দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকার পর হঠাৎ করেই জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব:) আখতারুজ্জামান। তার এই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ঘিরে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। কেন এই দলবদল, বিএনপির সাথে তার দূরত্বের কারণ, মুক্তিযুদ্ধ, ঐক্য রাজনীতি, ভারতীয় আধিপত্যবাদ- সবকিছু নিয়েই খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি। মেজর (অব:) আখতার বলেছেন- বিভেদের রাজনীতি নয়, ঐক্যের রাজনীতিই তার লক্ষ্য। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন, নয়া দিগন্তের ডিজিটাল বিভাগের প্রধান মোস্তাফিজুর রহমান। সাথে ছিলেন আহমাদ জামীল হক।
প্রশ্ন : হঠাৎ করেই আপনার জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেয়ার কারণ কী? অন্য কোনো দল নয় কেন?
মেজর (অব:) আখতারুজ্জামান : এই প্রশ্নটা আসাই স্বাভাবিক- এই বয়সে এসে কেন জামায়াতে যোগ দিলাম। বাস্তবতা হলো, প্রায় আড়াই বছর ধরে আমার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় ছিল না। যে দলটি আমি আজীবন করেছি, যার প্রতি আমার সততা, নিষ্ঠা ও আনুগত্য নিয়ে আমার নিজের কোনো প্রশ্ন নেই, সেই দল বিএনপি আমাকে বহিষ্কার করে রেখেছে।
এই সময়টাতে এমন একটা ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে যে, বিএনপির কোনো নেতাকর্মী যদি আমার সাথে দেখা করে, কথা বলে- এমনকি সেটা যদি বিয়ে, সামাজিক অনুষ্ঠান বা জানাজাতেও হয়- তাহলে ছবি দেখিয়ে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। কার্যত আমাকে বিএনপির জন্য ‘আতঙ্ক’ বানিয়ে ফেলা হয়েছিল। এই পরিস্থিতি তৈরি করেছেন তারেক রহমান সাহেব।
বিগত দুই বছরে আমি এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলিনি। নিজের কষ্ট নিজেই বহন করেছি। সম্প্রতি নির্বাচন ঘোষণা হলো, আমার এলাকায় মনোনয়ন দেয়া হলো। আমি আগেই বলে রেখেছিলাম- আমি আর নির্বাচন করব না। সুতরাং কে মনোনয়ন পেলেন, সে বিষয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। তবুও আমাকে ঘিরে ভয় কাটেনি।
একসময় দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়া আমাকে দলের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতামত জানতে চাইতেন। এখন আর সেটার প্রয়োজনও মনে করা হয় না। অথচ এলাকায় আজও আমার গ্রহণযোগ্যতা আছে। আমি প্রকাশ্যেই প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছি, ভিডিও বার্তা দিয়েছি। তারপরও বলা হয়েছে- আমার সাথে যোগাযোগ করলে নাকি প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যেতে পারে!
আমার নেতাকর্মীরা বারবার তারেক রহমানের কাছে আবেদন জানিয়েছে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য। কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনি। এই উপেক্ষা, এই অপমান আমাকে গভীরভাবে ব্যথিত করেছে।
এর মধ্যেই তারেক রহমান একটি বক্তব্য দেন, যেখানে তিনি বলেন- একটি রাজনৈতিক দল ১৯৭১ সালে লাখ লাখ মানুষ হত্যা করেছে, মা-বোনদের ধর্ষণ করেছে। এটা যে জামায়াতে ইসলামীর দিকেই ইঙ্গিত, তা স্পষ্ট। এই বক্তব্য আমার কাছে খুব খারাপ লেগেছে।
আজ আমাদের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ঐক্য। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর যদি আমরা নিজেরাই বিভক্ত হই, তাহলে ফ্যাসিস্ট শক্তির ফিরে আসার সুযোগ তৈরি হবে। এমন সময়ে এ ধরনের বক্তব্য কাম্য নয়।
এই প্রেক্ষাপটে আমি জামায়াতে ইসলামীর কাছে জানতে চাই- তারা কেন এর প্রতিবাদ করছে না। তখন দলের সেক্রেটারি জেনারেল আমাকে আমিরের সাথে চায়ের দাওয়াত দেন। পরদিন সকালে সাক্ষাৎ হয়। তিনি আমাকে গঠনতন্ত্র দেন। আমি বলি, গঠনতন্ত্র আমার জানা। তখন তিনি সরাসরি জিজ্ঞেস করেন- আমি কি তাদের সাথে যুক্ত হতে চাই। আমি বলি, যদি আমাকে গ্রহণ করেন, তাহলে যোগ দেবো। তারা আমাকে গ্রহণ করেছেন, এবং সেদিনই আমি জামায়াতে যোগ দিই।
প্রশ্ন : আপনার এই সিদ্ধান্ত কি হঠাৎ নেয়া, নাকি আগে থেকেই ভাবনা ছিল?
