প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আজ মালয়েশিয়া যাচ্ছেন। এ সফরে অভিবাসন ও বিনিয়োগকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ।
এ সফর নিয়ে গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা সফর। এই সময়ে অনেকগুলো সমঝোতাস্বাক্ষর হবে। আমরা মালয়েশিয়ার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর করতে চাচ্ছি।
সফরের মূল ফোকাস অভিবাসন নিয়ে আলাপ, দ্বিতীয় ফোকাস হচ্ছে বিনিয়োগ।
বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানি খাতের জন্য মালয়েশিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা অভিবাসন খাতকে এমন জায়গায় নিয়ে যেতে চাই যাতে মালয়েশিয়া আমাদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক জনবল নেয়। এগুলো নিয়ে আলাপ হবে এবং এটার আলোকে চুক্তি স্বাক্ষর হবে। মালয়েশিয়ার বড় বড় কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সাথে কথা হবে। আগামীকাল একটি বিজনেস কনফারেন্স আছে। একই দিন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সাথে প্রধান উপদেষ্টার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। আমরা আশা করছি, মালয়েশিয়ার সাথে আমাদের যে সুসম্পর্ক আছে, সেটি একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। পরদিন প্রধান উপদেষ্টাকে মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি কেবাংসান (ইউকেএম) সম্মানসূচক ডিগ্রি দেবে। এই অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীম উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগের মহাপরিচালক শাহ আসিফ রহমান বলেন, প্রধান উপদেষ্টার মালয়েশিয়া সফরে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, জ্বালানি সহযোগিতা, হালাল অর্থনীতি, সেমিকন্ডাক্টর শিল্প, কৃষি, শিক্ষা ও দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পৃক্ততাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরো বাড়ানো নিয়ে আলোচনা হবে। এ সফরে বাংলাদেশের আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হওয়া এবং রিজিওনাল কম্প্রিহেন্সিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্টে যোগ দেয়ার আবেদন জোরালোভাবে তুলে ধরা হবে। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে আরো সক্রিয় ও কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানানো হবে।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সাথে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল মালয়েশিয়া যাচ্ছেন। প্রতিনিধিদলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা ফওজুল কবির খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুতফে সিদ্দিক, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক বিন হারুনসহ ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা রয়েছেন।
শাহ আসিফ রহমান জানান, সফরের প্রথম দিন প্রধান উপদেষ্টাকে গার্ড অব অনার দেয়া হবে। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানাবেন। দ্বিতীয় দিন পুত্রজয়ায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সাথে বৈঠক হবে। দ্বিপক্ষীয় এ বৈঠকে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশ থেকে নতুন কর্মী নিয়োগ, আরো বেশি পেশাদার নিয়োগ, শ্রমিকদের সুযোগ সুবিধার বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে আলোচনা করা হবে।
এ বৈঠকের পর দু’দেশের প্রতিনিধি পর্যায়ে বৈঠক এবং সমঝোতাস্মারক সই ও নোট বিনিময় হবে। প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, জ্বালানিবিষয়ক সহযোগিতা, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং মালয়েশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) মধ্যে ব্যবসায়িক কাউন্সিল গঠন, বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিএমসিসিআই) ও মালয়েশিয়ান ইনস্টিটিউট অব মাইক্রোইলেক্ট্রনিক সিস্টেমের (এমআইএমওএস) মধ্যে সহযোগিতা, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এবং মালয়েশিয়ার ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (আইএসআইএস) মধ্যে সহযোগিতাসহ মোট পাঁচটি সমঝোতাস্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে হালাল ইকোসিস্টেম, উচ্চশিক্ষা এবং কূটনীতিক প্রশিক্ষণ একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা বিষয়ে তিনটি নোট বিনিময় হওয়ার কথা রয়েছে। দুই দেশের সরকার প্রধান সমঝোতাস্মারক স্বাক্ষর এবং নোট বিনিময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। এরপর দুপুরে প্রধান উপদেষ্টা তার সম্মানে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন। একই দিন বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা একটি ব্যবসায়িক ফোরামে অংশ নেবেন। এর পর তিনি মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের সাথে মতবিনিময় সভায় যোগ দেবেন। প্রধান উপদেষ্টা ১৩ আগস্ট মঙ্গলবার ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন।