী বহিরাগত চোরাগুপ্তা মিছিল, দু-একটি ককটেল বিস্ফোরণ ও কয়েকটি বাসে আগুন দিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কঠোরভাবে দমন করতে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য। যারা গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি প্রতিটি ঘটনা কঠোরভাবে দমন করতে সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেছে। পুলিশের একটি সূত্র বলছে, এটি বিরোধী দমন নয়, বরং দেশের মানুষের জানমাল রক্ষায় পুলিশের চেষ্টা মাত্র।

জানা গেছে, আগামীকাল ১৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচারের রায় ঘোষণার দিনক্ষণ নির্ধারণ করার কথা রয়েছে। ওই দিন আদালত যাতে রায়ের তারিখ ঘোষণা করতে না পারে সেজন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে নানা হুমকি ধমকি দিয়ে সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা লকডাউন ঘোষণা করেছে পতিত আওয়ামী লীগ।

পুলিশ বলছে, তারই ধারাবাহিকতায় চোরাগুপ্তা মিছিল, ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে আগুন দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এজন্য ইতোমধ্যে শুধু ঢাকাতেই ৫৫২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ বলেছে, গ্রেফতারকৃতদের বেশির ভাগই অল্পবয়সী বহিরাগত। এরা পালিয়ে থাকা আওয়ামী নেতাদের নির্দেশনা ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাঠানো অর্থের লোভে বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় এসে চোরাগুপ্তা মিছিল করছে। যে মিছিলের স্থায়িত্ব হচ্ছে ৩০ সেকেট থেকে সর্বোচ্চ এক মিনিট। মুখে মাস্ক অথবা মাথায় হেলমেট পরে খুব ভোরে অথবা জনবহুল কোনো এলাকায় একত্র হয়ে দ্রুততার সাথে মিছিল করে নিজেরাই ছত্রভঙ্গ হয়ে যাচ্ছে।

পুলিশ সূত্র বলছে, নাশকতার চেষ্টাকারীদের ঠেকানোর জন্য বিভিন্ন হোটেল, মেস, হোস্টেলগুলোতে নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। একই সাথে কোনো বাসাবাড়িতে কেউ বেড়াতে এলে তার সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। কারণ অনেকেই অত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে এসে নাশকতার সাথে যুক্ত হতে পারে। এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার এসএম সাজ্জাত আলী এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ১৩ নভেম্বর কার্যক্রম নিষিদ্ধ দলের ‘লকডাউন’ কর্মসূচি নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো: সাজ্জাদ আলী বলেন, কোনো শঙ্কা নেই ও চিন্তার কোনো কারণ নেই। ঢাকাবাসী তৎপরতা রুখে দেবে। ওই দিন বিপুল পুলিশ সদস্যসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঢাকায় মোতায়েন থাকবে। ঢাকার বাইরে থেকে লোকজন ঢাকায় এসে টাকার বিনিময়ে মিছিল করে আবার ঢাকার বাইরে চলে যায়। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখেছি, হেলমেট ও মাস্ক পরে ভোর বেলায় কিংবা ব্যস্ত সময়ে ককটেল বিস্ফোরণ করা হচ্ছে। ককটেল বিস্ফোরণ করানোর জন্য অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেদের ব্যবহার করা হচ্ছে।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি দল ১ নভেম্বর থেকে ১১ তারিখ পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ১৭টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। এ ছাড়া গত দুই দিনে রাজধানীতে ৯টি গাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে। এসব ঘটনায় গত দুই দিনে ৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দায়ের করা হয়েছে ১৭টি মামলা। গত অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত কার্যক্রম নিষিদ্ধ দু’টি দল ও তাদের অঙ্গসংগঠন অস্তিত্ব জানান দেয়ার জন্য ১৪টি ঝটিকা মিছিল করেছে। কয়েক দিন ধরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের পলাতক নেতাদের উসকানিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে চোরাগোপ্তা কায়দায় বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগ ঘটিয়ে জনমনে নতুন করে আতঙ্ক তৈরির চেষ্টা চলছে। ডিএমপি কমিশনার নগরবাসীকে কোনো আগন্তুককে আশ্রয় দেয়ার আগে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া এবং হোটেল, গেস্টহাউজে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে অতিথি ওঠানোর অনুরোধ করেন। এ ছাড়া ব্যক্তিগত ও যেকোনো ধরনের বাণিজ্যিক যানবাহন যেন কোনো অবস্থাতে অরক্ষিত না থাকে সে দিকে লক্ষ্য রাখার জন্য নগরবাসীকে অনুরোধ করেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নগরবাসীর ভূমিকার গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ছাত্র-জনতার সফল অভ্যুত্থানে আমরা স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছি। নাশকতার পরিকল্পনাকারীদের একইভাবে সবাই মিলে প্রতিহত করতে হবে। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, সম্মানিত নগরবাসীই আমাদের শক্তি। তাদের সাথে করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ যেকোনো ধরনের নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে সক্ষম। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সক্রিয় রয়েছেন। অতএব, নাশকতাকারীদের বিচ্ছিন্ন কর্মকাণ্ডে অহেতুক আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