মেজর (অব:) আখতারুজ্জামান : আমি তো ১৯৯১ সাল থেকে বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত। জামায়াতবিরোধী রাজনীতিই করেছি দীর্ঘদিন। তাহলে প্রশ্ন আসে- জামায়াত আমাকে নেবে কেন?
আমার উপলব্ধি হলো, বর্তমান প্রজন্মের জামায়াত ১৯৭১-বিরোধী নয়। আজ যারা নেতৃত্বে আছে, তাদের অধিকাংশের বয়স ৫০-এর নিচে। তারা মুক্তিযুদ্ধের পর জন্মেছে। তারা কবে গণহত্যা করল?
জামায়াতকে ‘৭১-এর দল’ হিসেবে একঘরে করার বয়ান মূলত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশল। সেই বয়ান আমরা কেন বহন করব? আমরা তো বলতাম- জামায়াত ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করে, এটাই আমাদের আপত্তি। কিন্তু তাদের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বলা- এটা একতরফা রাজনীতি।
এই আপত্তি আমি তাদের সামনে খোলাখুলি বলেছি। তারা বিষয়টি ইতিবাচকভাবেই নিয়েছে। সেখান থেকেই পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তি তৈরি হয়েছে।
প্রশ্ন : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোনা যাচ্ছে, নির্বাচনে কোনো শর্তে আপনাকে দলে নেয়া হয়েছে- এটা কি সত্য?
মেজর (অব:) আখতারুজ্জামান: না, কোনো দেনা-পাওনা বা শর্তের সম্পর্ক নয়। এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বোঝাপড়া ও সৌহার্দ্যরে সম্পর্ক।
আমি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তিকে হেয় করব না- এই জায়গাটা আমাদের কমন গ্রাউন্ড। আমরা যুদ্ধ করেছি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। ৯৪ হাজার আত্মসমর্পণকারী বন্দীর মধ্যে ২৯ হাজার ছিল রাজাকার ও আলবদর। তারা তখনই দেশ ছেড়েছে। যারা থেকে গেছে, তারা বিচারের মুখোমুখি হয়েছে, পরে বঙ্গবন্ধু সাধারণ ক্ষমা দিয়েছেন। বিষয়টা ঐতিহাসিকভাবে নিষ্পত্তি হয়েছে।
আজ যারা জামায়াতে যোগ দিচ্ছেন, তারা কি যুদ্ধাপরাধী? নতুন প্রজন্ম সততা, ন্যায় ও ধর্মীয় মূল্যবোধের কথা শুনে আকৃষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলমান- ইসলামভিত্তিক মূল্যবোধ নিয়ে রাজনীতি করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
ইসলাম কোনো রিজিড ধর্ম নয়। সময়ের সাথে ব্যাখ্যা ও প্রয়োগের জায়গা আছে। সৎকাজের কোনো একক সংজ্ঞা নেই- এই কথাটাই ইসলাম শেখায়।
প্রশ্ন : জামায়াত কি শরিয়াহ আইন প্রতিষ্ঠা করতে চায়?
মেজর (অব:) আখতারুজ্জামান : জামায়াতের গঠনতন্ত্রে ‘শরিয়াহ আইন কায়েম’- এই কথা নেই। তারা বলেছে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রাজনীতি করবে।
আমি খাওয়ার আগে ‘বিসমিল্লাহ’ বলি- এটাই কি জামায়াত হওয়া? শহীদ জিয়াউর রহমান সংবিধানের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ যুক্ত করেছিলেন। তাই বলে কি তিনি জামায়াত হয়ে গিয়েছিলেন?
