ভিসি না থাকায় কুয়েটে শিক্ষা ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম স্থবির

বর্তমানে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প চলছে কুয়েটে। তবে তহবিল বিতরণে বিলম্বের কারণে প্রকল্পগুলোর ধারাবাহিকতা নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

বাসস
Printed Edition

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) না থাকায় শিক্ষা ও উন্নয়ন কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। ভিসির অনুমোদন ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টি তার বর্তমান রাজস্ব বাজেটের অব্যবহৃত তহবিলও ব্যবহার করতে পারছে না।

কর্মকর্তারা জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষের ৩০ জুনের মধ্যে অবশিষ্ট বরাদ্দ ব্যয় না করা হলে কুয়েট উল্লেখযোগ্য আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। বর্তমানে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প চলছে কুয়েটে। তবে তহবিল বিতরণে বিলম্বের কারণে প্রকল্পগুলোর ধারাবাহিকতা নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ের মতে, প্রধান প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে একটি ১০ তলার একাডেমিক ভবন, দু’টি ১০ তলা বিশিষ্ট ছাত্রাবাস (ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য), একটি পাঁচ তলা বিশিষ্ট বিদেশী শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাস নির্মাণ, একটি ভিজিটিং অনুষদ এবং অনুষদ ও কর্মীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ। সৌরবিদ্যুৎ স্থাপন, অভ্যন্তরীণ আরসিসি রাস্তা, নিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং ভূমি উন্নয়নের মতো অতিরিক্ত অবকাঠামোগত উদ্যোগও চলমান রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিল অনুমোদন, বেতন এবং প্রকল্পের অর্থ দেয়াসহ সব আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ভিসির সই আবশ্যক। পদটি দীর্ঘ সময় ধরে শূন্য থাকায় ১১০০ জনেরও বেশি শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারী তাদের মে মাসের বেতন ও ঈদুল আজহার বোনাস পাননি, যা তাদের জীবিকা এবং ঈদ উদযাপনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ভিসির অনুমোদন ছাড়া কোনো আর্থিক লেনদেন, এমনকি একটি বিলও তৈরি করা যাবে না। এ অবস্থায় চলমান অবকাঠামো প্রকল্পে জড়িত ঠিকাদাররাও হতাশা প্রকাশ করেছেন।

একাডেমিক ভবন নির্মাণ তদারককারী সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং এসএসএলের প্রতিনিধিত্বকারী প্রকৌশলী মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা ঈদুল-ফিতরের আগে শেষবারের মতো অর্থ ছাড় পেয়েছি। তারপর থেকে, বিলের কোনো ছাড়পত্র পাওয়া যায়নি। আমরা ঋণ নিয়ে ১৫০ কোটি টাকার দুটি প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। টাকা না পেলে আমরা অগ্রগতি ধরে রাখতে বা আমাদের কর্মীদের বেতন দিতে পারব না।

অবকাঠামো ও একাডেমিক সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক ড. জুলফিকার হোসেন বলেন, ৩০ জুনের মধ্যে বকেয়া অর্থ পরিশোধ না করা হলে ঠিকাদাররা কাজ বন্ধ করে দিতে পারে। ফলে ৬০০ কোটি টাকার সব উন্নয়ন কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়বে।

প্রধান প্রকৌশলী এ বি এম মামুনুর রশিদও বেশির ভাগ ঠিকাদার দুই মাস ধরে বিল পাননি বলে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা অর্থবছরের শেষ নাগাদ বরাদ্দকৃত বাজেট ব্যবহার করতে ব্যর্থ হলে যথেষ্ট আর্থিক ক্ষতি হবে।

অনুষদ ও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ২৫ এপ্রিল তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাসুদ এবং প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. শরিফুল আলমকে তাদের পদ থেকে অপসারণ করে। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মো: হজরত আলীকে ভারপ্রাপ্ত ভিসি নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর গত ১৯ মে ঢাকায় চলে যান এবং ২২ মে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেন। তারপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক প্রধান ছাড়াই চলছে।

গত ৪ জুন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ভিসি পদের জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। এতে আগ্রহী প্রার্থীদের আগামী ২৬ জুনের মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়েছে।

ফলে নতুন ভিসি নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত জুন মাসের বেতন, বোনাস এবং প্রকল্প তহবিল বিতরণ নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে। এ অবস্থায় স্থানীয়রাসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, নতুন ভিসি নিয়োগ অপরিহার্য।

তারা জোর দিয়ে বলেন, ছাত্র, অনুষদ এবং সরকারের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সংলাপের মাধ্যমে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ পরিবেশ পুনরুদ্ধার করা, কুয়েটে তার আগের একাডেমিক এবং প্রশাসনিক স্থিতিশীলতায় ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।