কুয়াকাটায় সমুদ্রে বিলীন হচ্ছে নির্মাণাধীন মেরিন ড্রাইভ

শূন্য পয়েন্টসহ আশপাশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ছোট বড় অন্তত সাতটি স্থাপনা বিধ্বস্ত হয়েছে। অস্বাভাবিক জলোচ্ছ্বাসের তাণ্ডবে বেড়িবাঁধের বাইরের দোকানিরা নতুন করে শঙ্কায় পড়েছেন।

হুমায়ুন কবীর, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)

Location :

Patuakhali
Printed Edition
জলোচ্ছ্বাসে বিলীন হচ্ছে নির্মাণাধীন মেরিন ড্রাইভ
জলোচ্ছ্বাসে বিলীন হচ্ছে নির্মাণাধীন মেরিন ড্রাইভ |নয়া দিগন্ত

বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ সমুদ্রসৈকত বর্তমানে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সম্মুখীন। জিরো পয়েন্ট থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার পূর্বদিকে নির্মাণাধীন মেরিন ড্রাইভের উদ্বোধন হতে না হতেই এটি সমুদ্রে বিলীন হচ্ছে। কুয়াকাটা সৈকতের শূন্য পয়েন্টসহ আশপাশ এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। বিধ্বস্ত হয়ে ভেসে গেছে নির্মাণাধীন ট্যুরিজম পার্ক থেকে পূর্বদিকের ১৩০০ মিটার দীর্ঘ সড়কের এক-তৃতীয়াংশ। জোয়ারের তোড়ে এ ড্রাইভটির তিন-চার স্থান থেকে অনেকাংশ ঢেউয়ের তোড়ে সমুদ্রে চলে গেছে। শুধু তাই নয়, মেরিন ড্রাইভ রক্ষায় গাইডওয়াল, ওয়াকওয়েও ভেঙে পড়েছে। এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয় সাধারণ মানুষ।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নিম্নমানের কাজ এবং সঠিক তদারকি না থাকায় অতি দ্রুত এটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাদের ধারণা, আয়লা, সিডর বা এ রকমের শক্তিশালী কোনো ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে পুরোপুরি নষ্ট হতে পারে নির্মাণাধীন এ সড়ক।

জানা যায়, ২০২৪ সালে ৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে কুয়াকাটা সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষায় মেরিন ড্রাইভের আদলে দুই কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজ হাতে নেয় কুয়াকাটা পৌরসভা। তবে এ কাজের মান নিয়ে স্থানীয় অনেকের রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ। ২৫-৩০ বছর ধরে দোকানদার মানুষগুলো অস্বাভাবিক জোয়ারের তাণ্ডবে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

শূন্য পয়েন্টসহ আশপাশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ছোট বড় অন্তত সাতটি স্থাপনা বিধ্বস্ত হয়েছে। অস্বাভাবিক জলোচ্ছ্বাসের তাণ্ডবে বেড়িবাঁধের বাইরের দোকানিরা নতুন করে শঙ্কায় পড়েছেন। কোন ধরনের বাস্তবতা ছাড়াই সাগরের ওয়াটার লেভেল দখল করে করা হয়েছে এ ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক। এসব দোকানিরা কোনোক্রমে মালামাল সরিয়ে নিলেও খুঁটি পাটাতন উত্তাল ঢেউ লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। সৈকতের ওয়াটার লেভেলে তোলা ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা সরদার মার্কেটের নিচতলার বালু ঢেউয়ের ঝাপটায় ভেসে গেছে। এটি ধসে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কুয়াকাটা পৌর প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ ইয়াসীন সাদেককে আহ্বায়ক করে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী, কলাপাড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী, এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী ও প্রকল্প বাস্তবয়ন কর্মকর্তাকে সদস্য করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার রবিউল ইসলাম এ কমিটি গঠন করেছেন। আগামী সাত দিনের মধ্যে এ কমিটিকে মতামত দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

পরিবেশ ও পর্যটন উন্নয়নকর্মী কে এম বাচ্চু বলেন, কুয়াকাটা উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ব্যর্থতা সঠিক তদন্ত করতে হবে।

পৌর প্রশাসক মোহাম্মদ ইয়াসীন সাদেকের ফোনে একাধিক বার কল দিয়ে তাকে না পাওয়ায় তার কোনো বক্তব্য নেয়া যায়নি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার রবিউল ইসলাম জানান, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কিছু টাকা তুলে নিয়েছেন। বাকি বিল আটকে দেয়া হয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।