এই কন্ট্রাডিকশনগুলো আওয়ামী লীগ নিজেদের মতো করে তৈরি করেছে। জামায়াত আমার যুদ্ধকালীন প্রতিপক্ষ ছিল না। প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তানি বাহিনী।
প্রশ্ন : বিএনপি-জামায়াত অনৈক্যের পেছনে কী কারণ দেখছেন?
মেজর (অব:) আখতারুজ্জামান : ১৯৭১ সালে চীন ও আমেরিকা পাকিস্তানকে অস্ত্র দিয়েছে। তাহলে কি আমরা তাদের যুদ্ধাপরাধী বলছি? আমার বাবা যুদ্ধ করেননি, সংসার চালানোর জন্য চাকরি করেছেন- তাই বলে কি তিনি রাজাকার?
আমরা সবাই একেক রকম পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু আজকের বাস্তবতায় সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ঐক্য। ফ্যাসিস্ট সরকার পতন এককভাবে কেউ ঘটাতে পারেনি- না বিএনপি, না জামায়াত, না ছাত্ররা। সবাই মিলেই পেরেছে।
আজ যদি আমরা ঐক্য ধরে রাখতে না পারি, সবচেয়ে লাভবান হবে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ। বিভেদের রাজনীতি কেন করব? জনগণই তো শেষ পর্যন্ত রায় দেবে।
এই বিভেদ দূর করে বৃহৎ ঐক্য গড়ার আকাক্সক্ষাই আমাকে জামায়াতের রাজনীতির দিকে টেনেছে।
প্রশ্ন : ঐক্যের প্রশ্নে জামায়াতকে কিভাবে দেখছেন?
মেজর (অব:) আখতারুজ্জামান : এখন পর্যন্ত ইতিবাচকভাবেই দেখছি। কিছু নেতা ব্যক্তিগত কারণে দায়িত্বহীন কথা বলতে পারেন, কিন্তু দলীয়ভাবে জামায়াত ঐক্যের পক্ষে। নইলে তারা আমাকে গ্রহণ করত না।
প্রশ্ন : ভারতীয় আধিপত্যবাদ প্রসঙ্গে আপনার মূল্যায়ন কী?
মেজর (অব:) আখতারুজ্জামান : আধিপত্যবাদ মানে প্রভাব বিস্তার। সেটি বন্ধুত্ব দিয়েও হতে পারে, চাপ দিয়েও হতে পারে। অতীতে ভারত আওয়ামী লীগের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে। বিএনপির সময়ে পারেনি।
বর্তমান সরকার দুর্বল হলেও ভারতের কাছে নতি স্বীকার করেনি। ভারত হয়তো আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলছে, কিন্তু আমরা আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি। আমরা ভারতবিরোধী কেন- এর কারণ যদি ভারত দূর করে, তাহলে সম্পর্কের সমীকরণ বদলাতেও পারে।
রাজনীতিতে স্থায়ী শত্রু বা বন্ধু নেই- স্বার্থই মুখ্য।
প্রশ্ন : ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত?
মেজর (অব:) আখতারুজ্জামান : ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক হওয়া উচিত প্রতিবেশীর সাথে প্রতিবেশীর সম্পর্কের মতো। সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে চলার সম্পর্ক। কিন্তু ভারত যদি সেই সম্পর্ককে বন্ধুত্বের বদলে ‘বিগ ব্রাদার’ আচরণে রূপ দিতে চায়, তাহলে তার ফলাফল কখনোই ভালো হবে না।
আমি একটা উপমা দেই- ভারত যদি তার কাঁঠালগাছের ছায়া আমার ঘরের ওপর ফেলতে চায়, তাহলে সেই গাছের ডাল আমাকে কাটতেই হবে। সেটি সালিসের মাধ্যমে হোক, বিচারের মাধ্যমে হোক বা প্রয়োজনে সংগ্রামের মাধ্যমেই হোক- কারণ ওই ছায়ার কারণে আমি আমার ঘরে বসবাসই করতে পারছি না।
এ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে ভারতের সংবেদনশীলতা ও সহানুভূতির ওপর। ভারত যদি বাংলাদেশকে বন্ধু হিসেবে দেখে, তাহলে আমি সবসময় বন্ধুত্বের আলোচনায় প্রস্তুত। কিন্তু যদি বড়ভাইয়ের চোখে দেখে, তাহলে আমি শেষ মানুষ যে সেই আলোচনায় যাবো।
আমার ব্যাপারে কে কী বলল, কে মাইন্ড করল- তাতে আমার কিছু যায়-আসে না। কারণ পৃথিবীতে টিকে থাকতে হলে বন্ধু দরকার, কিন্তু বন্ধুত্ব জোর করে চাপিয়ে দেয়া যায় না।
প্রশ্ন : ভারতের অভিযোগ- বাংলাদেশে ইসলামী মৌলবাদ ও উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিচ্ছে। এ অভিযোগ কতটা সত্য?
