নীতিমালা ভেঙে ঝিলমিলে ৩২ প্লট বাড়তি বরাদ্দ

পেয়েছে ফ্যাসিবাদের আনুকূল্যপ্রাপ্তরা

লটারির মাধ্যমে মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকরা প্লট পেলেও তা বুঝিয়ে দিতে পারেনি দুই যুগের বেশি সময়েও।

হামিম উল কবির
Printed Edition

জায়গা না থাকলেও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঝিলমিল প্রকল্পে ৩২টি প্লট বেশি দেয়া হয়েছে। এটা ঘটেছে গত আওয়ামী লীগ আমলে ২০১৯ সালে। প্লট বরাদ্দের নীতিমালা ভেঙে আওয়ামী এলিটদের এ প্লটগুলো দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

রাজধানীর বাইরে বুড়িগঙ্গার তীরে কেরানীগঞ্জে ৩৮১.১১ একর জায়গাজুড়ে আবাসন প্রকল্পটি গড়ে তোলা হয়েছে। ১৯৯৭ সালে প্রকল্প শুরু হলেও গত ২৭ বছরেও স্থানটিকে বসবাসের উপযোগী করতে পারেনি রাজউক। লটারির মাধ্যমে মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকরা প্লট পেলেও তা বুঝিয়ে দিতে পারেনি দুই যুগের বেশি সময়েও। এর মধ্যেই লটারিতে প্রাপ্ত সাধারণ মানুষের প্লট বাতিল করে সংরক্ষিত নীতিমালার দোহাই দিয়ে কিছু প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে মন্ত্রী-এমপি এমনকি বিচারপতিরাও রয়েছেন। আওয়ামী আমলে রাজউকের কিছু কর্মকর্তার অতিউৎসাহে এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এ প্লটগুলো দেয়া হয়েছে। বেশি প্লট বরাদ্দে বিগত সময়ের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সরাসরি নির্দেশনাও ছিল। এভাবেই সাধারণ প্লট গ্রহীতাদের বঞ্চিত করা হয়।

তবে কাদের প্লট বাতিল করা হয়েছে তা সুনির্দিষ্ট করে এখনো জানা না যায়নি। ফলে লটারির মাধ্যমে বৈধ প্লট গ্রহীতারা এখন পর্যন্ত জানেন না তাদের মধ্যে কাদের বঞ্চিত করেছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার।

ঝিলমিল প্রকল্পে ৩৮১.১১ একরের মধ্যে মোট এক হাজার পাঁচ কাঠার ৩৯৭টি এবং তিন কাঠার এক হাজার ৭৩টি প্লট রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ কাঠার ৪০টি, তিন কাঠার ১০১টি প্লট রাজউকের সংরক্ষিত ধারার আওতায় সংরক্ষিত ছিল। পাঁচ কাঠার ৪০টি সংরক্ষিত প্লট থাকলেও ক্ষমতা দেখিয়ে দেয়া হয়েছে ৭০টি এবং তিন কাঠার প্লট দিয়েছে ১০৩টি। এর মধ্যে পাঁচ কাঠার ৩০টি এবং তিন কাঠার দু’টি প্লট বেশি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এর বিপরীতে বাড়তি জায়গা ঝিলমিলে ছিল না।

রাজউকের সূত্রে জানা গেছে, বাড়তি জায়গা না থাকায় সাধারণ প্লট গ্রহীতাদের বরাদ্দ কেটে প্লটগুলো ম্যানেজ করা হয়েছে। বিষয়টি ধরা পড়ার পর প্লট হস্তান্তরের বিষয়ে নিরীক্ষা শাখা থেকে আপত্তি দেয়া হয়। এর পরই প্লট হস্তান্তরের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। এ কারণে পুরো টাকা জমা দিলেও রাজউক অনেককে প্লট রেজিস্ট্রি করে দিতে পারেননি। অনেকের বকেয়া কিস্তির টাকা এখন আর রাজউক নিচ্ছে না।

বেশি বরাদ্দ সম্পর্কে রাজউকের বর্তমান চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ৩২টি প্লট বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বিগত আওয়ামী সরকারের সময়। কিভাবে বেশি প্লট বরাদ্দ হয়েছে, কাদের বঞ্চিত করে সে সম্বন্ধে শিগগিরই অবহিত করা হবে। রাজউকে ঘটে যাওয়া অতীতের সব অনিয়ম তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। শুধু ঝিলমিল নয়, অন্যান্য সব ধরনের অয়িমে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রাজউকের ঝিলমিল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের অবৈধ নির্বাচনের পর নীতিমালা ভেঙে ঝিলমিলসহ অন্যান্য আবাসন প্রকল্পে এভাবে অনেক প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে আওয়ামী এলিটদের। তারাই ২০১৮ সালের আওয়ামী নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে সহায়তা করেছে। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে যার নামে সুপারিশ করা হয়েছে বা মন্ত্রণালয় থেকে যে তালিকা পাওয়া গেছে, সে তালিকা অনুযায়ী প্লট বরাদ্দ দিতে বাধ্য ছিল রাজউকের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা পালন না করে উপায়ও ছিল না কর্মকর্তাদের।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের দায়বদ্ধতা কোনো মন্ত্রী, সরকারি উচ্চপদের বা আমলার কাছে নয়, তাদের দায়বদ্ধতা থাকবে জনগণের কাছে। তাদের উচিত হলো নিজ নিজ রুলস অব বিজনেস অনুসরণ করা। কিন্তু বিগত সরকারের সময় সরকারি কর্মচারীদের সরকার জনগণের স্বার্থ নয়, তাদের স্বার্থ দেখতে বাধ্য করে। নিম্ন পদের কোনো কর্মকর্তার ‘না’ বলার সাহস ছিল না। যে কারণে শুধু আবাসন প্রকল্পে সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী বেশি প্লটই নয়, সরকারি খাল ভরাট করে প্লট বরাদ্দ দিতে বাধ্য করা হয়েছে। স্বেচ্ছাচারিতাকে তখন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হয়েছে। এখন সময় এসেছে আগের অনিয়ম ঝেড়ে ফেলে দিয়ে নতুন করে দেশ সাজানোর।