নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, যেদিন নামাজের ইমামরা সমাজের ইমাম হবেন সেইদিন সত্যিকারের মুক্তি মিলবে। সমাজের ফায়সালা মসজিদের মিম্বর থেকে হবে এমন স্বপ্নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের ইমাম এবং খতিব সাহেবরা কারো করুণার পাত্র হবেন এটা আমরা দেখতে চাই না। খতিব-ইমামদের আসল মর্যাদা তাদের হাতে তুলে দিতে হবে।
গতকাল রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে সম্মিলিত ইমাম-খতিব জাতীয় সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। জামায়াত আমির বলেন, আমরা যখন জীবিত; আপনারা (ইমাম-খতিব) ইমামতি করেন; আমরা পেছনে দাঁড়িয়ে যাই। আমরা যখন দুনিয়া থেকে বিদায় নিই, তখনও আপনারা (ইমাম-খতিব) আমাদের ইমাম। শুধু ব্যতিক্রম এতোটুকু জীবিত অবস্থায় আপনাদের পেছনে দাঁড়াই। আর দুনিয়া থেকে চলে গেলে আমাদের লাশটা সামনে রেখে আপনারা দাঁড়ান। আপনারা হায়াতেও ইমাম; মউতেও ইমাম। আমরা এদিক থেকে কলিজার ভেতর থেকে আপনাদের প্রতি আজীবন সম্মান দেখাতে চাই।
রাসূলে কারীম সা: মহান রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে দায়িত্ব পেয়েই মসজিদ গড়েছিলেন এবং মসজিদকে আল্লাহ তাআলার পছন্দ অনুযায়ী মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন উল্লেখ করে জামায়াত আমির বলেন, তখন আলাদা কোনো ক্যাবিনেট হাউজ ছিল না এবং আলাদা কোনো রাষ্ট্রপতি অথবা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ছিল না। সমস্ত আঞ্জাম দেয়া হতো মসজিদে নববী থেকে। বিভিন্ন ধর্মের, মতের মানুষ, সারা বিশ্ব থেকে প্রতিনিধি তার কাছে এসেছেন। তিনি তাদের সবার সাথে মিলিত হয়েছেন মসজিদে নববীতে। রাষ্ট্রের সব কর্মকাণ্ডের পরামর্শ আহলে রায়েদের সাথে বলেছেন মসজিদে নববীতে। যুগের যতটুকু সময় মসজিদে নববী এবং মসজিদগুলোকে মর্যাদা দিয়ে চলেছে, এ মসজিদকেন্দ্রিক যে সমাজটা দুনিয়ার যে অঞ্চলে ছিল; সেই সমাজই ছিল বিশ্বের ভালো সমাজ। আর রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু সাল্লাম যে সমাজ মসজিদে নববীকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলেছিলেন সেই সমাজ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তিনি সার্টিফাই করে গিয়েছেন, ‘বিশ্ববাসী তোমরা জেনে রাখ আজ আমি যে সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলেছি আল্লাহর কিতাবের ভিত্তিতে এ সমাজটাই হচ্ছে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সমাজ।’ এর আগে এ ধরনের কোনো সমাজ জন্ম নেয়নি। ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো সমাজ জন্ম নেবে না।
ডা: শফিকুর রহমান বলেন, ওই সমাজকে অনুসরণ করে যেই সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠবে সেই সমাজ ব্যবস্থায় দুনিয়ায় শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসবে। নবীজির সমাজকে বাদ দিয়ে মনগড়া কোনো মতবাদ তন্ত্রমন্ত্র দিয়ে যে সমাজ গড়া হবে সেই সমাজ আল্লাহর কসম দুনিয়াকে শান্তি এবং সম্মান দু’টার কোনোটাই দিতে পারবে না এটি প্রমাণিত সত্য। দুনিয়ার যেকোনো মহাদেশে হোক, দেশে হোক, অঞ্চলে হোক এটি প্রমাণিত সত্য। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ। এ দেশের ৯০ ভাগ মুসলমান আল্লাহর ওপর ঈমান রাখে। আল্লাহর কুরআনকে মানে, নবী সা:কে শেষ পয়গম্বর স্বীকার করে। এ দেশে আইন চলবে কুরআনের আইনেই ইনশাআল্লাহ। এ জায়গায় যতদিন পর্যন্ত আমাদের দেশ না আসবে, এ দেশে আমরা কোনো সত্যিকারের মানবিক সমাজ কায়েম করতে পারব না।