মেজর (অব:) আখতারুজ্জামান : ভারত সাধারণত তখনই এ অভিযোগ তোলে, যখন আমাদের ভেতরে কিছু উগ্র অ্যাকশন ঘটে। ধরুন, হাদি গুলিবিদ্ধ হয়েছে, কিন্তু এখনো কাউকে ধরা যায়নি। আমরা বলছি- ওরা ভারতে পালিয়ে গেছে। প্রশ্ন হলো ঢাকা থেকে সীমান্ত তো ১০০-১৫০ কিলোমিটার দূরে। তারা ঢাকা থেকে বের হলো কিভাবে?
আমরা যখন বলি- ওরা সীমান্ত পেরিয়ে গেছে, তখন তার কোনো রেকর্ড দেখাতে পারছি না। অথচ একই সাথে দাবি করছি- বিজিবি সব কিছু নজরে রাখে। তা হলে এত আওয়ামী লীগের লোক পালিয়ে গেল, কে খুন করল, কে পালালো- এগুলোর তথ্য আমরা জানি না কেন?
এ ধরনের দায়িত্বহীন ও লাগামহীন বক্তব্য একটি রাষ্ট্রের সাথে আরেকটি রাষ্ট্রের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করতেই বাধ্য করে। পরে যখন ভারত পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখায়, তখন আমরা বলি- ভারত দাদাগিরি করছে।
একটা বিষয় মনে রাখতে হবে- নেতারা সাধারণ মানুষের মন জুগিয়ে চলে না, বরং সাধারণ মানুষ নেতাদের অনুসরণ করে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা অনেক সময় সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য বক্তৃতা দেই, তালি পাওয়ার রাজনীতি করি। আমরা তখন নেতা থাকি না, বিনোদনদাতা হয়ে যাই।
নেতৃত্ব মানে জনগণকে মোটিভেট করা, সঠিক পথে নেয়া, জনমত তৈরি করা- জনমতের পেছনে দৌড়ানো নয়।
প্রশ্ন : আসন্ন নির্বাচনে জনমতের প্রভাব কতটা পড়তে পারে? বিশেষ করে ভারতপক্ষ বা বিপক্ষ ইস্যু কী প্রভাব ফেলবে?
