ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় মস্কোর সব বিমানবন্দর বন্ধ

বিবিসি
Printed Edition
মস্কো বিমানবন্দরে ইউক্রেনের হামলার জবাবে রাশিয়ার হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত খারকিভের একটি ভবনে উদ্ধারকাজে কর্মীরা : ইন্টারনেট
মস্কো বিমানবন্দরে ইউক্রেনের হামলার জবাবে রাশিয়ার হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত খারকিভের একটি ভবনে উদ্ধারকাজে কর্মীরা : ইন্টারনেট

ইউক্রেন টানা দ্বিতীয় রাতের মতো মস্কোকে লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে রাশিয়া। রাশিয়ার বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা রোসাভিয়াতসিয়া টেলিগ্রামে বলেছে, নিরাপত্তার খাতিরে রাজধানীর চারটি প্রধান বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন সোশাল মিডিয়ায় বলেন, ‘বিভিন্ন দিক থেকে আসা অন্তত ১৯টি ইউক্রেনীয় ড্রোন শহরে পৌঁছানোর আগেই ধ্বংস করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, কিছু ধ্বংসাবশেষ শহরের একটি প্রধান মহাসড়কে পড়েছে, তবে কোনো হতাহতের খবর নেই।

ইউক্রেন এখনো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে খারকিভের মেয়র বলেছেন, রাশিয়াও রাতের বেলায় কি কিয়েভ অঞ্চলের পাশাপাশি তার শহরে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। মস্কোর পাশাপাশি পেনজা ও ভোরোনেঝের মত রুশ শহরের গভর্নররা বলেছেন, মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত তাদের এলাকাকেও ড্রোন হামলার নিশানা করা হয়েছিল।

রুশ সামরিক ব্লগারদের অসমর্থিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মস্কোর দক্ষিণে একটি অ্যাপার্টমেন্টের জানালা ভেঙে গেছে ড্রোন হামলায়। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সোমবার জানিয়েছে, তারা রাতের বেলায় ২৬টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ধ্বংস করেছে।

তিন বছরের বেশি সময় আগে ইউক্রেইনে রাশিয়ার ‘পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন’ শুরুর পর মস্কোতে বেশ কয়েকবার ড্রোন হামলা চালিয়েছে কিইভ। মার্চে তাদের সবচেয়ে বড় হামলায় তিনজন নিহত হয়। রাশিয়ার কুর্স্ক অঞ্চলে ইউক্রেন নতুন করে প্রবেশের চেষ্টা করছে বলে সোমবার খবর প্রকাশিত হওয়ার মধ্যে ড্রোন হামলা ঘটল। ইউক্রেনের জেনারেল স্টাফের বরাতে কিইভ জানিয়েছে, রোববার কুর্স্ক অঞ্চলে রাশিয়ার টোটকিনো গ্রামের কাছে একটি ড্রোন কমান্ড ইউনিটে তারা হামলা চালিয়েছে।

মস্কো গত এপ্রিলে দাবি করেছিল, ইউক্রেনীয় বাহিনীর আকস্মিক অভিযানের ৯ মাস বাদে ওই অঞ্চলের পুরো নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছে। অন্যদিকে কিইভ জোর দিয়ে বলছে, তাদের সেনারা এখনো সীমান্তের ওপারে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার কর্মকর্তারা বলছেন, কুর্স্ক অঞ্চলের রাইলস্ক শহরে সোমবার ইউক্রেইনের হামলায় একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

কুর্স্ক অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত গভর্নর আলেকজান্ডার খিনশটেইন টেলিগ্রাম পোস্টে জানিয়েছেন, রাইলস্কের একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের দু’টি ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিস্ফোরণে দুই কিশোর আহত হয়েছে। একাধিক রাশিয়ান সামরিক ব্লগার কিছু ছবি পোস্ট করে বলেছে, ইউক্রেনীয় বাহিনী সীমান্তের ট্যাংক ফাঁদ ভেঙে গ্রামে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল। বিবিসি ওই ছবিগুলো যাচাই করতে পারেনি।

ব্লগারদের ভাষ্য অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় বাহিনী সোমবার সীমান্তের উপর দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল এবং বিশেষ যানে চড়ে বোমাপোঁতা এলাকা অতিক্রম করেছিল। ব্লগার আরভোয়েনকার বলেছেন, ‘শত্রুরা রাতে রকেট দিয়ে সেতু উড়িয়ে দেয় এবং সকালে সাঁজোয়া বাহিনী হামলা চালায়। বোমারোধী যানগুলো বোমাপোঁতা এলাকায় পথ তৈরি করতে শুরু করে, তারপরে সেপথ দিয়ে সেনাবাহী সাঁজোয়া যান চলতে থাকে। সীমান্তে তুমুল যুদ্ধ চলছে।’

ইউক্রেন সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছে, কুর্স্ক অভিযান শুরুর ৯ মাস পরও ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা বাহিনী রাশিয়ার কুর্স্ক অঞ্চলের ভূখণ্ডে সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখেছে। যদিও মস্কোর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। কিছু সামরিক ব্লগার প্রকাশিত মানচিত্রে দেখা যাচ্ছে, ইউক্রেইনের বাহিনী সীমান্তের দু’টি স্থান অতিক্রম করে টোটকিনোর দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তার কাছেই ড্রোন কমান্ড ইউনিটে আঘাত হানা হয়।

টোটকিনো থেকে ১২ কিলোমিটার দূরের উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের সুমি কর্তৃপক্ষ দু’টি বসতি থেকে লোকজনকে সরে যেতে বলেছে। ইউক্রেন মূলত একটি বাফার জোন তৈরি করতে এবং সুমি ও এর আশপাশের এলাকা রক্ষায় ২০২৪ সালের অগাস্টে কুর্স্কে আকস্মিক আক্রমণ চালিয়েছিল। তাছাড়া ভবিষ্যতের আলোচনায় দর কষাকষির হাতিয়ার হিসেবেও যাতে অঞ্চলটিকে ব্যবহার করা যায়, সেই ভাবনাও কাজ করে ওই আক্রমণের পেছনে।