এ দেশে অন্য ধর্মের মানুষ যারা আছে তাদের কী হবে? এমন প্রশ্ন তুলে নিজেই উত্তর দেন জামায়াত আমির। বলেন, কুরআন শুধু মানুষের সম্মানের গ্যারান্টি দেয় নাই। অধিকারের ওয়ারেন্টি দেয় নাই। কুরআন সমস্ত মাখলুকাতের অধিকারের ওয়ারেন্টি দিয়েছে। মানুষ তো অবশ্যই; মদীনায় যেমন সব ধর্মের মানুষ পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা নাগরিক নিরাপত্তা এবং অধিকার ভোগ করেছেন, আল্লাহর দেয়া আইনের এবং বিধানের ভিত্তিতে আমাদের প্রিয় দেশেও যদি সেই সমাজব্যবস্থা কায়েম হয় ইনশাআল্লাহ তাআলা আজিম সেই অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
ইমাম-খতিবদের জন্য উত্থাপিত সাত দাবির মধ্যে একটা দাবি- মসজিদ কমিটি ইমাম-খতিব সাহেবদের সম্মানের সাথে একমোডেট করতে হবে। এর বিপক্ষে মত দিয়ে তিনি বলেন, আমি এ দাবির সাথে একমত না। মসজিদ কমিটি হবে ইমাম-খতিব সাহেবের পরামর্শের ভিত্তিতে। এ কমিটির প্রাণপুরুষ হবেন খতিব কিংবা ইমাম। তাকে বাদ দিয়ে নয়। তাকে সহযোগিতা করার জন্য এ কমিটি হবে।
তিনি বলেন, খতিব-ইমাম সাহেবরাও মানুষ। তারাও ভুলের ঊর্ধেŸ নন। ভুল তো হতেই পারে। ভুল যদি হয় এর সমাধান করতে হবে সম্মানজনকভাবে। এ সমাধান এভাবে নয়। আমার পছন্দ হয়নি, আমি দুপুর বেলা জোহরের নামাজের সময় বলে দিলাম যে উনি কিভাবে ইমাম থাকেন আমি দেখে নেবো। আসরের নামাজের সময় দেখা গেল উনি আর মেহরাবে নাই, আমাদের ইমাম- খতিব সাহেবদের জন্য আমরা এমন ফায়সালা চাই না। এমন ফায়সালা বরদাস্ত করব না। তাদের পূর্ণ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে হবে। জামায়াত আমির বলেন, আপনাদের (ইমাম-খতিব) দাবিগুলো খুব ছোট। কিন্তু এত ছোট জায়গায় পড়ে থাকলে হবে না; আপনাদের এ সমাজের দায়িত্ব নিতে হবে। নামাজের ইমাম যেদিন সমাজের ইমাম হবেন সেইদিন ইনশাআল্লাহ আমরা সত্যিকারের মুক্তি পাবো।
ঢাকা সফররত ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সাথে জামায়াত আমিরের সৌজন্য বৈঠক : রাজধানীর শাহবাগের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ঢাকা সফররত ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং টোবগের সাথে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমানের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি অত্যন্ত আন্তরিকতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে জামায়াত আমিরের সাথে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের এবং আমিরে জামায়াতের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মাহমুদুল হাসান।
ঢাকা সফররত কমনওয়েলথ প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠক : রাজধানীর শাহবাগের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ঢাকা সফররত কমনওয়েলথ প্রতিনিধি দলের সাথে জামায়াতে ইসলামীর পাঁচ সদস্যের এক প্রতিনিধিদলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি অত্যন্ত আন্তরিকতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জামায়াত নেতা ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাসেম আরমান।
শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্য ব্যক্তিগত : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং চট্টগ্রাম অঞ্চল পরিচালক মাওলানা মুহাম্মাদ শাহজাহান সংগঠনের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীর ২২ নভেম্বর দেয়া এক বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, বক্তব্যটি আমরা দেখেছি। এটা একান্তই উনার বক্তব্য। এটার ব্যাখ্যা উনি ভালো দিতে পারবেন। তার এ বক্তব্য জামায়াত সমর্থন করে না। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। এ ঘটনায় আমরা অভ্যন্তরীণভাবেও আমাদের মতো ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনি আরো বলেন, আমরা মনে করি, প্রশাসন পূর্ণ পেশাদারিত্বের সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। এখানে আমাদের হস্তক্ষেপের কিছু নেই। অতীতে প্রশাসনের যারা পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করেননি, তারা দেশের ক্ষতি করেছেন।