এ দিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম তার ফেসবুক পেইজে লেখেন ‘১৯৭১ সালে লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে শুরু থেকেই একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আলোচনায় এসেছে আওয়ামী লীগ। সবশেষ দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থাকে বুকের রক্ত দিয়ে চ্যালেঞ্জ করে এ দেশের মুক্তিকামী শিক্ষার্থী- শ্রমিক-জনতা আওয়ামী লীগকে বিতাড়িত করেছে। সন্ত্রাসের জননী শেখ হাসিনা ১৩৭ শিশুসহ সহস্রাধিক মানুষকে হত্যা করার পরেও গণ-আন্দোলনে টিকতে না পেরে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তবে পালিয়ে গিয়েও তার সন্ত্রাস থামছে না।

বর্তমানে দেশ যখন একটি অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে এগোচ্ছে স্বভাবতই তা আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের ভালো লাগার কথা না। দলটি গত কয়েক দিন ধরে অনলাইনে-অফলাইনে তারই বহিপ্রকাশ ঘটাচ্ছে। আওয়ামী লীগের এই চোরাগোপ্তা সন্ত্রাস দেশের মানুষকে ভীতসন্ত্রস্ত করতে পারবে না। ইতোমধ্যে, নাশকতার সাথে জড়িত এবং নাশকতার পরিকল্পনায় সরাসরি সম্পৃক্ত বেশ কিছু আওয়ামী নেতাকর্মীকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সরকার এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থানে রয়েছে, নাগরিকরা সজাগ রয়েছে।

এসব সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মাধ্যমে গুম-খুন-নাশকতার রাণী শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ আবারো প্রমাণ করেছে যে তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা কতটা যৌক্তিক ছিল। পলায়নের পর থেকে এখন পর্যন্ত হাসিনা এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা যত ধরনের বক্তব্য-বিবৃতি দিয়েছে এর সব ক’টাই সন্ত্রাসকে উসকে দেয়ার উদ্দেশ্যে, রাজনীতিতে ফেরার ন্যূনতম অভিপ্রায়ও এসবে প্রকাশ পায় না।

জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) এএইচএম শাহাদাত হোসাইন নয়া দিগন্তকে জানান, শুধু রাজধানী ঢাকাই নয়, সারা দেশে পুলিশ সদস্যরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তারা যে কোনো ধরনের নাশকতা ঠেকাতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিরাপত্তা চৌকি বসিয়ে তল্লাশি কার্যক্রম চালাচ্ছে। বৃদ্ধি করা হয়েছে নিয়মিত টহল কার্যক্রম। শুধু নাশকতা ঠেকানোই নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব সৃষ্টির ব্যাপারে কাজ করছে পুলিশ।