মেজর (অব:) আখতারুজ্জামান : আমি পরিষ্কারভাবে বলছি- বাংলাদেশের মানুষ কখনো ভারত চিন্তা করে ভোট দেয় না। মানুষ ভোট দেয় স্থানীয় রাজনীতি বিবেচনা করে। প্রার্থীর সাথে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক কেমন, সে কেমন মানুষ- এ প্রশ্নটাই মুখ্য।
যদি কোনো প্রার্থী সরাসরি জনগণের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে, তাহলে তার কাজ সহজ হয়। কিন্তু বাহিনী বা সন্ত্রাসনির্ভর প্রচারণা হলে মানুষ ভয় পায়। তখন ভোটের আগ পর্যন্ত সে তার মনের কথা প্রকাশ করে না।
অনেক সময় আমরা ধরে নেই- অমুক জিতবে। কিন্তু মানুষ ভয়ে কথা বলে না, ভোট দেয় চুপচাপ। ভোটকেন্দ্রে সে মাথা নিচু করে নয়, চার পাশ দেখে বুঝে তার পর ভোট দেয়। এটিই জনগণের শক্তি।
দ্বিতীয় বিষয় হলো- দল ও প্রার্থীর ভাবমূর্তি। আজ আওয়ামী লীগের কেউ টাকা দিলেও পাস করতে পারবে না। নৌকা মার্কায় আওয়ামী লীগের লোকজন নিজেরাই ভোট দিতে চায় না। কারণ ভাবমূর্তি ধ্বংস হয়ে গেছে। এখানে ভারত-পাকিস্তান কোনো ফ্যাক্টর না- ভাবমূর্তিই মূল বিষয়।
তৃতীয় ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়- নির্বাচনী পরিবেশ। পরিবেশ যদি শান্তিপূর্ণ হয়, মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়।
এই পরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। সরকার যদি ব্যর্থ হয়, দায় সরকারকেই নিতে হবে- এটি চরম ব্যর্থতা। প্রার্থী হিসেবে আমি চাইব- পাঁচটি কেন্দ্র দখল করে লিড নিতে। এটিই নির্বাচনের কেমিস্ট্রি। কিন্তু সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করবে সরকার।
রাজনৈতিক দল মাঠে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে না। এক দল নীরব থাকলে দুর্বলতা প্রকাশ পায়, আর দুর্বলকে কেউ ছাড় দেয় না। ভোটের সময় নিরাপত্তা দিতে না পারলে- ভোটের পর মানুষের ধান, ঘর, জীবন রক্ষা করবে কিভাবে? তাই সরকারকে শক্ত হাতে দায়িত্ব নিতে হবে।
প্রশ্ন : শেখ হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দিয়েছে। ফেরত চেয়ে চিঠি দেয়া হলেও ভারত সাড়া দেয়নি- এতে কি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে প্রভাব পড়বে?
মেজর (অব:) আখতারুজ্জামান : ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শংকর পরিষ্কারভাবে বলেছেন, শেখ হাসিনা নিজে না চাইলে তাকে ফেরত পাঠানো যাবে না। মেসেজ পরিষ্কার- এই সরকার ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বা নির্বাচনের পর কিছু দিন থাকতে পারে, কিন্তু ভারত এই সময়ে কোনো আলোচনায় যাবে না।
তারা চাইছে না নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়ুক, আবার তারাও সেই প্রভাবের কারণ হতে চায় না। ফলে যেই দল নির্বাচনে জয়ী হবে, এ বিষয়টি সমাধান করার দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে।
আমি নতুন একটি রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়েছি, নবীন সদস্য- এ বিষয়ে আমার কিছু বলার সুযোগ নেই।
প্রশ্ন : জামায়াত যদি আপনাকে আপনার এলাকা থেকে মনোনয়ন দেয়, তখন আপনার অবস্থান কী হবে?
মেজর (অব:) আখতারুজ্জামান : আমি বিনয়ের সাথে বলছি- তাহলে বিষয়টি বেচাকেনার মতো হয়ে যাবে। কেউ বলবে, আমি এমপি হওয়ার জন্য দল বদল করেছি। কিন্তু আমি কোনো পদ, কোনো মনোনয়ন, কোনো লেনদেনের জন্য আসিনি।
আমি আদর্শিক জায়গা থেকে জামায়াতে যোগ দিয়েছি। আমি দেখেছি- দুর্নীতির প্রশ্নে জামায়াত অন্য অনেক দলের চেয়ে এগিয়ে। তাদের কর্মকর্তাদের ক্লিন ইমেজ আছে।
আরেকটি বিষয়- আজ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিক্ষিত ও সচেতন শ্রেণী জামায়াতের সাথে আছে। শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী- সব শ্রেণীর মানুষ এখানে যুক্ত। এখানে ‘সঙ্গদোষে নষ্ট’ হওয়ার কিছু নেই।
আমার মতো একজন মানুষকে সুযোগ দেয়ার জন্য আমি জামায়াতের আমিরের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি এটুকু বলেছি- যদি আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়, আমি দ্বিতীয় সারির মানুষ নই। জেলা বা বিভাগীয় পর্যায়ে দায়িত্ব পেলে, আমার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দিয়ে তা সুরাহা করার চেষ্টা করব।



